ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকরা আন্দোলনে ॥ সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি শাবি ভিসি

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২০ জানুয়ারি ২০২২

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। বুধবার বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচী শুরু করেন তারা। ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন ছাত্র এবং ৯ জন ছাত্রী রয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান। ৩ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা টানা ছয় দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তাদের দাবি ছিল একটি হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি পর্যন্ত এসে ঠেকে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন। অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা অনশনে রয়েছি শুধু এক দাবি নিয়েই, সেটা উপাচার্যের পদত্যাগ। যতক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ না করছে, আমরা মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত অনশনে থাকব। জানা যায়, শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের অসদাচরণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে এই হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে সূচিত হয় আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত ॥ এদিকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। শাবি শিক্ষকরা আন্দোলনে ॥ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেন শিক্ষকদের একাংশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ সম্বলিত নানা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে তাদের হাতে। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের নিয়ে যে মন্তব্য করছে তা অশালীন। এতে শিক্ষকরা আহত হয়েছেন। তবে এই অভিযোগ নাকচ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু শিক্ষক এসব কথা বলছেন। অথচ তারা ভিসির কুরুচিপূর্ণ অডিও ক্লিপ নিয়ে কোন মন্তব্য করছেন না। ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক হিমাদ্রি শেখর রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেই পারে। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চিত এসবের একটি সমাধান হবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কখনও কাম্য নয়। আমরা আমাদের শিক্ষার্থী ও সন্তানদের এ রকম শিক্ষা কখনই দেইনি।’ মাটির চুলায় শিক্ষার্থীদের রান্না ॥ মাটির চুলা তৈরি করে বড় বড় হাঁড়িতে রান্নার করা হচ্ছে। মাঠে বসেই শিক্ষার্থীদের কেউ পেঁয়াজ-মরিচসহ সবজি কাটছেন। কেউ লাকড়ি জোগাড় করছেন। তবে রান্নার জন্য আনা হয়েছে বাবুর্চি। রান্নার তদারকিতে থাকা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ আহমদ বলেন, ‘আমাদের হলের ক্যান্টিন বন্ধ, আশপাশের রেস্টুরেন্টও বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এখন আমরা খাওয়া নিয়ে সমস্যা পড়েছি। ‘তাই আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে ও কিছু বড় ভাইদের সহযোগিতায় এখানে রান্নার আয়োজন করেছি। এখানেই সবাই খাব। আন্দোলন যতদিন চলবে এভাবে রান্নার আয়োজনও চলবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি ছাত্রী হল ও ৩টি ছাত্র হল রয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তবে হল ছাড়ার নির্দেশনার পর অর্ধেক শিক্ষার্থীই চলে গেছেন। আন্দোলনের জন্য রয়ে গেছেন হাজার খানেক। শাহজলাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা পর থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, হল ছেড়ে না দেয়া, একডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের পর এবার শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে কর্মসূচী পালন করছেন। উপাচার্য সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন ॥ উপাচার্যের যদি কোন দোষ থাকে তাহলে সরকার যে পদক্ষেপ নিবে উপাচার্য তাই মেনে নিবেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বুধবার সকালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন উপাচার্য।
×