ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিমুকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে ঘাতক স্বামী

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২০ জানুয়ারি ২০২২

শিমুকে সরিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে ঘাতক স্বামী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গলাটিপে হত্যার পর রাইমা ইসলাম শিমুর লাশ গাড়ির বনেটে নিয়ে টানা ছয় ঘণ্টা এদিকসেদিক ঘুরেছেন। কোথাও কোন নিরাপদ স্থান না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আলীপুরের নির্জনস্থানে ফেলে দিতে সক্ষম হন ঘাতক স্বামী। রিমান্ডে থাকা ঘাতক স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ এমনই তথ্য প্রকাশ করেছেন। তারা বর্তমানে কেরানীগঞ্জ থানায় তিনদিনের রিমান্ডে আছেন। এদিকে মঙ্গলবার দাফন করা হয়েছে শিমুর মরদেহ। নিহতের ভাই সায়দুল ইসলাম খোকন জনকণ্ঠকে জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মঙ্গলবার বাদ এশা মরদেহ আনা হয় গ্রীন রোডের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায়। সেখানকার মসজিদে জানাজার পর তাকে আজিমপুর গোরস্তানে সমাহিত করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক অশান্তি ও ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে দীর্ঘদিন শিমুর ওপর নাখোশ ছিল তার স্বামী। এমনকি সম্প্রতি তিনি আর শিমুর সঙ্গে ঘরসংসার করবেন না বলেও উচ্চারণ করেছিলেন। তারপর থেকেই তিনি শিমুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং সুযোগ খুঁজতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত গত রবিবার সকাল ৭টা/৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যাকা-ের পর নোবেল ঘাবড়ে যান। তিনি প্রথমেই ফোন করেন তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত বন্ধু ফরহাদকে। কিন্তু ফোনে শিমুকে হত্যার কথা গোপন রাখেন। বন্ধুর ডাকে বন্ধু ফরহাদ এসে দেখেন সর্বনাশা ঘটনা। বাধ্য হয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেন লাশটি নিরাপদে বাসার বাইরে কোথাও রেখে আসার। পরে ফরহাদ ও নোবেল বস্তা এনে শিমুর লাশ দুটি পাটের বস্তায় ভরেন। সেটা প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে সেলাই করেন। তারপর তারা বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নোবেলের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ গাড়ি নিয়ে মিরপুরের দিকে ছুটেন। তখনও রাজপথে মানুষের সমাগম থাকায় তারা ভয় পেয়ে যান। তারপরও তারা টানা ৬ ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু ওই এলাকায় লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হজরতপুর ইউনিয়নের দিকে যান। সেখানে রাত সাড়ে নয়টার দিকে কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে দেন। তারা আবার বাসায় এসে সব কিছু ধোঁয়ামোছা করেন। উল্লেখ্য, ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসায় থাকতেন শিমু। রবিবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরদিন সোমবার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলীপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দী খ-িত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
×