ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরবঙ্গে অবৈধ দখল থেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে

খাস জমির অর্ধেক উদ্ধার করে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২০ জানুয়ারি ২০২২

খাস জমির অর্ধেক উদ্ধার করে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গে যে সরকারী খাস ভূমি আছে তা উদ্ধার করে ১০ লাখ ভূমিহীনকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের বড় একটি অংশ নদী ভাঙ্গনের থাবায় পড়ে ভাসমান। বাকিরা বসত ভিটা জমি জিরাত থেকে বঞ্চিত। সরকারী হিসাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরকারী খাস ভূমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২০ লাখ একর। যার অর্ধেকেরও বেশি প্রভাবশালীরা বহু বছর ধরে অবৈধ দখলে রেখেছে। তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধ দখলে থাকা খাস ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনও মামলার কারণে উদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরে আর উদ্ধার হয় না। সরকারও অবৈধ খাস ভূমি উদ্ধারে জোরালো কোন উদ্যোগ নেয় না। ফলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয় না। খোঁজখবর করে জানা যায়, ভূমি ও জরিপ রেকর্ড অধিদফতরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা কর্মচারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের ‘গভীর সম্পর্ক’ আছে। তাদের বিরুদ্ধে ‘গোপনে নয়ছয়’ করার অভিযোগও পাওয়া যায়। খাস ভূমির অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আছে, বড় ব্যবসায়ী, মহাজন, জোতদার, হাউজিং ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, বড় ঠিকাদার ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উঠতি ধনী। এই প্রভাবশালীরা কাগজে টেম্পার কখনও জাল দলিল করে, ভুয়া রেকর্ডের মাধ্যমে খাস ভূমি নিজেদের নামে নামজারি করে ভোগ দখল করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া খাস ভূমি থেকে ভূমিহীনদের বিতারিত করে দখল নেয়া হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির ধারাবর্ষা চর, শেরপুর, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলাসহ কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা আছে। কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় খাস ভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৮২ একর। এর মধ্যে অকৃষি ভূমি ১ লাখ ৮ হাজার ৯৮৩ একর। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় খাসভূমির পরিমাণ ১ লাখ ৭ হাজার ২৭৩ একর। এর মধ্যে ৬০ হাজার ৮১৫ একর অকৃষি। দুই বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাস ভূমি রাজশাহী বিভাগে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথা : সরকার ইচ্ছা করলেই এইসব খাসভূমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। অনেক সময় সরকার খাস ভূমি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলে। এ ধরনের আশ্রয়ণ প্রকল্প বগুড়া সোনাতলা, সারিয়াকান্দি এলাকায় আছে। সেখানে ভূমিহীন পরিবারকে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়। আশ্রয়ণের মধ্যে পুকুর ও চষাবাদের ভূমি দেয়া হয়। ভূমিহীনদের কর্মজীবী করে তোলার ব্যবস্থা থাকে। এ ধরনের কর্মসূচী চলছে ধীরগতিতে। খাস ভূমি দখলদাররা দখলের পরই ভূমির আকৃতি পাল্টে ফেলে। কেউ আবাদী জমিতে গড়ে তোলে অবকাঠামো স্থাপনা। কেউ স্থাপন করে শিল্প কারখানা। কেউ মাটি কেটে পুকুর বানিয়ে মাছের চাষ করে। ভূমিহীনদের এক নেতা মোশাররফ হোসেন বলেন, উত্তরাঞ্চলে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ ভূমিহীন হয়ে ভাসমান। খাস ভূমির অর্ধেক উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ দিলে অন্তত দশ লাখ পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে।
×