ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৪ বছর প্রেমের পর শূটার শোভনের জীবনসঙ্গিনী হলেন মনিবা ...

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

১৪ বছর প্রেমের পর শূটার শোভনের জীবনসঙ্গিনী হলেন মনিবা ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ “মনটা দিলাম তোমার হাতে, যতন করে রেখ!/হৃদয়-মাঝে ছোট্ট করে আমার ছবি এঁকো,/স্বপ্ন দিলাম তাকে আরও দিলাম আশা,/মনের মত সাজিয়ে নিয়ো আমার ভালবাসা।” প্রথম দেখা, প্রথম পরিচয়, প্রথম ভাল লাগো, প্রথম হাত ধরা, প্রথমবার ভালবাসি বলা ... তারপর? শুভ পরিণয়। জাতীয় শূটার শোভন চৌধুরীর জীবনের গল্প এটা। ডুবে ডুবে জল খেয়েছেন পাক্কা ১৪ বছর। প্রেমের মরা জলে ডোবে না বলেই তা ভেসে উঠেছে এবং তা শনিবার রাতে জাকজমকপুর্ণভাবে শুভ পরিণয়ে গড়িয়েছে। মিয়া-বিবি রাজী, তো কি করবে কাজী? মজার ব্যাপার- পাত্রীর নামের মধ্যেও “কাজী” আছে! কাজী মনিবা বাসার। ঢাকার নারিন্দা নিবাসী। বয়স ২৯ (শোভনও তাই)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবার এমবিএ কমপ্লিট করেছেন মনিবা। প্রেমের সূত্রপাত কিভাবে? জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত অলাপনে সুর্দশন শূটার শোভন বলেন, “অনেক বছরের প্রেম ছিল আমাদের। ১৪ বছরের প্রেম। ঘনিষ্ঠ কজন ছাড়া এটা অন্যদের কাছে গোপন রেখেছিলাম। ও আমার কাজিন। আমার আব্বুর ইমিডিয়েট ছোট বোনের মেয়ে। সেই সূত্রে ও ঢাকা থেকে আমাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যায় ঈদ উপলক্ষ্যে। তখন আমি বিকেএসপিতে পড়তাম। আমিও বিকেএসপি থেকে ঈদের ছুটিতে বাসাতে যাই। সেখানেই তার সাথে প্রথমবারের মতো কথা বলা, ভাল লাগা।” লাজুক কণ্ঠে শোভন বলেন, “এভাবেই ভাল লাগার সেই সুখানুভূতিটা আস্তে আস্তে প্রেমের দিকে চলে যায়!” আই লাভ ইউ কে আগে বলেছিল? শোভনের ভাষ্য, “জানেনই তো, মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। ও এমন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে যে, আমাকেই বাধ্য হয়ে আই লাভ ইউ বলতে হয়েছিল! আমরা পরস্পর পরস্পরকে প্রচণ্ড ভালবাসি।” দীর্ঘ প্রেমজীবনে ঝগড়া হয়েছে দুজনের মধ্যে অনেকবারই। সিরিয়াস ঝগড়া হয়নি সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার মতো? “না” শোভনের দাবি, “ছোটখাট ঝগড়া হাজারো বার হয়েছে। কিন্তু বড় ঝগড়া হয়নি কখনই। ঝগড়া করার পর সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগতো আমাদের মধ্যে মিটমাট হতে। দুজনেই চেষ্টা করতাম সেটা।” বিয়ে নিয়ে মনিবা বলেন, “আমাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছে। কিন্তু এর অগে যখন আমাদের প্রেমের বিষয়টা প্রকাশ পেয়ে গেল, তখন অনেক দিক থেকে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই বলেছিল এ বিয়ে হবে না। তারপর অনেকদিন পর সবাই যখন বুঝতে পারলো বিয়েটা হলে খারাপ হবে না, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং বিয়েটা হয়। সবচেয়ে বড় কথা ওই সময়টায় আমরা দুজন নিজেরা ঠিক ছিলাম। যদিও সেই সময়টাতে আমাদের দুজনেরই বয়স কম ছিল না। তাই কেউ সেভাবে বোঝাতে পারিনি। অনেক সময় পর অবশেষে এখন পেরেছি।” শোভনের সততা-সরলতা খুব ভাল লাগে মনিবার, “ওর মনে যা, মুখেও তা। যা ভাবে, সেটাই বলে ফেলে। ভণিতা করে না। এজন্যই ওকে ভাল লাগে।” মনিবার গুণ নিয়ে শোভন বলেন, “ওর তো অনেক গুণ। ওর সবকিছুই আমার ভাল লাগে। যেমন ঝগড়া করে ও আবার দ্রুত এডজাস্ট করে ফেলতে পারে খুব চমৎকারভাবে।” ২০০৮ সালের সেই সময়টায় শোভন তখন শূটিংটা মাত্রই শুরু করেছেন। তখনও পদক-টদক জেতা শুরু করেননি। তবে ১৪ বছর পর শূটিংয়ে অর্জনটা তেমন মন্দ নয় তার। আন্তর্জাতিক শূটিংয়ে জিতেছেন ৭টি পদক। এসএ গেমসে ১ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য, ১ ব্রোঞ্জ; কমনওয়েলথ শূটিংয়ে ১ ব্রোঞ্জ ও এশিয়ান যুব শূটিংয়ে ১ ব্রোঞ্জ। আর জাতীয় পর্যায়ে জিতেছেন ২৩ পদক (৬ স্বর্ণ, ১২ রৌপ্য ও ৫ ব্রোঞ্জপদক)। তার মানে শোভনের সব শূটিং সাফল্য এসেছে প্রেমে পড়ার পর থেকেই? একগাল সলজ্জ্ব হাসি হাসলেন শোভন। নিজের স্ত্রী সম্পর্কে শোভনের মূল্যায়ন, “ও অনেক পজেটিভ মাইন্ডের। আমাকে ইতিবাচকভাবে অনেক কিছু বোঝায়। কি করা উচিত, আর কি করা উচিত না, ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম, মেন্টালি ফ্রেশ থাকা ... এগুলো যেন ঠিক থাকে, সবকিছুই খোঁজ নেয়। ও নিজে অনেক ধীরস্থির, শান্তশিষ্ট মেয়ে। আমাকেও সবসময় শান্ত রাখারই চেষ্টা করে। এগুলো আমার শূটিং ক্যারিয়ারে অবশ্যই অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ও আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা জোগায়। মনের মানুষকে বিয়ে করেছি। আমরা যেন সুখে বাকি জীবনটা কাটাতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।” দুজনেরই ইচ্ছা ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গিয়ে মধুচন্দ্রিমা করার।
×