ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের চিরবিদায়

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০২২

মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের চিরবিদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রিয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন গুপ্তচর চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র ¯্র্রষ্টা এবং সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেন। বুধবার বিকেলে এই প্রখ্যাত লেখক রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি....রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। কাজী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন মারা গেছেন ২০১৫ সালে। তিনি এক মেয়ে শাহরীর সোনিয়া এবং দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন ও মায়মুর হোসেনকে রেখে গেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মায়মুর জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার বিকেল চারটা ৪০ মিনিটে এই কিংবদন্তি লেখক মারা যান। গত ১০ দিন ধরে তিনি বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ফ্রিজিং ভ্যানে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে লেখকের মরদেহ তার সেগুনবাগিচার বাসভবনে নিয়ে আসা হবে। মহামারীর উর্ধমুখী পরিস্থিতির কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের আয়োজন করা হবে না। বাদ জোহর সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর লেখকের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে তাকে সমাহিত করা হবে। গতবছরের অক্টোবর মাসে কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার স্ট্রোক এবং হার্ট এ্যাটাকও হয়। ১০ জানুয়ারি থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। একাধারে লেখক, প্রকাশক ও অনুবাদক ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ, শিক্ষক ও লেখক কাজী মোতাহার হোসেন। মা সাজেদা খাতুন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বাংলাদেশে পেপারব্যাক বই প্রকাশের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের গড়া সেবা প্রকাশনী। এই প্রকাশনী পাঠকদের হাতে স্বল্পমূল্যে তুলে দিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত সব উপন্যাসের অনুবাদ। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্র সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে ‘কুয়াশা’ নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিল। বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব ছদ্মনামেও বই লিখেছেন তিনি। কাজী আনোয়ারের অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশী কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। তবে মৌলিক রচনা রয়েছে বেশকিছু। বিশেষ করে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের প্রথমদিকের বইগুলো মৌলিক রচনা। এরপর তার নামে অন্য লেখকেরা সিরিজগুলো চালু করেন, তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে মাসুদ রানার রচয়িতা প্রশ্নে অনেক বইয়ের নেপথ্য লেখক শেখ আবদুল হাকিম আদালতের দ্বারস্থ হন। সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস সিরিজ ‘কুয়াশা’ ও ‘মাসুদ রানার’ অনেক বইয়ের নেপথ্য লেখক ছিলেন তিনি। বইয়ের লেখক সম্মানি নিয়ে একটা পর্যায়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শেখ আবদুল হাকিমের বিরোধ হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেখ আবদুল হাকিম ‘কুয়াশা সিরিজ’ এর ৫০টি বই ও ‘মাসুদ রানা সিরিজ’ এর ২৬০ বইয়ের লেখক দাবি করে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। গতবছর ডিসেম্বরে সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় স্পাই থ্রিলার ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানাস্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমকে দিয়ে কপিরাইট অফিসের দেয়া সিদ্ধান্ত বহাল রাখে হাইকোর্ট। ১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ দিয়ে বিখ্যাত মাসুদ রানা সিরিজের আবির্ভাব হয়। গোয়েন্দা চরিত্র মাসুদ রানা বাংলাদেশের কয়েক প্রজন্মের অবসর সঙ্গী। এ সিরিজের পাঁচ শতাধিক বই প্রকাশিত রয়েছে। পেপারব্যাক বইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তার সৃষ্ট সেবা প্রকাশনী শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য নানান ধাঁচের বই প্রকাশ হয়েছে। তিন গোয়েন্দা, রোমান্টিক, থ্রিলার, অনুবাদ, ওয়েস্টার্ন, ইসলামীসহ নানান সিরিজ প্রকাশ হয়েছে এ প্রকাশনী থেকে।
×