ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু

অবশেষে আলোর মুখ দেখল চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

অবশেষে আলোর মুখ দেখল চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিলম্ব হলেও মহানগরী স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা ঠিকাদারও নিয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বানের পর মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার পর ঠিকাদারের সঙ্গে কাজের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়েছে ইতোমধ্যে। কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ শুরু করবে কয়েক মাসের মধ্যেই। যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আধুনিক নগর গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আক্ষেপেরও অবসান হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায়ের এই কাজ শুরু করতে আরও তিন মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। ওয়াসা মানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা শুধু পানি সরবরাহের কাজটিই করে আসছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। তাই মহানগরীর পয়োবর্জ্য গিয়ে দূষিত হওয়া কর্ণফুলী রক্ষায় ওয়াসাকে স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে একটি সভায়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যে ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর অবস্থা চট্টগ্রামে তা থেকে মুক্তির পথ দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এমনিতেই চট্টগ্রামে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ও বর্জ্যে একাকার। অনেক বিলম্বে হলেও অবশেষে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আসছে চট্টগ্রাম মহানগরী। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে চার বছরের মতো। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা আধুনিক সিটির প্রধান শর্ত হলেও ৭০ লাখ নগরবাসী এই সুবিধাবঞ্চিত ছিল। তবে এবার নগরীকে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার অর্থায়নে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে প্রথম পর্যায়ের ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পটি। প্রথম ধাপে নগরীর একটি জোনে চলবে স্যুয়ারেজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ, যা বাস্তবায়িত হলে ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন হবে, এর ফলে ভয়াবহ দূষণের কবল থেকে বাঁচবে কর্ণফুলী ও হালদা নদী। পাশাপাশি সুরক্ষিত থাকবে নগরবাসী। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়ার পর ঠিকাদার নিয়োগ শেষ হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। কোরিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তায়েং ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কাজ শুরু করবে শীঘ্রই। কিছু ডকুমেন্টেশনের কাজ আছে, আর কিছু ডিজাইনের কাজ আছে এসব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করে প্রকল্পের কাজে মাঠে নামতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। ভূমি অধিগ্রহণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে জটিলতা তাও সমাধান হয়েছে। এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সকলের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হয়। প্রসঙ্গত, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরীর টনে টনে পয়োবর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে কর্ণফুলী ও হালদা নদীসহ নগরীর আশপাশের খালের জীব ও জলজ বাস্তুসংস্থান। তাছাড়াও কর্ণফুলী ও হালদা এই নদী দুটি থেকে সুপেয় পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রসঙ্গত এর আগে প্রকল্পটি বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কটে আটকে থাকে। এরমধ্যে করোনা মহামারী শুরুর পর বিদেশী পরামশর্ক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা তাদের দেশে ফিরে যায়। তখন পরামর্শক কাজে স্থবিরতা আসে। পরে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে গত বছর আবারও গতি পায় প্রকল্পটির সকল প্রক্রিয়া। এরপর গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে চলতি বছর এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামী তিন মাস পর কাজ মাঠ পর্যায়ে শুরু হলে তা শেষ হতে চার বছর লাগতে পারে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, স্যুয়ারেজের কাজ করার বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নেই। তাই আন্তর্জাতিকভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের জন্য প্রথম ধাপে ১১টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের পয়োবর্জ্য স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনার জন্য প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে হালিশহরে ওয়াসার ১৬৩ একর জায়গায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন এবং ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন করা হবে। ১১ ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের পয়োবর্জ্য হালিশহরের প্লান্টে পরিশোধন করা হবে। যার ফলে ২০ লাখ নগরবাসীর পয়োবর্জ্য স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আনা যাবে। এরপর বাকি ৫টি জোনে কাজ হবে পরবর্তী প্রকল্প অনুমোদন হলে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীতে থাকবে না কোন সেপটিক ট্যাঙ্ক। যার ফলে পয়োবর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না সুরক্ষিত থাকবে জলজ বাস্তুসংস্থান।
×