ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মিষ্টি, ঘাতক বাসচালক ও হেল্পার গ্রেফতার

বাবা-মাকে হারিয়ে দুই ভাইবোনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

বাবা-মাকে হারিয়ে দুই ভাইবোনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ দুর্ঘটনায় আহত পাঁচ বছরের শিশু শাকিরা জাহান মিষ্টি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কষ্ট ও যন্ত্রণায় হাসপাতালে বেডে শিশুটি ছটফট করছে। অবুঝ এই শিশুটি জানেনা দুর্ঘটনায় তার বাবা-মা-নানা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। শনিবার সকালে তার দাদার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার চর উত্তর চরফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (৪৮) ও মা শারমিন বেগমকে (৩৮) পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। স্বজনেরা জানান, এই দম্পতির অপর শিশু পুত্র শাহরিয়ার খানের (১০) সামনে তার বাবা-মার লাশ দাফন করা হয়। তখন অবুঝ শিশু শাহরিয়ার শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সে এখনও জানে না তার বাবা-মা আর ফিরে আসবে না। আর তাকে আদর করে কোলে তুলে নিবে না। একটি দুর্ঘটনায় শিশু মিষ্টি ও শাহরিয়ারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুশয্যায় মা শাহেদা বেগমকে দেখতে বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে শারমিন বেগম তার স্বামী মোঃ রিয়াজুল ইসলাম এবং বাবা আব্দুর রহমানের (৬৫) সঙ্গে ঢাকা আসছিলেন। শুক্রবার সকালে সদরঘাটে নেমে সিএনজিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ভাই মোঃ নজরুল ইসলামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালসংলগ্ন মহাসড়কে বেপরোয়া গতির সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তাদের বহনকারী সিএনজিকে চাপা দেয়। এতে তিনজনেরই মৃত্যু হয়। তাদের কোলে থাকা ছয় বছরের শিশু মিষ্টি বেঁচে যায়। আহত হয়ে শিশু মিষ্টি এখনও হাসপাতালে। এদিকে দুর্ঘটনার একদিন পর শনিবার ঘাতক বাস সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসচালক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনার (৪০) ও সহকারী কোরবান আলী ওরফে কোরবানিকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। দুর্ঘটনায় শিশু শাকিরা জাহান মিষ্টির মাথায় ও হাতে আঘাত পেয়েছে। তাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এখনও পর্যন্ত শিশু মিষ্টি আশঙ্কামুক্ত নয়। কারণ তার মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সে অবজারবেশনে আছে। শনিবার দুপুরে শিশু শাকিরা জাহান মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করলে তুমি কেমন আছ, কোন উত্তর না দিয়ে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। শিয়রে বসেছিলেন তার মামি। তিনি জানান, মৃত্যুশয্যা শাশুড়ি শাহেদা বেগমকে ক্যান্সার হাসপাতালে দেখতে বরিশালের বাবুগঞ্জের গ্রাম থেকে স্বামীর বোন শারমিন, বোন জামাই রিয়াজুল ও শ্বশুর আব্দুর রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকা এসেছিলেন। মাতুয়াইলে আমার বাসায় আসার পথে বাসচাপায় তিনজনই মারা যায়। কিন্তু তাদের কোলে থাকা শারমিনের শিশু সন্তান মিষ্টি বেঁচে গেলে সে আহত হয় । হাসপাতালে ভর্তি করার পর মিষ্টি শুধু তার মাকে খুঁজছে। বার বার কান্নাকাটি করছে। ওকে সান্ত¡Íনা দিয়ে কান্না থামানো যাচ্ছে না। এখন বলুন ওর মা-বাবা কিভাবে তার কাছে আনব। ওরা তো পরপারে চলে গেছে। আর কোনদিন ফিরে আসবে না। এই বলে মিষ্টির মামি আমেনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহত শারমিন ও রিয়াজুলের দম্পতির দুই সন্তানকে এখন কে দেখবে। ওদের ভবিষ্যত কি?। বেপোরোয়া গতি চালানো ঘাতক বাসের কারণে শিশু দুটির স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। আমরা আগলে রাখলেও কি ওদের বাবা-মার আদর পূর্ণ হবে? এমন প্রশ্ন করে তিনি জানান, আমি ঘাতক বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। যারা আমার স্বামীর বোনের সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে। শনিবার বিকেলে নিহত শারমিনের ভাই মোঃ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর দুর্ঘটনায় নিহত বাবা আব্দুর রহমান, বোন শারমিন ও বোনজামাই রিয়াজুলকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আইনী জটিলতার কারণে ১২ ঘণ্টা তাদের লাশ হাসপাতাল মর্গে পড়েছিল। পরে রাতে তিনজনের লাশ এ্যাম্বুলেন্সযোগে গ্রামের বাড়ি বরিশালের উদ্দেশে রওনা দেয়া হয়। শনিবার সকালে বাবার লাশ নিজ বাড়িতে রেখে বোন শারমিন ও বোনজামাই রিয়াজুলের লাশ তাদের বাবুগঞ্জ থানার চর উত্তর ফতেহপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বোনের শ্বশুরবাড়িতে জানাজা শেষে সকাল সাড়ে ৮টায় পারিবারিক কবরস্থানে বোন ও বোন জামাইকে পাশাপাশি দাফন করা হয়। ঘাতক বাসচালক ও হেলপার গ্রেফতার ॥ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে বাসের ধাক্কায় তিনজন নিহতের ঘটনায় বাসচালক ও সহকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, বাসচালক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনার (৪০) ও সহকারী কোরবান আলী ওরফে কোরবানি (২৫)। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, শনিবার সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে মাতুয়াইল এলাকায় সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়।
×