ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছেন রিফাইনাররা

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২০ জানুয়ারি ২০২২

ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চাপ দিচ্ছেন রিফাইনাররা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিকবাজারে কমলেও রোজা সামনে রেখে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চাপ অব্যাহত রেখেছেন রিফাইনাররা। তবে পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণে আরও ১৫ দিন সময় চেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, সারা পৃথিবীতে রিলিজিয়াস (ধর্মীয় অনুষ্ঠান) প্রোগ্রামগুলোর আগে বিভিন্ন পণ্যে ডিসকাউন্ট দেয়া হয় যা, ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টোটা হয়। ঈদ এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা মানসিকতার বিষয়। এই ধরনের মনমানসিকতা থেকে ব্যবসায়ীদের বেরিয়ে আসতে হবে। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সংশোধন ও ব্যয় বিবরণী হালনাগাদ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই বৈঠকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ ভোজ্যতেলের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বর্তমান দামই থাকবে। আগামী ৬ তারিখ, মানে ১৬ দিন পর বসে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বাড়াব। কমানোর প্রয়োজন হলে কমাব। সবকিছু বিবেচনা করে যেটা সুবিধাজনক হয়, সেটিই করা হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেরা কিছু দাম বাড়িয়েছেন। আগামীতে দাম নির্ধারণে সেটাও সরকারের পক্ষ থেকে বিবেচনা করা হবে। উল্লেখ্য, প্রতিলিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েই রিফাইনাররা ইতোমধ্যে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত কয়েক দশকের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েকবছর ধরে রোজা শুরুর ঠিক আড়াই থেকে তিন মাস আগে থেকে মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেয় রিফাইনাররা। ব্যবসায়ীদের এই পুরনো কৌশলের মুখে অব্যাহতভাবে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার এ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম তেলের বাড়ানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানানো হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণলায় বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ট্যারিফ কমিশনে পাঠালে প্রাথমিক পর্যালোচনা শেষে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই-বাছাই এবং আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে প্রায় জানিয়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপরই সরকারী সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এতে করে চাপে আছেন সাধারণ ভোক্তারা। অব্যাহতভাবে দাম বাড়ানোর কারণে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির বুধবারের তথ্যমতে, প্রতি পাঁচলিটার বোতলজাত ক্যানে ১০ টাকা বেড়ে ৭১০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও খুচরা বাজারে এই দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ব্র্যান্ড ভেদে প্রতি পাঁচলিটার বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ৭৪০-৭৯০ টাকায়। এছাড়া ১ লিটারের প্রতিটি বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকায়। জানা গেছে, আন্তর্জাতিকবাজারে ভোজ্যতেল ও চিনিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। মহামারী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন নি¤œœমুখী ধারায় রয়েছে। এ অবস্থায় দাম কমার সুযোগ নিতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ খাতের কিছু কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর কারসাজিতে জড়িত হয়ে ভোজ্যতেল আমদানিতে এলসি খুলতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকারকে চাপে ফেলে দাম বাড়ানোর কারসাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এটা ঠিক এখন আন্তর্জাতিকবাজার নি¤œমুখী। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তিনমাস আগে ক্রুড সয়াবিন ও পামওয়েল বেশি দাম দিয়ে আমদানি করেছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের এই দাবিও কতটা যৌক্তিক সেটাও যাচাই-বাছাই করা হবে। তিনি বলেন, আপাতত ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না। ব্যবসায়ীরা নিজেরা নিজেরা কিছু দাম বাড়িয়েছিলেন আমাদের না জানিয়ে। সেটাও তারা বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৮-১৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে।
×