ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব

স্বপ্না চক্রবর্তী ॥ মাত্র কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় অরাজক পরিস্থিতির। গণপরিবহনসহ সব খাতে বাড়ে মানুষের ব্যয়। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে পেট্রোবাংলা এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোও। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে ভর্তুকি কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ার আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এক্ষেত্রে পিডিবি বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়াতে হবে। এর প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষই প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি)। যখন বৈশ্বিক মহামারীতে বিপর্যস্ত জনজীবন তখন গ্যাস-বিদ্যুতের এমন প্রতিযোগিতামূলক দাম বাড়ানোর পায়তারায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারীর এমন সময় গ্যাস-বিদ্যুত উভয়ের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। বিইআরসির চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল জনকণ্ঠকে জানান, বুধ এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে পেট্রোবাংলাসহ ৫টা কোম্পানি। এর আগে ৩টি কোম্পানি প্রস্তাবনা দিলেও তা অসম্পূর্ণ হওয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হয়। আরও দুইটি কোম্পানির এখনও প্রস্তাব করার বাকি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবগুলো প্রস্তাবনা পাওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কবে নাগাদ গণশুনানি হবে। প্রস্তাবনাগুলো আমাদের কারিগরি কমিটি পর্যালোচনা করবে। গণশুনানিতে সবার বক্তব্য শোনার পরই কি পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি হবে তা জানানো হবে। এই মুহূর্তে এ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। জানা যায়, দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে পেট্রোবাংলাসহ তিতাস, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা তাদের লিখিত প্রস্তাবে বলেছে, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডের গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারের গড় ক্রয়মূল্য পড়ছে ১.২৬ টাকা, শেভরনের থেকে কিনতে হচ্ছে ২.৮৯ টাকা, তাল্লো থেকে ৩.১০ টাকা করে। অন্যদিকে এলএনজির প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৩৬.৬৯ টাকা অন্যান্য চার্জ দিয়ে ৫০.৩৮ টাকা পড়ছে। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় এই দর। এরই প্রেক্ষিতে শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। একইভাবে বাখরাবাদ কোম্পানি একচুলা ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে করে তাদের প্রস্তাবে আবাসিকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বিদ্যমান মূল্য ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭.৩৭ টাকা, সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬.০৪ টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯.৯৭ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭.০২ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩.৮৫ টাকা থেকে ৩০.০৯ টাকা এবং চা শিল্পে ১০.৭০ টাকা বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে বিদ্যুত ও সার কারখানায় থাকা বিদ্যমান দর ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৬৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে প্রায় সবগুলো কোম্পানিই দুই চুলার জন্য মাসিক বিল দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার জন্য দুই হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে। এদিকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথা-বার্তা শুরুর পর থেকেই আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বলা হচ্ছে আবাসিক খাতে প্রায় দ্বিগুণ দাম বাড়বে। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্তদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে বেসরকারী কোম্পানিতে কর্মরত শহীদুল ইসলাম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের যে উর্ধগতি তা সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। শীতের মৌসুম চলছে তাও বাজারে কোন সবজির দাম ৪০ টাকার কমে নেই। এই অবস্থায় যদি এখন ১০০০ টাকার গ্যাসের মূল্যের জায়গায় ২০০০ টাকা দিতে হয় তাহলে তো বিপদে পরে যেতে হবে। একই কথা বলেন শিক্ষিকা পিয়াসা শর্মা। তিনি বলেন, কয়দিন আগে দেখলাম জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল। এতে করে পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে করল অঘোষিত ধর্মঘট। বাড়ল ভাড়া। কিন্তু বিপদে পরলাম আমরা সাধারণ মানুষজন। ২০ টাকার ভাড়ার জায়গায় এখন অন্তত ৪০ টাকা দিতে হয়। এখন আবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এভাবে সাধারণ মানুষদের চাপে ফেলার কি মানে আমার জানা নাই।
×