ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ইউরিডাইস নাটকের কারিগরি মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২২

শিল্পকলায় ইউরিডাইস নাটকের কারিগরি মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রখ্যাত ফরাসি নাট্যকার জ্যঁ আনুই। এই নাট্যকারের বিশ্বাস যে জীবনে শুধুই আপোস করে চলতে হয় সেখানে শুদ্ধতা এবং পবিত্রতা রক্ষা করা অসম্ভব। বিত্ত অথবা ভালবাসার নিগড়ে বাঁধা সুখ তার কাছে অশ্লীল। তার সৃষ্ট চরিত্রদের অন্তর্জগৎ এবং বহির্জগৎ যেন নিয়ত শত্রুপক্ষ। একে অন্যের থেকে চির সমান্তরাল দূরত্বে অবস্থান করে। শুদ্ধতায় বিশ্বাসী এই নাট্যকারের বিখ্যাত এক সৃষ্টিকর্ম ইউরিডাইস। চিরন্তর ভালবাসার পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের গল্প মেলে ধরা সেই নাটকটি এবার উঠে আসছে ঢাকার মঞ্চে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষকে উপলক্ষ করে প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল। নাটকটির অনুবাদ করেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব খায়রুল আলম সবুজ। নির্দেশনা দিয়েছেন ড. চঞ্চল সৈকত। সোমবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রযোজনাটির কারিগরি প্রদর্শনী হয়। আগামী শনিবার সন্ধ্যায় একই ভেন্যুতে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক চঞ্চল সৈকত বলেন, একইসঙ্গে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় এবং চিরন্তন ভালবাসার গল্প্ উঠে এসেছে ইউরিডাইস নাটকে। নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের যুব সমাজ বিপদগামী হচ্ছে। আবার অনেকে ভালবাসার ফাঁদে পড়ে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে। সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই নাটকে বিশেষ একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে এক সময় রাজনীতিতে প্রবেশ করে ক্ষমতার দাপটে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। অর্থের দাপটে জীবন যৌবনের লালসা মেটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পাশাপাশি সত্যিকাকের ভালবাসার কারণে মানুষ তার জীবনকেও অত্মাহুতি দিতে কুণ্ঠিত হয় না। আবার মিথ্যে ভালবাসার কারণে সমাজে বিপদগামী হয়ে তরুণ তরুণীরা জীবনে বিপর্জয় ডেকে আনে। গ্রিক মিথেন বিখ্যাত অফিউস ও ইউরিডাইসের কাহিনীর আদলে ইউরিডাইস নাটকটি লেখা হয়েছে। কিন্তু এ নাটকের পাত্র-পাত্রী আধুনিক সময়ের। ধরা-অধরা, আলো-আঁধারি আর বাস্তব-অবাস্তবের দোলায় দোলে ইউরিডাইস নাটকের মুখ্য তিনটি চরিত্র- অর্ফিউস, ইউরিডাইস ও হেনরি। আনুই তার দর্শন উপস্থাপন করার জন্য চমৎকারভাবে ব্যবহার করেনে মিথ কাহিনীকে। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে দেশীয় সংস্কৃতিক এবং অবক্ষয়কে উপজীব্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নাটকের গল্পে একে অপরের প্রতি মুগ্ধ দুই প্রেমিক-প্রেমিকা অর্ফিউস ও ইউরিডাইস। ইউরিডাইসের সঙ্গে নিয়তির মতো জড়িয়ে আছে একটি চরিত্র আর সে হলো হেনরি। গ্রিক কাহিনীর মতোই ইউরিডাইস মারা যায় এক দুর্ঘটনায়। শোকে উদভ্রান্ত অর্ফিউসকে তখন সামাল দেবার চেষ্টা করে হেনরি। হেনরি তাকে ইউরিডাইসকে ফিরিয়ে দেবার প্রস্তাব করে। তবে শর্ত হলো, রাত পোহাবার আগে ইউরিডাইসের মুখের ওপর চোখ ফেলানো যাবে না। অর্ফিউস এ প্রস্তাব মানলেও সে রক্ষা করতে পারে না। ফলে ইউরিডাইসের বাস্তবে ফিরে আসা আর হয় না। অর্ফিউসের সামনে দুটো পথ। জীবন চাইলে জীবন পাবে অথবা ইউরিডাইসকে চাইলে মৃত্যুকে গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর মধ্যেই সে কেবল ইউবিডাইসকে অনন্তকালের জন্য পেতে পারে। অর্ফিউস জীবন প্রত্যাখ্যান করে। মহামিলনের প্রত্যাশ্যায় মৃত্যুর পথ ধরে সে হাঁটতে থাকে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন হাসান হারুণ, ড. চঞ্চল সৈকত, হেলেন হাসান, সাঈদ রহমান, শেফালী পারভীন সাথী, রুবেল আহমেদ, শাহিনুর রহমান, আফিফ, জয়ন্ত গাঙ্গুলী, দীন ইসলামসহ অনেকে। নাটকের পোশাক পরিকল্পনা করেছেন খায়রুজ্জাহান মিতু। আলোক পরিকল্পনা করেছেন সাইফ মন্ডল। সেট পরিকল্পনা করেছেন শাওন সগীর সাগর। সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন আনিসুর রহমান শাহিন।
×