ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাঁড়িয়ে নেয়া হচ্ছে যাত্রী

বাসে বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে সামান্যই

প্রকাশিত: ২২:১৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

বাসে বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে সামান্যই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোগান্তির আশঙ্কায় করোনার বিধিনিষেধে বাসে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও শর্ত ছিল সিটের চেয়ে বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। যাত্রী, চালক ও হেলপার সবাইকে পরতে হবে মাস্ক। এসব মানা হচ্ছে সামান্যই। বাসসহ গণপরিবহনে বিধিনিষেধ কার্যকরের প্রথমদিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের চিত্র দেখা গেছে গতানুগতিক দিনের মতোই। বেশিরভাগ বাসেই দেখা গেছে দাঁড়ানো যাত্রী। অধিকাংশের মুখে ছিল না মাস্ক। ভ্রাম্যমাণ আদালত এড়িয়ে চলার প্রবণতা দেখা গেছে চালকদের। কোন সড়কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে জানার পর বিকল্প সড়কে ঘুরে যাচ্ছে বাসগুলো। তবে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। আর লঞ্চের ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কোন নির্দেশনাই দেয়নি। ফলে আগের মতো যাত্রী বহন করছে লঞ্চ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বেশিরভাগ বাসেই যাত্রী ছিল আসনের চেয়ে অনেক বেশি। গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা নিয়ে দেখা গেছে বাগবিতন্ডাও। আসনের সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলব। এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে লিখিত কোন আদেশ আমরা এখনও পাইনি। আগের সিদ্ধান্ত রিভাইস করার জন্য সরকারের কাছে বলা হয়েছে। আশা করছি, কালকের মধ্যে লিখিত আকারে আসবে। বাসে প্রতি সিটে যাত্রী থাকলেও পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি দুই সিটে একজন যাত্রী বহন করছে ট্রেন। নতুন নির্দেশনা আসার আগ পর্যন্ত এভাবেই চলবে বলে জানালেন কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার। তিনি বলেন, আগের নির্দেশনা অনুয়ায়ী প্রতিটি ট্রেন আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। আমরা নতুন কোন নির্দেশনা পাইনি। সকালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সব আন্তঃনগর ট্রেনে অর্ধেক যাত্রী দেখা গেছে। সবার ছিল মুখে মাস্ক। স্টেশনে মাস্ক ব্যবহারে কঠোরতা বজায় রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রবেশপথে রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যাত্রীদের হাত স্যানিটাইজ করে দিতে দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। মুখে মাস্ক নেই এমন ক্রেতার কাছে কাউন্টারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা টিকেট বিক্রি করছেন না। টিকেটধারী যাত্রীদের মুখে মাস্ক না থাকলে রেলস্টেশনের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর স্ট্যান্ডিং টিকেট ও স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম টিকেট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে গত ১২ জানুয়ারি থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকেট বিক্রি শুরু হয়। হ্রাসকৃত টিকেটের ৫০ শতাংশ মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইনে এবং বাকিটা কাউন্টার থেকে কেনা যাবে বলে জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে টিকেট বিক্রিতে কয়েকটি সংশোধন আনা হয়েছে। সরকারের জারি করা ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকরে গত বুধবার পরিবহনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে বিআরটিএ। সভায় পরিবহন নেতাদের দাবিতে সবাই একমত হন যে, সব সরকারী-বেসরকারী অফিস চালু রেখে গণপরিবহনের যাত্রী অর্ধেক করলে সঙ্কট দেখা দেবে। পরিবহন নেতারা দাবি জানান, অর্ধেক নয়, আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেয়া হোক। ফলে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আসে। বিআরটিএ থেকে পরিবহন নেতাদের জানানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি বাসে আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী চলাচল করতে পারবে। তবে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বেশিরভাগ বাসেই যাত্রী ছিল আসনের চেয়ে অনেক বেশি। গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা নিয়ে দেখা গেছে বাগবিতন্ডাও। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগরীর সড়কে বিআরটিএ নয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার শনিবার বলেন, সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করছে। কেউ ব্যত্যয় ঘটালে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন। সকাল ৯টা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন। এই আদালতের মুখোমুখি না হতে মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগগামী কিছু বাস কাকরাইল, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পাশে মোড় ঘুরে যেতে দেখা গেছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকায় একটি বা দুটি এড়াতে পারলেও অন্যায় করে ছাড় পাওয়া যাবে না বলে জানান ফিরোজা পারভীন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সড়কে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। এক রুট এড়িয়ে যেতে পারলেও অন্যগুলোয় ধরা পড়বে। ফিরোজা পারভীন বলেন, প্রথম দিন হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, তা আমরা দেখছি। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি পরিবহনে এক-দুজন যাত্রীকে মাস্ক না পরে চলতে দেখা গেছে। তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী বাস ও চালকদের কাগজপত্রও চেক করা হচ্ছে। যাদের কাগজ সঠিক পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ফিরোজা পারভীন। মদনপুর থেকে হেমায়েতপুরগামী বাসগুলোতে দেখা গেছে অতিরিক্ত যাত্রী। একই চিত্র দেখা গেছে বাড্ডা থেকে এয়ারপোর্ট ও মিরপুরগামী বাসগুলোতে। যাত্রীরাও বলেছেন, বিধিনিষেধের কোন বালাই নেই। বাসে চলাফেরা অন্যান্য দিনের মতোই। এমনকি অনেকে মাস্কও পরছে না। সিটের চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন চালক-হেলপাররা। তারা বলছেন, বিধিনিষেধ মেনেই যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন বলেন, আজকে শনিবার হওয়াতে অফিসগামীদের চাপ নেই। আমরা বাসগুলো থামিয়ে চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সতর্ক করছি। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আমাদের ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেউ চলাচল করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি জানান, ওমিক্রন সংক্রমণ এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পরিচালনা করা হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। বাসে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হলে, বাস চালক, হেল্পার এবং যাত্রীরা মাস্ক না পরলে তাদের জরিমানা বা সতর্ক করা হচ্ছে। গত সোমবার করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ মোকাবেলায় ১১টি বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার, যা কার্যকর শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। তবে বাস ও ট্রেনে বিধিনিষেধগুলো কার্যকর হয়েছে শনিবার থেকে। সরকার ঘোষিত ১১ বিধিনিষেধের মধ্যে একটি ছিল- ট্রেন, বাস এবং লঞ্চ সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। চালক ও সহকারীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ কোন নির্দেশনা না দেয়ায় সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো অর্ধেক বা আসনের সমানসংখ্যক নয়, আগের মতো ঠাসাঠাসি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, অর্ধেক যাত্রী নেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এখনও আসেনি। বিআইডব্লিউটিএ থেকে আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে কোভিডের কারণে স্বাস্থ্যবিধির যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। যাত্রী অর্ধেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক ও লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ বদিউজ্জামান বাদল বলেন, বিআইডব্লিউটিএ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে বলা আছে, অর্ধেক যাত্রী নেবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। তবে ভাড়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এখন যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমরা যাব না। প্রতিবাদ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের লঞ্চের সার্ভে রেজিস্ট্রেশনের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে, সেই ক্যাপাসিটি থেকেও আমরা অধিক যাত্রী নিতে সক্ষম। আমাদের বক্তব্য হলো, আমরা অধিক যাত্রী নেব না। আমরা ক্যাপাসিটির সমপরিমাণ যাত্রী নেব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব এবং প্রচলিত ভাড়াই নেব। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, তা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের লিখিত নির্দেশনা আজ রবিবার আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিট্রা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরাও আসনের সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলব। এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে লিখিত কোন আদেশ আমরা এখনও পাইনি। আগের সিদ্ধান্ত রিভাইস করার জন্য সরকারের কাছে বলা হয়েছে। আশা করছি কালকের মধ্যে লিখিত আকারে আসবে।
×