ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ুদূষণে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি

প্রকাশিত: ১২:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

বায়ুদূষণে বাড়ছে ক্যান্সারের ঝুঁকি

অনলাইন ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ বলছে, ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল গড়ে যথাক্রমে ২২৬, ২৩৩, ২৪৩ ও ২৫৮। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ এদিকে, ২১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুর মান সূচক ছিল ৩৭২। ওই সময় বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৩২২ মাইক্রোগ্রাম। বিশেষজ্ঞদের মতে যা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুর মান সূচক শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভালো’ বা স্বাস্থ্যবান্ধব বলে গণ্য হয়। এর বেশি হলেই শুরু হয় ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি’। সেই হিসেবে ঢাকাবাসী ভয়াবহ ‘রেড এলার্ট’-এর মধ্যে আছেন। বায়ুদূষণ যদি এভাবে চলতে থাকে তবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দূষণের শুরুটা বায়ু থেকে হলেও শেষ হচ্ছে জনজীবন ও প্রকৃতি বিনষ্টের মধ্য দিয়ে। যা পুরো পৃথিবীর জন্যই মারাত্মক হুমকি। ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে ওড়ে। এর সবই উড়ে চলে যায় না, কোথাও কোথাও এগুলো থেকে যায়। কুয়াশার সঙ্গে মিশে ধুলাবালি ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এজন্যই আমরা ভর দুপুরেও ধোঁয়াশা দেখি সম্প্রতি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় মাটি থেকে দুই হাজার টন ধুলাবালি আকাশে উড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। বায়ুদূষণ বাড়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি হচ্ছে ‘উৎস’, আরেকটি হচ্ছে ‘কারণ’। ‘কারণগুলোর’ মধ্যে রয়েছে— প্রাকৃতিক কিছু বিষয় (আবহাওয়া ও জলবায়ু), নগর পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা, আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং অধিক জনসংখ্যার ঘনত্ব। অন্যদিকে ‘উৎসগুলোর’ মধ্যে রয়েছে— সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, ইটের ভাটা ও শিল্প কারখানা, উন্মুক্তভাবে আবর্জনা পোড়ানো, বস্তি এলাকার বর্জ্য পুড়ানো এবং আন্তর্দেশীয় বায়ু দূষণ। বর্তমান বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর— এ সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বায়ুমান পৃথিবীর দূষিত জায়গার মধ্যে অন্যতম। এটা নিয়ে জাতীয়ভাবে তো বটেই, আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকেও নানাভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বায়ুদূষণ হলে মানুষসহ সমস্ত প্রাণী, উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে শ্বাস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। যেমন- ঠান্ডা, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি। যাদের অ্যাজমা বা অ্যালার্জি আছে, সেগুলোও বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা বেড়ে যায়। দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকলে মানুষের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’ বাতাসের মধ্যে যে মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা ‘পিএম ২.৫’ থাকে তা বায়ুর সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে আমাদের রক্তনালীর মধ্য দিয়ে সারা শরীরে পৌঁছে যায়। ফলে আমাদের লিভার ও কিডনির মতো অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। শুধু বিকলই নয়, একসময় এর কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় মানুষের শরীরে দূষিত বাতাসের প্রভাবে যে বিষক্রিয়া হয়, তাতে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাতের হার বেড়ে যায় এবং গর্ভস্থ শিশুর বিকলাঙ্গতাও বেড়ে যায়। বায়ুদূষণের কারণে সার্বিকভাবে আমাদের মতো দেশের মানুষের গড় আয়ু সাত বছরের মতো কমে যায়। এ কারণে আমাদের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে, জাতীয়ভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি শ্রমঘণ্টাও— বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।
×