ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবর্ণা মোর্শেদার চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অন্বেষণ

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

সুবর্ণা মোর্শেদার চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অন্বেষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পের আশ্রয়ে জীবনের কথা বলা এক চিত্রকর সুবর্ণা মোর্শেদা। সেই সুবাদে আপন অভিজ্ঞতার বয়ান উদ্ভাসিত হয়েছে তার চিত্রপটে। শিল্পীর যাপিত জীবনের পারিপার্শ্বিকতা মেলে ধরা সেসব ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়েছে করোনাকালীন বিষণ্ণতার আখ্যান। আছে স্বজন হারানোর বেদনার প্রতিচ্ছবি। মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত সময়ের সবটুকুই রং-তুলির আঁচড়ে ধারণ করেছেন এই চিত্রশিল্পী। এমনকি দুঃসময়কে পেরিয়ে জীবনের স্বাভাবিক পথে ফেরার বার্তাটিও উপস্থাপিত হয়েছে তার আঁকা ছবিতে। সহজাত প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে রাঙিয়েছেন সেসব ক্যানভাস। সেসব ছবির সম্মিলনে শুরু হলো এই শিল্পীর তৃতীয় একক প্রদর্শনী। শিল্পের আশ্রয়ে নিজেকে খুঁজে ফেরা সেই শিল্পায়োজনটির শিরোনাম অন্বেষণ। শনিবার বিকেলে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে এই প্রদর্শনীর সূচনা হয়। শিল্পীর সাম্প্রতিককালের চিত্রিত চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কালে ছবিগুলো এঁকেছেন শিল্পী। সেই সূত্র ধরে করোনাকালের হতাশাগ্রস্ত সময়ের দিনলিপির দেখা মেলে তার ছবিতে। প্রতিটি চিত্রকর্মের মাঝে দৃশ্যমান হয়েছে নিজস্ব জীবনের প্রতিচ্ছবি। সেই শিল্পানুষঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহামারীর আগ্রাসনে শিল্পীর হারিয়ে যাওয়া স্বজনের স্মৃতিচিহ্ন। সাদা-কালোয় মেলে ধরা দুঃসময়ের পাশাপাশি রঙিন চিত্রকর্মগুলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে করোনাজনিত ট্রমা পেরিয়ে শিল্পীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বারতা। আকাশে ভেসে ওঠা চাঁদ কিংবা পুষ্প ও বিহঙ্গময় বর্ণবহুল নিসর্গ আশ্রিত চিত্রকর্মগুলো যেন গেয়ে যায় জীবনের জয়গান। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন দৃকের মহাব্যবস্থাপক আলোকচিত্রী রেজাউর রহমান। শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জামাল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইএমকে সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আসিফ উদ্দিন আহমেদ এবং মনোস্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ‘মনের বন্ধু’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা। অনুভূতি প্রকাশ করেন শিল্পী সুবর্ণা মোর্শেদা। অনুভূতি প্রকাশে সুবর্ণা মোর্শেদা বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে সময়ে ছবিগুলো এঁকেছি। প্রতিটি ছবির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমার যাপিত জীবনের গল্প। শিল্পের আশ্রয়ে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেছি। সেই সুবাদে মহামারীর হতাশাগ্রস্ত সময়ের নিজস্ব দিনলিপিগুলো নানাভাবে প্রকাশিত হয়। সেই সময় ব্যক্তিগত এবং মানসিকভাবে আমি প্রচন্ড হতাশাগ্রস্ত ছিলাম। ছবির আঁকার মাধ্যমে পরিবারের স্বজন হারানো থেকে লকডাউনের দুঃসহ সময় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ক্যানভাসে তারই প্রতিফলন উঠে এসেছে। করোনাকালের জন্য বিশ্বের সকল মানুষের মতো আমিও ঘরবন্দী জীবন কাটিয়েছি। সেই সময়ের মানসিক অবস্থাই উঠে এসেছে ক্যানভাসে। পরবর্তীতে সেই দুঃসময়কে পেরিয়ে জীবনের স্বাভাবিক স্পন্দনে ফেরার গল্পটিও বলেছি চিত্রকর্মেই। প্রদর্শনীতে ৩৪টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে মেলানকোলি, যাপিত জীবন, যপিত জীবনের দিনপঞ্জি বিভিন্ন সিরিজের ছবি স্থান পেয়েছে। লিথোগ্রাফ, পেন্সিল স্কেচ, সায়নোটাইপ, জলরং প্রভৃতি মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী। অন্বেষণ শিরোনামে প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×