ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারক গ্রেফতার

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির নামে বিপুল অর্থ আত্মসাত

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২০ জানুয়ারি ২০২২

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির নামে বিপুল অর্থ আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় মির্জা মুকুল (৪৫) নামে ভুয়া ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানায়, গ্রেফতারকৃত মির্জা মুকুল দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার পোর্টে চাকরি দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। বুধবার সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এ তথ্য জানান। ইমাম হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৪৩৫ বাড়ির দ্বিতীয়তলা থেকে প্রতারক মির্জা মুকুলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত সাপেক্ষে জানা যায়, মুকুল ও পলাতক অন্য আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পোর্টে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ-সরল লোকজনকে প্রতারিত করে টাকা আত্মসাত করে। সম্প্রতি আবদুল কাদের নামে এক ভুক্তভোগীর মামলার বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে মুকুলকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, ভুক্তভোগী আবদুল কাদের ও প্রতারক মির্জা মুকুল একই এলাকায় থাকায় তাদের প্রায়ই দেখা হতো। এ সময় মুকুল নিজেকে ল্যান্ড ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিত। পরে ভুক্তভোগী আব্দুল কাদের অস্ট্রেলিয়া যাবার জন্য ৮ লাখ টাকা দেন মির্জা মুকুলকে। বিষয়টি প্রতারণা জানতে পেরে তিনি মামলা করেন। মামলার বাদী আব্দুল কাদের জানায়, তার সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাশোনা আছে। তার কাছে সরকারীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় লোক পাঠানোর নির্ভরযোগ্য মাধ্যম আছে এবং এই বিষয়ে বাদীর পরিচিত বন্ধু ও স্বজনদের সরকারী খরচে পাঠানোর প্রস্তাব করে। যাদেরকে পাঠানো হবে তারা মেরিন টু মেরিন অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার শিপিং পোর্টে কাজ করবে। ওই প্রতারক আরও ভুক্তভোগীদের জানায়, অস্ট্রেলিয়া পৌঁছাতে একজনের মোট ৮ লাখ টাকা খরচ হবে। যাদেরকে পাঠানো হবে তাদের প্রথমে চট্টগ্রাম মেরিনে এক মাসের ট্রেনিং করতে হবে। এভাবে সে ভিকটিমসহ কয়েকজনের মাধ্যমে ৩৬ জনকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করে। তাদের কাছ থেকে মোট ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায়ও করেন। তবে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন ভিকটিমরা। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) ইমাম হোসেন জানান, মুকুল আগে ওমান থাকতেন। তিনি ৯ বছর ওমানের সালাহ সি পোর্টে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে মেরিনভিত্তিক প্রতারণার পরিকল্পনা করেন। ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতেও দক্ষ তিনি। এই চক্রের অন্যান্য সদস্য গ্রেফতার ও প্রতারণার মাধ্যমে নেয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টায় তদন্ত অব্যাহত আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ সময় মুকুলের কাছ থেকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে ট্রেনিং করিয়ে অস্ট্রেলিয়া পোর্টে চাকরিতে নিয়োগের জন্য ২৬টি পাসপোর্ট, ৩টি অটোসিল, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিং পাসের কার্ড ৩৫টি, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ট্রেনিংয়ের ভুয়া যোগদানপত্রের কপি ৭টি, বাংলাদেশ সরকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর লেখা ও ছবি সংবলিত পাসপোর্টের আবেদন ফরম ২৫টি, মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থিরচিত্র ১৫টি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
×