ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া ॥ হুমকীকে স্থাপনা ও পরিবেশ

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২১ জানুয়ারি ২০২২

বাগেরহাটে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা বেপরোয়া ॥ হুমকীকে স্থাপনা ও পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টর, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনে একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বেআইনিভাবে উপজেলা সদরে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী এ চক্রটি যোগসাজশে ব্যবসা করে। ফলে সরকারী রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্টান, বাজার, ধর্মীয় উপসানালয় ও পরিবেশ হুমকীর মুখে পড়ছে। চক্রটি এবার যেখান থেকে এই বালু উত্তোলন করছে, সেখান থেকে প্রায় পাঁচশ গজ চারপাশে রয়েছে চিতলমারী সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের চারতলা ও তিনতলা একাধিক ভবন, প্রধান বাজার, থানা ভবন, প্রধান সড়কসহ একাধিক সড়ক ও আবাসিক এলাকা। এমনকি চিতলমারী থানার সামনের প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে বালুর পাইপ নেয়ার ফলে জনসাধারণের যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীদের দাবী, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেই তারা ব্যবসা করেন। যত্রতত্র এই বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে পরিবেশবাদীরা মনে করেন। উপকূলীয় এ অঞ্চলের বিশিষ্ট উন্নয়নকর্মী শাহাদত হোসেন বাচ্চু জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা ‘স্যান্ড মাফিয়া‘ নামে পরিচিত। এটা একই সঙ্গে পরিবেশ, সামাজিক ও বাস্তুসংস্থানজনিত সমস্যার সৃষ্টি করছে। নদীর তলদেশ ও পাড়ের কার্যক্ষমতা এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে প্লাবনভূমি নিচে নামতে শুরু করে, ফি বছর বন্যার আশঙ্কা বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূগর্ভের বালু উত্তোলনের ফলে ইতোপূর্বে নালুয়া-বড়গুনি প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের একাধিক জায়গা নদীগর্ভে চলে যায়। এটা দেখে বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর বিষয়ে শিক্ষা নেয়া উচিৎ ছিল। সেই শিক্ষা না নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় ভূগর্ভের বালু উত্তোলন চলছে। চিতলমারী সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল মিয়া জানান, ভূগর্ভের বালু উত্তোলন আইনে নিষেধ। তারপরেও কিভাবে এটা হয় আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের নবনির্মিত ভবনগুলো ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও চিতলমারী কেন্দ্রিয় শ্মশান কমিটির সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ দত্ত ভগো অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী সুলতানা মল্লিক বর্তমানে ভূগর্ভের বালু উত্তোলন করাচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি ভাল মনে হলে এটা আইনত অপরাধ। মাটির নিচের বালু উত্তোলনের ফলে আশেপাশে ভবন, সড়ক সহ স্থাপনাদি যেকোন সময় দেবে যেতে পারে। বালু কাটা মেশিনের এক মালিক মোস্তফা জানান, স্থানীয়ভাবে তৈরী তাদের বালু কাটা মেশিনের নাম লোড, আনলোড ড্রেজার। মেশিনের দুইটি পাইপ বালু তুলতে তুলতে মাটির নিচেয় যায়। একটি পাইপ তলদেশের শুকনো বেলেমাটি পানি দিয়ে ভেজাতে থাকে এবং অপর পাইপটি ভেজা মাটি চুশতে থাকে। চুশে নেয়া পানি মিশ্রিত বালু পাইপের মাধ্যমে ভূগর্ভ হতে উত্তোলিত হয়। ফলে আপাত দৃষ্টিতে দেখা যায় জমির উপরিভাগে কোন ক্ষতি হয়নি। একদিনে এই ড্রেজার মেশিন প্রায় চার হাজার ফুট ভূগর্ভস্থ মাটি উত্তোলন করতে পারে। জমির ৬০ ফুট থেকে ১২০ ফুট মাটির তলদেশ হতে তারা বালু উত্তোলনে সক্ষম। প্রথমে তারা জমির মালিকের কাছ প্রতি ফুট পাঁচ থেকে সাত টাকা দরে বালু কেনে। পরে পাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকের প্রয়োজনীয় স্থানে বেশি দরে বালু পৌঁছে দেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করেই তারা ব্যবসা করেন বলে দাবী করেন। চিতলমারী উপজেলায় এমন শতাধিক মেশিন আছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদন্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। নবাগত চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, ভূগর্ভের বালি বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই কাজ যে বা যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
×