ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি

সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, ১০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব

তপন বিশ্বাস ॥ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১’-এর খসড়া তৈরি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। স্টেক হোল্ডারের মতামতের জন্য শনিবার এটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। মতামতে প্রদানের জন্য এক মাস সময় দেয়া হয়েছে। বিগত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২২’-এ ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদানকালে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই আইনের খসড়া প্রকাশ এবং সবার মতামতের গুরুত্বের ব্যাপারে বলেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ইতোপূর্বে কয়েকবার সরকারী জমি অবৈধ দখল দ-নীয় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন সংশোধন কিংবা নতুন আইনে প্রণয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে জমি দখল, দুর্নীতি ও জমিসংক্রান্ত মামলা কমাতে একটি কার্যকর ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ভূমিমন্ত্রী ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১-এর প্রাথমিক খসড়া তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১-এর প্রাথমিক খসড়ায় ভূ-সম্পদ সম্পর্কিত ২২ ধরনের/শ্রেণীর অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের শ্রেণী ও মাত্রা ভেদে ন্যূনতম ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদ- এবং ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাথমিক খসড়ায়। এছাড়া অপরাধ পুনঃ-সংঘটনের জন্য পূর্ববর্তী শাস্তির দ্বিগুণ দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি শ্রেণীর অপরাধকে অজামিনযোগ্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া জমির পরিমাণ ও অপরাধীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বর্ধিত সাজারও বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবনায়। বাংলাদেশে সিংহভাগ মামলা হয় ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে। ভূমি সম্পর্কিত অপরাধ ও বেআইনী কর্মকা- প্রতিকারকল্পে দাখিলকৃত দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দীর্ঘ সময় বিচারাধীন থাকায় উভয় ক্ষেত্রে সৃষ্ট মামলাজট জনগণের জন্য যে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা নিরসনে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, প্রাথমিক খসড়ার ওপর নাগরিক ও অংশীজনের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাপ্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে প্রাথমিক খসড়াটি সংশোধন করে সংশোধিত খসড়া প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রমিতীকরণের জন্য পাঠানো হবে। প্রমিতীকৃত খসড়াটি পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়নের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারী খাসভূমিসহ সরকারী যে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার মালিকানাধীন ভূমিতে প্রকৃত মালিকদের স্বত্ব ও দখলভোগ নিশ্চিত করা। ভূমিলিন্সু কোন ব্যক্তির জালিয়াতি বা প্রতারণামূলক ও অন্যের সঙ্গে যোগসাজশে সৃষ্ট দলিলমূলে বা কোন দলিল ব্যতিরেকেই উক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অবৈধভাবে ভূমির দখলগ্রহণ, বা দখলগ্রহণের চেষ্টা বা এর ক্ষতিসাধন রোধ করা। অবৈধভাবে ভূমির দখল গ্রহণ বা দখলগ্রহণের চেষ্টা বা এর ক্ষতিসাধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পেশিশক্তির ব্যবহার, বা দেশীয় বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, ইত্যাদির মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১-এর প্রাথমিক খসড়ায় ভূ-সম্পদ সম্পর্কিত ২২ ধরনের/শ্রেণীর অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে: অন্যের জমির মালিক হবার উদ্দেশ্যে জাল দলিল সৃষ্টি; মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদন; মালিকানার অতিরিক্ত জমি লিখে নেয়া; পূর্ব বিক্রয় বা হস্তান্তর গোপন করে কোন জমি বিক্রয়; বায়নাকৃত জমি পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া; ভুল বুঝিয়ে দানপত্র ইত্যাদি সৃজন; সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে প্রাপ্যতার অধিক জমির নিজ নামে দলিলাদি সৃষ্টি; সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্যতার অধিক জমি বিক্রয়; অবৈধ দখল; সহ-উত্তরাধিকারীর জমি জোরপূর্বক দখলে রাখা; অবৈধভাবে মাটি কাটা, বালি উত্তোলন ইত্যাদি; জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা; বিনা অনুমতিতে ভূমির উপরের স্তর (টপ সয়েল) কর্তন; অধিগ্রহণের পূর্বে জমির মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত মূল্যে দলিল নিবন্ধন; জনসাধারণের ব্যবহার্য, ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জমি দখল; বিনা অনুমতিতে পাহাড় বা টিলার পাদদেশে বসতি স্থাপন; রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কর্তৃক জমি, ফ্ল্যাট হস্তান্তর ইত্যাদি সম্পর্কিত অপরাধ; সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জমি ইত্যাদি বেআইনী দখল; নদী, হাওড়, বিল ও অন্যান্য জলাভূমির শ্রেণী পরিবর্তন; অবৈধ দখল গ্রহণ ও দখল বজায় রাখতে পেশিশক্তি প্রদর্শন; সন্নিকটবর্তী ভূমি মালিকের ভূমির ক্ষতিসাধন; অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা ইত্যাদি।
×