ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফের আলোচনায় চট্টগ্রামের পরীর পাহাড় ইস্যু

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৬ জানুয়ারি ২০২২

ফের আলোচনায় চট্টগ্রামের পরীর পাহাড় ইস্যু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের নতুন যে দুটি ভবন নির্মাণ কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির যে মুখোমুখি দ্বন্দ্ব তা ফের আলোচনায় এসেছে। তবে শীঘ্রই দ্বন্দ্ব নিরসন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী। আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, কোন ধরনের সমঝোতা নয়, তারা বৈধভাবেই ভবন নির্মাণ করবে। শনিবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত ‘আইনজীবী মিলন মেলা-২০২১’ এর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, কোভিডের কারণে গতবছর কোর্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও চেয়েছি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করতে। পুরনো অনেক চেম্বার চালু হয়নি। চালু করা প্রয়োজন। ওপরের দিকে টিনের চেম্বার বারবার নষ্ট হচ্ছে। সমিতির পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সমিতির নির্বাচনের পূর্বে চেম্বারের নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজ শুরু করব। সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, বৈধভাবে চেম্বার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করব। আইনজীবীদের মান-মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন সমঝোতা করব না। আগামী ১৮ জানুয়ারি দুপুরে সমাবেশ করব। তিনি আরও বলেন, চেম্বার সঙ্কট আইনজীবীদের, এটি নির্বাচনী ইস্যু নয়। এই সঙ্কট নিরসন করব। জেলা প্রশাসক আমাদের ৫টি ভবন অবৈধ বলে চিঠি দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (চউক)। কিন্তু চউক বলে দিয়েছে সেগুলো বৈধ। গণপূর্তে চিঠিও দিয়েছিল তারা। এর প্রেক্ষিতে চউক বলেছে তারা চৌহদ্দি মূলে মালিক। তাদের সীমানায় ভবন হয়েছে। কাগজ দেখে নক্সা অনুমোদন দিয়েছে। যেহেতু চউক বলে দিয়েছে অন্যপক্ষ হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এনে বলে স্থাপনা অপসারণ-উচ্ছেদ করা হবে। এ ধরনের কথা বলে ডিসি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই ৫ ভবনে হাত দেয়ার অধিকার জেলা প্রশাসকের নাই। নির্বাচনের পূর্বেই চেম্বার নির্মাণ কাজ শুরু করব। ১০ ফেব্রুয়ারির আগেই চেম্বার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হবে। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সমস্যা তুলে ধরেছি। সমাধানের জন্য তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। মান মর্যাদা রক্ষায় কোন কম্প্রোমাইজ করব না। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডহক কমিটির সদস্য এ্যাডঃ মুজিবুল হক বলেন, চট্টগ্রামের ডিসি জেলা আইনজীবীদের মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছেন। তার প্রত্যেকটি বক্তব্যের দালিলিক জবাব আমাদের কাছে আছে। তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আইনমন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ও এ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ৭ হাজার আইনজীবীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা আমাদের জীবন দিতে পারি, কিন্তু জেলা আইনজীবী সমিতির মান সম্মান ঐতিহ্যের বিষয়ে ছাড় দেব না। তিনি আরও বলেন, অনতিবিলম্বে ডিসি যদি মিথ্যা তথ্য প্রচার বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি চালাচালি বন্ধ না করেন এবং পুরাতন আদালত ভবনের সামনে স্থান যদি জনসাধারণের জন্য অবমুক্ত না করেন তাহলে জেলা আইনজীবী সমিতি কঠোর কর্মসূচীর দিলে সেদিন কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি হলে তার দায় জেলা প্রশাসককে নিতে হবে। এদিকে এ বিষয়ে সকলের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল। এখন যে সমস্যাটি সম্মুখীন হচ্ছেন তা নিয়ে আপনারা ধৈর্য্য দেখিয়েছেন। আইনীভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। এটির সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান হবে এটির ব্যাপারে আশাবাদী নয় আমি বিশ্বাস করি। কিছুটা দেরি হচ্ছে করোনার কারণে। তবে এ বিষয়ে শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি গতবছর চেম্বার সঙ্কট নিরসনে দুটি নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানোর পর পরিবেশ অধিদফতর পরিদর্শন করে এবং ফায়ার সার্ভিসও পরীর পাহাড়ে অগ্নিঝুঁকি রয়েছে জানায়। এছাড়া নতুন ভবনে চেম্বার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পত্রিকা প্রকাশের পরই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এ নিয়ে মুখোমুখি হয় দুইপক্ষ। যা গড়ায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত। এরমধ্যে পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের ৫টি ভবনসহ প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসন। এসব উচ্ছেদে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সম্প্রতি জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবও। এছাড়াও পরীর পাহাড় রক্ষায় অবৈধ স্থাপনার অপসারণে বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ মোট ২৫টি দফতরও চিঠি দেয়।
×