ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাবিতে অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ৪ জন হাসপাতালে

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২১ জানুয়ারি ২০২২

শাবিতে অনশনরতরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, ৪ জন হাসপাতালে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ আমরণ অনশনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। টানা অনশনের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই ২৪ জনের মধ্য থেকে ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১০ জনের শরীরে অনশনস্থলেই স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে। অনশনস্থলে যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা শারীরিক দুর্বলতায় ওঠে বসতে পারছেন না। প্রায় ২১ ঘণ্টা না খাওয়া ও তীব্র শীতের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। তাদের আন্দোলন অষ্টম দিনে গড়িয়েছে। প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফার আন্দোলন রবিবার অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে পুলিশি হামলার পর দাবি এক দফায় নেমে এসেছে। এখন শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি, এই বিতর্কিত উপাচার্যকে তারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আর কখনও দেখতে চায় না। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার চেষ্টা করলেও, প্রতিবারই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী উমর ফারুক বলেন, আমাদের ২৪ জন ভাইবোন অনশনে আছে। দাবি আদায়ে এই ২৪ জন যদি মারা যায়, আরও ২৪ জন অনশনে বসবে। এভাবে মরতে মরতে ভিসির বাসভবনের ফটকের সামনের স্থান একটি মৃত্যুক্ষেত্র তৈরি হবে। তবুও আমরা আমাদের দাবিতে অনড় থাকব। এদিকে বুধবার রাতের মতোই বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের কাছে কোষাধ্যক্ষ নেতৃত্বে দফায় শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল আসেন আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতটির মধ্যস্থতা করার জন্য। শিক্ষার্থীরা তাদের জানান, আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করলে আপনারা কথা বলতে পারবেন। অন্যথায় আমরা আপনাদের কোন কথায় কর্ণপাত করব না। বুধবার রাতে সাড়ে ১১টার দিকেও কোষাধ্যক্ষের নেতৃত্বে শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল কথা বলতে চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। বৃহস্পতিবার কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামের অনেক অনুরোধের পর এবং সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন ২ মিনিট শিক্ষকদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অবশেষ শিক্ষার্থীরা তাদের ২ মিনিট কথা বলার সুযোগ করে দেন। এ সময় কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা তোমাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। রবিবারের ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সেটা আগে তদন্ত করার জন্য আমাদের সেই সুযোগটা দাও। তদন্তের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই এই ক্যাম্পাসে যারা আসবে তারা যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শর্ত দেন যে, আপনারা আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করুন নয়ত আর কোন বিষয় আমরা শুনবো না। আমরা এ দফা এক দাবিতে অনড় আছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার শিক্ষকদের উদ্দেশে সংহতি প্রকাশের কথা উল্লেখ করে শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, উপাচার্যের কাছে তার চেয়ারটাই আগে বড় বলে মনে হচ্ছে । এতগুলো শিক্ষার্থীরা না খেয়ে না ঘুমিয়ে, পুলিশ দ্বারা হামলার শিকার হয়ে অনবরত আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু ভিসির চেয়ার যে অনেক উচ্চমানের ! তাই সে ছাড়তে পারছে না। আমরা অবিলম্বে এই ভিসির পতন চাই। তার অধীনে আমরা থাকতে চাই না। তিনি শিক্ষকদেরকে আরও বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকরা মুঠোফোনে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার জন্য।’ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কোষাধ্যক্ষের কাছে সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক দ্বারা হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে কোষাধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকরা চাচ্ছে তাদের সঙ্গে আলোচনা ক্ষেত্র তৈরির করার জন্য। এজন্য শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করছে। শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী হুমকির বিষয়টি তিনি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের ওপর যেন কোন মামলা না হয়। এমনকি প্রশাসনের ওপরমহল থেকেও শিক্ষার্থীদের ওপর কোন মামলা যেন না করা হয় সেই বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখছি। এছাড়া সরকার থেকেও এ বিষয়ে বলা হচ্ছে। ভিসি অধীনে শিক্ষার্থীরা থাকতে চাচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সবকিছুর একটা নিয়মকানুন আছে। নিয়মের ভেতরে দিয়েই যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যে আইন কানুন আছে সে অনুযায়ীই আমাদের আগাতে হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে অনশনরত ২৪ শিক্ষার্থীর দায়িত্বরত চিকিৎসক ডক্টর বাবলু হোসেন বলেন, কাজল দাশ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। তার প্রচ- মাথা ব্যথা। এদিকে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সিলেটের জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। আরেক অনশনরত শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম নিশাত সম্পর্কে দায়িত্বরত ওই চিকিৎসক বলেন, নিশাত এ্যাজমার রোগী আগে থেকেই। তিনি মাংসপেশীতে টান অনুভব করছেন, এ্যাজমার কারণে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। স্যালাইন দিয়েছি। যদি সে মুখে খায় তাহলে একটু সুস্থতা অনুভব করবে। এদিকে সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেয়া বিবৃতি সম্পর্কে প্রেসব্রিফিং দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা আনজুম ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান ঘটনায় প্রশাসনের বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিসা আনজুম বলেন, ‘অনশনরত ২৪ জনের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমরা পর্যাপ্ত মেডিক্যাল সাপোর্ট পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও আমদের কোন মেডিক্যাল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। শাবির ঘটনায় যেন আগুনে ঘি না ঢালা হয় - পরিকল্পনামন্ত্রী ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, আলোচনা করে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সময় দিয়ে বোঝাতে হবে। এই বয়সে তাদের একটু উত্তেজনা থাকতেই পারে। একটু সময় দিয়ে, বুঝিয়ে, তাদের সঙ্গে কাজ করে সব সমাধান করতে হবে। কোন হঠকারী বিষয় যেন তাদের ওপর চাপিয়ে না দেয়া হয়। ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। শাবির ঘটনায় যেন আগুনে ঘি না ঢালা হয়। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় একটি মাদ্রাসার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক শিক্ষার্থী আইনজীবীদের মানববন্ধন ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষার নিরাপত্তা বিধান মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে সিলেটে আইনজীবীদের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জজকোর্টের সামনে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শাবিতে ওসমানীর সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম ॥ শাবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা দিতে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সাত সদস্যের টিম। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে দুজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় এ মেডিক্যাল টিম এসে উপস্থিত হয়। এ সময় তারা প্রয়োজনীয় স্যালাইন এবং ওষুধ দিয়ে সহায়তা করেন। অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মেডিক্যাল টিমের সদস্য মোঃ নাজমুল হাসান বলেন, এখানে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। দুজন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর।
×