ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই’র আক্রমনে উৎপাদন হ্রাস, মরছে গাছ

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ২১ জানুয়ারি ২০২২

বাগেরহাটে নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই’র আক্রমনে উৎপাদন হ্রাস, মরছে গাছ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল নারকেল। এ জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই কম-বেশি নারকেল গাছ রয়েছে। চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি নারকেলকে কেন্দ্র করে এ জেলায় গড়ে উঠছে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। নারকেলেও ওপর নির্ভর করে এ জেলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আড়ই লক্ষাধিক মানুষের জীবীকা সম্পৃক্ত। এদেও অধিকাংশই এখন সংকটে। কারণ হোয়াইট ফ্লাই (সাদা মাছি) পোকার আক্রমনে বর্তমানে নারকেলের ফলন কমছে, গাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ^ বিদ্যালয় থেকে একদল বিজ্ঞানী এসে সরেজমিনে বিষয়টি পর্যাবেক্ষণ করেছেন। জেলার অধিকাংশ নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই পোকা আক্রমণ মারত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে এ জেলায় নারকেল গাছের ফলন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। শুধু ফলন কমে যাওয়া নয় ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া হোয়াইট ফ্লাই পোকার আক্রমনে নারকেল গাছ মরছে। তবে কৃষি জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আর কৃষকরা বলছেন, হোয়াইট ফ্লাই পোকা আক্রমনে তারা মারত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরোজমিনে জেলার কচুয়া, ফকিরহাট, চিতলমারী, রামপাল ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নারকেল গাছের পাতার ওপর কালো আবরণ পড়েছে। পাতার নিচে রয়েছে তুলার মতো সাদা রঙ্গের পোকা। এই পোকাগুলোই বলা হয় হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি। পোকাগুলো প্রথমে পাতায় ওপর বসে। পরে পাতায় মাকড়সার জালের মতো আবরণ তৈরি করে। প্রতিদিন এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে ওই গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গাছ দূর্বল হয়ে পরে। গাছের ফল দেয়ার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে গাছে এ পোকার আক্রমণে একটি সময় গাছ মারা যায়। বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাঠিগোমতি এলাকার কৃষক বীর মুক্তিরযাদ্ধা অসীমাভ ডাকুয়া ও বাসুদেব রায় বলেন, “সাদা সাদা পোকের কারনে, আমাদের নাইরকেল গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। নারকেল গাছের মাথি (মাথা) মরে যাচ্ছে। ফলন অনেম কমে গেছে। আমরা এই পোক চিনিনা। আমার মত গ্রামের সবাইর গাছে একই অবস্থা। কৃষি বিভাগকে জানিয়েও আমরা এর কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা।’ জেলার ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক ছোট শেখ বলেন, “আমার ঘেরের পাড়ে (মাছের খামার) প্রায় ৫০টির মত নাইরকেল গাছ রয়েছে। বছরে এই গাছ থেকে আমি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার নাইরকেল বেচিছি (বিক্রি করেছি)। গত বছর থেকে আমার নাইরকেল গাছের ফলন কুমতি শুরু করিছে। এহন ১০ হাজার টাকারও নাইরকেল বেছতি পারতিছি না। গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকা ভইরে গেছে। গাছের পাতার রং পাল্টে গেছে।” জেলার কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকার বাসিন্দা কৃষক সালাম শেখ ও উজ্জ্বল মিস্ত্রী বলেন, “একটা সময় ছিলো, আমাদের ঘেরের মাছ ও গাছের নাইরকেল বিক্রি করে সংসার চলে যেতো। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে নাইরকেল কিনে নিয়ে গেছে। আগে গাছে বড় বড় নারকেল হইছে। এখন আর হয় না। তার উপর গত বছর থেকে সাদা সাদা পোকার আক্রমনে গাছের পাতা শুকোইয়ে যাচ্ছে, গাছ গুলো মইরে যাচ্ছে। এই পোকা আগে দেখিছি পিয়ারা গাছে, কলা গাছে। নাইরকেল গাছে এই পোকা কোনদিন দেখিনি। এখন আমরা সকলে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’ বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় ৩ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমিতে নারকেল গাছের আবাদ হয়েছে। এ অর্থ বছরে জেলায় নারকেলের উপাদন হয় ৩০ হাজার ৯৩৬ মেট্রিক টন। তবে পরিমান বলতে না পারলেও বিগত অর্থ বছরের চেয়ে জেলায় নারকেল গাছের আবাদ ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কমেছে। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে বাগেরহাট জেলায় নারকেল গাছে হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছি ব্যাপক ভাবে আক্রমন করেছে। এটি আসলে ২০১৯ সালে দেখা যায়। বর্তমানে এর প্রভাবে জেলায় নারকেলের ফলন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংস কমে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ^ বিদ্যালয় থেকে একদল বিজ্ঞানী এসে সরোজমিনে বিষয়টি পর্যাবেক্ষণ করেছেন। তারা দেখেছেন প্রায় ৬১টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছে এই পোকা আক্রমণ করে। বিশেষ করে নারকেলের পরে কলা এবং পেয়ারা গাছে এই পোকা অবস্থান করে। আমরা বর্তমানে কৃষকদেরকে “ইমিডা ক্লোরোফিড জাতীয়” ঔষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। যেহেতু নারকেল গাছ অনেক লম্বা। এ কারনে ফুট পাম্প এর মাধ্যমে স্প্রে করতে হয় এবং সব গাছে একসাথে করতে হয়। আসলে এটি ভালো ভাবে দমন করতে হলে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর মাধ্যমে দমন করা দরকার”। কিন্তু এই পোকা দমনে “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) এর সঠিক গাইড লাইন এখন পর্যন্ত হয়নি। “আইপিএম” (সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা) গাইড লাইন হলে এটি কার্যকর ভাবে দমন করা সম্ভব হবে কলে তিনি উল্লেখ করেন।
×