ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু

ঢাকা, রাঙ্গামাটির পর ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১০ জেলা

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২০ জানুয়ারি ২০২২

ঢাকা, রাঙ্গামাটির পর ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১০ জেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অতিমারী করোনার তা-বে বিশ্ব এখন টালমাটাল। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে নতুন করে চলছে করোনার তা-ব। এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে ধাপে ধাপে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে ফের চিন্তা বাড়ছে। বাংলাদেশেও সেটির ব্যক্তিক্রম হয়নি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে। গত ২৮ জুলাই দেশে ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, যা একদিনে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। আগের সাত দিনে দেশে যথাক্রমে ৮৪০৭, ৬৬৭৬, ৫২২২, ৩৪৪৭, ৪৩৭৮, ৩৩৬৯, ২৯২৬ ও ২৪৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জন। দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার জানানো হয়েছিল, আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়; শনাক্ত হন ৮ হাজার ৪০৭ জন; শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। বুধবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪৭৩ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৮ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ হাজার ৫৭৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৩৭ হাজার ৮৩০টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ২ জন নারী। ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৮ জন। চট্টগ্রামে ২ জন এবং রাজশাহী ও সিলেটে ১ জন করে মারা গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১০ জেলা ॥ ঢাকা ও রাঙ্গামাটির পর আরও ১০ জেলাকে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ ছাড়া মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ৩২ জেলা। আর এখন পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত ১৬ জেলা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হলো : গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, পঞ্চগড়। এর আগে ১২ জানুয়ারি ঢাকা ও রাঙ্গামাটি জেলাকে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যে দেখা যায়, রাজধানীতে করোনা সংক্রমণের হার ২৮ দশমিক ১১ এবং রাঙ্গামাটিতে করোনা সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৭১। করোনার মধ্যম ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোর সংক্রমণ ৫-১০ শতাংশের মধ্যে। আর কম ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোর করোনা শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে। এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ ॥ দেশে আগের সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে করোনা রোগী বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। এ সময় (১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি) করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ১৮৫ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। বুলেটিনে জানানো হয়, গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশে ২৭ শতাংশের বেশি পরীক্ষা বেড়েছে। সাত দিনে ২ লাখ ৩ হাজার ১২২টি পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৫ জন। এর আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সাত দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে ২২৮ শতাংশ রোগী বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাড়তি সংক্রমণের পেছনে ওমিক্রনের প্রভাবকে দায়ী করলেও স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেল্টা ধরনে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তবে সংক্রমণ বাড়লেও আতঙ্কের কোন কারণ নেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংক্রমণ অনুপাতে বাড়েনি। এটি ভাল দিক। নাজমুল ইসলাম বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে কোভিড ডেডিকেটেড যেসব শয্যা আছে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকার পরিসংখ্যান যদি দেখি, ৪ হাজার ৬৮৬টি শয্যার বিপরীতে ৩ হাজার ৭১০টি শয্যা এখনও খালি রয়েছে। নতুন করে করোনায় রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা সে অনুপাতে বাড়েনি। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের অক্সিজেনের সঙ্কট নেই। অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, এগুলো প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট পরিমাণ মজুত আছে। ওমিক্রন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রমিত করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ওমিক্রন অনেকটা ছড়িয়ে গেছে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, নতুন একটি ধরন আসলে, তখন সেটি পুরনো ধরনকে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিস্থাপিত করে দেয়।
×