ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওবায়দুল কবির

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন হতে পারে অনুসরণীয়

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন হতে পারে অনুসরণীয়

অনেক আলোচনা-উত্তেজনায় শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। বরাবরের মতো স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটি এবারও সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এবার নিয়ে তৃতীয় বার নানা নাটকীয়তায় সমাপ্ত হয়েছে এই নির্বাচন। গত দুই বারের মতো এবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। এলাকাবাসী বলছেন, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা, নগরীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করা, সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর কারণেই নিরহঙ্কারী এই নেত্রীর প্রতি বারবার নারায়ণগঞ্জবাসী আস্থা রাখছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের আরও একটি সাফল্য হচ্ছে সফলভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার। দু’ একটি কেন্দ্রে কিছুটা সমস্যা হলেও এই পদ্ধতিতে মানুষ স্বল্প সময়ে ভোট দিতে পেরেছে। ভোট কারচুপির সুযোগ কম থাকায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। নাসিক নির্বাচনের পর কমিশন সারাদেশেই ইভিএম পদ্ধতির ভোটের কথা ভাবতেই পারে। গত তিনটি সিটি নির্বাচনই নাটকীয়তায় ভরপুর ছিল। এর যতটা হয়েছে বিরোধী পক্ষের কারণে, তারচেয়ে বেশি হয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে। এই সমস্যা মূলত দুটি পরিবারের মধ্যে যার দীর্ঘ অতীত রয়েছে। দুই পরিবারই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী এবং প্রভাবশালী। শামীম ওসমানের দাদা এম ওসমান আলী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছিলেন তিনি। তার বাবা একেএম শামসুজ্জোহা বাংলাদেশের প্রথম সংসদের সদস্য। শামীম ওসমান নিজে ১৯৯৬ সাল থেকে সংসদ সদস্য। তার দুই ভাই নাসিম ওসমান এবং সেলিম ওসমানও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাবশালী। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আইভীর বাবা আলী আহম্মদ চুনকা ছিলেন স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়্যারম্যান। ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনে সেই সময় প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আলী আহম্মদ চুনকা আওয়ামী লীগের খোকা মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে আইভী তারই উত্তরাধিকার। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগে ২০০৩ সালে বিএনপি আমলে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আইভী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান। শুধু চুনকা পরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে নয়, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে নিজের কর্মকা- দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এই নেত্রী। সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্ম ১৯৬৬ সালে। তিনি রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে ওই দেশ থেকে এমবিবিএস পাস করে দেশে এসে চিকিৎসা পেশায় যোগদান করেন। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি শহর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পদে বহাল রয়েছেন। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি তৃতীয় নির্বাচন। প্রথম বছরের নির্বাচনেও ছিল অনেক নাটকীয়তা। ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত ওসমান পরিবারের সন্তান শামীম ওসমান। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান সেলিনা হায়াৎ আইভী। সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এই নির্বাচনে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলে তৈমুর আলম খন্দকার অনিচ্ছা সত্ত্বে¡ও আগের রাতে সরে দাঁড়ান নির্বাচন থেকে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল ছিল শামীম ওসমানকে পরাজিত করা। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী আইভী বিজয়ী হলেও তাদের সমস্যা ছিল না। নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় হন আইভী এবং নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭০ শতাংশ। আইভী পেয়েছিলেন এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ভোট। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তাকে আবারও আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেয়া হয়। শামীম ওসমান প্রকাশ্যে আইভীকে নিজের বোন বলে দাবি করলেও ১১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জের এই দুই দিকপালের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। পরবর্তী দুই নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীর চেয়ে এই দুই নেতার ঠা-া লড়াই নারায়ণগঞ্জে তুমুল উত্তেজনা এবং দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। বিএনপির মনোনয়ন পান এ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন। শামীম-আইভী ¯œায়ুযুদ্ধে এই নির্বাচনেও ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে সিদ্ধিরগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম ওসমান। নাসিক নির্বাচনে আগের বারের প্রার্থী শামীম ওসমান দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন কিনা এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল প্রচুর। শামীম ওসমান নৌকা প্রতীক আঁকা দুটি শাড়ি পাঠিয়ে আইভীর প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছিলেন। আইভী তা বিশ^াস করেননি। নির্বাচনী প্রচারে আইভী বারবার বলেছেন শামীম ওসমানের সমর্থন তিনি আশা করেন না। নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ এবং ভোট কাস্ট হয়েছে ৬২ শতাংশ। সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হন বিপুল ভোটে। তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ ৭৫ হাজারের বেশি ভোট। অন্যদিকে বিএনপির শাখাওয়াত হোসেন পেয়েছিলেন ৯৬ হাজার ভোট। এবার নির্বাচনেও সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার খুব তাড়াতাড়িই প্রতিযোগিতায় চলে আসেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বয়কটে বিএনপির অবস্থানের কারণে তৈমুর আলম খন্দকারকে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা অঘোষিতভাবে তাকে সমর্থন দিয়ে যান এবং নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। দুই শিবিরের এই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জে আবারও আলোচনায় প্রাধান্য পায় শামীম-আইভী দ্বন্দ্ব। আইভী নিজে ঘোষণা করেন, তৈমুর মূলত শামীম ওসমানের প্রার্থী। শামীম ওসমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি কিছু করি না বা কাউকে কিছুই বলি না। এরপরও কেন বারবার আমাকে টেনে আনা হয়। আইভীকে আমি বোন মনে করি। সবচেয়ে বড় কথা সে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমি কোনভাবেই তার বিরুদ্ধে যাব না।’ শামীম ওসমানের এই বক্তব্যেও আইভী কিংবা প্রচার মাধ্যমগুলো আস্থায় নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের দুই ¯্রােত নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আইভী ৬৬ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন চাচা সম্বোধনকারী তৈমুর আলম খন্দকারকে। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ। আইভী পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ০৯৭ ভোট। তৈমুর পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৬২ ভোট। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন রাজধানী ঢাকার পাশে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শহর। ব্যবসা বাণিজ্যের বিবেচনায় শীতলক্ষ্যার পাড়ের এই বন্দর নগরীকে এক সময় প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো। স্বর্ণযুগে দেশের সবচেয়ে বড় পাটের বাজার ছিল নারায়ণগঞ্জ। এই বন্দর থেকেই দেশের অধিকাংশ পাট বিদেশে রফতানি হতো। ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। তখন শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড় মিলিয়ে ওয়ার্ড ছিল তিনটি। পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন এইচটি উইলসন। ১৯৫৭ সালে পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় মোট ২০টি ওয়ার্ড। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুনর্গঠিত পৌরসভায় ওয়ার্ড করা হয় ১২টি। ’৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা আলী আহম্মদ চুনকা। ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদমরসুল পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় শাহ কামালকে। একই বছর ৩০ অক্টোবর প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র এবং পরপর তিনটি নির্বাচনে হ্যাটট্রিক বিজয়ের রেকর্ড গড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। এর আগে ২০১১ সালে প্রথম নাসিক নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ৯টি ওয়ার্ডে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় নাসিক নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ভোট হয় ব্যালট পেপারে। এবার সকল কেন্দ্রে ভোট হয়েছে ইভিএমের মাধ্যমে। ইভিএমের সফল ব্যবহার শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদ নির্বাচনে। এরপর বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ১৪টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রংপুর ও ২০১৮ সালের মে মাসে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুটি করে কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনেও রাজধানীর মোহাম্মদপুর আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিক সফলতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অবশ্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তারা বলছেন, ইভিএমের ভোটে কারচুপির সুযোগ থাকে বেশি। প্রতিবেশী ভারতসহ অধিকাংশ দেশেই বর্তমানে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রেও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। ২০০৩ সালে বিএনপি আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এর পর থেকে গত ১৯ বছর ধরে তিনি নগর পিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবার নির্বাচনের পর সাংবাদিকরা এটি নিয়ে প্রশ্ন করেন স্থানীয় ভোটারদের। কি কারণে আইভী বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন। ভোটাররা বলেছেন, বারবার নির্বাচিত হয়েও আইভীর মধ্যে কোন অহংবোধ নেই। সব সময় তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থাকেন। মানুষের সুখ-দুঃখে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের অবস্থানের কথা বিবেচনা না করে। তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলছেন নারায়ণগঞ্জ শহরকে। সামনে রয়েছে আরও কিছু পরিকল্পনা। শহরের বুক চিরে প্রবাহিত শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ তার পরবর্তী পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শীতলক্ষ্যা কর্তৃক বিভক্ত নগরী এক হয়ে যাবে। নদীর দুই পার ঘিরে তিনি গড়ে তুলবেন নানা ধরনের বিনোদন কেন্দ্র। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী স্বস্তির নিশ^াস নিতে পারবেন নদীর পাড়ে। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসাবাণিজ্য ঘিরেই মূলত গড়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ নগরী। বাণিজ্যের প্রসারে তিনি নদীর তীরে ‘ব্যবসা ভবন’ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে নারায়ণগঞ্জের চিত্র। এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। এসব কারণেই নারায়ণগঞ্জবাসী বারবার তার ওপরই আস্থা রাখছেন। এ ছাড়া এবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি প্রতিপক্ষ তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, তার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। গোটা দেশের মানুষ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন এই দৃশ্য। রাজনীতিকদের কাছে এটি অনুসরণীয় হতে পারে। একই সঙ্গে রয়েছে এলাকাবাসীর কিছু দাবি। এর মধ্যে রয়েছে যানজট সমস্যার সমাধান। নগরীর কিছু কিছু এলাকায় রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমস্যা। রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এসব বর্জ্য। এতে শহরের সৌন্দর্য বিনষ্টের পাশাপাশি দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। শহরতলিতে কোন কোন এলাকায় রয়েছে জলাবদ্ধতা। বর্ষায় এক হাঁটু পানি জমে থাকে রাস্তায়। কিছু কিছু এলাকায় এখনও রাস্তাঘাট তৈরি হয়নি। বর্ষাকালে এসব রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশুদ্ধ পানির সমস্যা রয়েছে কোন কোন এলাকায়। নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা, আগামী পাঁচ বছরে নির্বাচিত মেয়র বড় উন্নয়ন কর্মকা-ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এসব সমস্যারও সমাধান করবেন। লেখক : ডেপুটি এডিটর, জনকণ্ঠ
×