ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন

অবশেষে চট্টগ্রামে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর

প্রকাশিত: ০০:১২, ২১ জানুয়ারি ২০২২

অবশেষে চট্টগ্রামে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাঙালীর মুক্তির সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের ভূমিকা অগ্রণী। এই চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে প্রচারিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দেয়া মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা। এছাড়া রয়েছে বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার অপারেশন জ্যাকপটসহ অনেক বড় অপারেশন। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী চট্টগ্রামে উল্লেখ করার মতো মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা হয়নি। দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকলেও বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম মহানগরীতে অবশেষে হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের, যা বাস্তবায়িত হবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা ও গুরুত্ব ছিল চট্টগ্রামের। আওয়ামী লীগের তৎকালীন তুখোড় নেতা এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এম হান্নানসহ অনেক বড় নেতা চট্টগ্রামে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম ঘোষণা পাঠ করেছিলেন এমএ হান্নান। পুরো নয় মাসের যুদ্ধে বন্দরনগরী ছিল সংগ্রাম ও যুদ্ধের শহর। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দেন চট্টগ্রামকে। বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম নগরীতে নেই কোন স্মৃতিসৌধ। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল নগরবাসীর। তবে আশার কথা হলোÑ গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়। এজন্য কালুরঘাটসহ চট্টগ্রামে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর উদ্বেলিত নগরীর বাসিন্দারা। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা। এর আগে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন কাট্টলীতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। গত বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রাম এলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে তিনি তুলে ধরেন। তখন মুখ্যসচিব প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শনও করেন। তিনি সে সময় জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের কাট্টলীতে সাগরতীরের অদূরে ৩০ একর জমিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। তাই চট্টগ্রামকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দেন। এই চট্টগ্রাম থেকেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। তাই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন চট্টগ্রামকে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হলেও চট্টগ্রামে কোন স্মৃতিসৌধ নেই। তবে আশার কথা কাট্টলী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ করা হবে। এদিকে ডিসি সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে আমাদের নানান স্মৃতি রয়েছে। বিশেষ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে ওই জেলার ডিসি স্মৃতিস্তম্ভ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি জেলা প্রশাসককে বলেছি, যদি জায়গার ব্যবস্থা হয় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এর আগে চট্টগ্রাম পরিদর্শনের সময়ও আমাকে ডিসি এ বিষয়টি বলেছিলেন। এখন ডিসি প্রস্তাব পাঠালে ঐতিহাসিক জায়গা কালুরঘাট ও কাট্টলী মৌজায় স্মৃতিস্তম্ভ দুটি করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে কাট্টলীসহ চট্টগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস আছে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সরফরাজ খান বাবুল বলেন, চট্টগ্রামকে অবহেলিত করে রেখেছিল অন্য সরকারগুলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতা এবং প্রগতিশীল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি যে কাট্টলীতে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য এগিয়ে এসেছেন, এটি অন্য সরকার পারেনি। তাদের এমন ইচ্ছেও ছিল না। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধে গেছি। জাতির পিতার পক্ষে এম এ হান্নান ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করতে এই কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থাপনা এখানে, কিন্তু স্মৃতিসৌধ নেই। প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব বুঝেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
×