ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াই হবে নৌকা ও হাতির

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২২; আপডেট: ০১:১৮, ২৯ জুন ২০২২

লড়াই হবে নৌকা ও হাতির

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারসহ সাতজন প্রার্থী লড়াই করছেন। নগরবাসীর অভিমত এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের হাতি প্রতীকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ইভিএমের মাধ্যমে ১৬ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাত মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মোঃ রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোঃ জসিম উদ্দিন (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)। সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা) ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী পর পর দুই মেয়াদে (২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে) নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাবা আলী আহমেদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, স্বাধীনতার পর যিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থেকে দুই দুবার (১৯৭৪ ও ১৯৭৭) নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আইভীর স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ। মাতা মমতাজ বেগম। নারায়ণঞ্জ শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় বাসিন্দা। আইভী ২০১১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ডাক্তার আইভী ২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের (ধানের শীষ) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারির সিটি নির্বাচনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আওয়ামী লীগের প্রাথী হিসেবেই বেছে নেন। এবারও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি) : এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবারের সিটি নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কারণ বিএনপি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এ সরকারের আমলে আর কোন নির্বাচনেই অংশ নিবেন না। তাই তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির টিকেট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তৈমুর আলম খন্দকারকে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পদ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে অব্যাহতি দেয়। এর আগে তৈমুর আলমকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকেও তাকে সরিয়ে দিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস (অপরাধ বিজ্ঞান) এলএলবি। পিতার নাম মৃত শাহ আলম খন্দকার, মাতা বেগম রোকেয়া খন্দকার। তিনি নগরীর শেরেবাংলা সড়কের বাসিন্দা। তৈমুরের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি বিচারাধীন, ৩টি স্থগিত ও ২টি চার্জ শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। হলফনামায় তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন মামলা নেই, অর্থাৎ রাষ্ট্র ছাড়া কোন ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করেনি। এবারের হলফনামায় তৈমুর আলম খন্দকার বাড়ি ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৪১ টাকা এবং আইন পেশা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর স্থাবর সম্পদের তালিকায় রাজউকে ৫ কাঠার প্লট, ২৭৬ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের নির্মাণাধীন একটি বাড়ি, স্ত্রীর নামে ৩১৪ বর্গমিটার ফ্লোর স্পেসের ফ্ল্যাট। যৌথ মালিকানায় ২৩০ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমির কথা লিখেছেন তৈমুর আলম খন্দকার। এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি) ॥ খেলাফত মজলিশের মেয়র প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন ইংরেজীতে এমএ পাস করেন। তার পিতার নাম মরহুম হাবিবুর রহমান, মাতা- মরহুমা জোহরা খাতুন। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলার বাসিন্দা। পেশার ঘরে লিখেছেন প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করার কথা। তার নামে চারটি মামলা রয়েছে। বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ভাড়া থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ টাকা, কোচিংয়ে শিক্ষকতা থেকে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন নগদ ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। মোঃ জসীম উদ্দিন (বটগাছ) ॥ মোঃ জসীম উদ্দিন লড়ছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের হয়ে। তার পিতার নাম আবদুল হালিম মিয়া, মাতা- সুফিয়া খাতুন, তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির বাসিন্দা। তার নামে কোন মামলা নেই। হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। মাওলানা মোঃ মাসুম বিল্লাহ (হাতপাখা) ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মোঃ মাসুম বিল্লাহ দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স সমমান) পাস। তার পিতার নাম সামছুল হক মোল্লা, মাতা মোসা আয়েশা আক্তার। তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের নবাবপুর রোডের বাসিন্দা। তার নামে মামলা নেই। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মোঃ রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) ॥ নারায়াণগঞ্জের মেয়র পদের জন্য মোঃ রাশেদ ফেরদৌস লড়বেন কল্যাণ পার্টি থেকে। হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাশেদের নামে কোন মামলা নেই। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ব্যবসা থেকে ২৩ হাজার ৮৮৬ টাকা, চাকরি থেকে ৮ লাখ ৬ হাজার ৭০০ টাকা। মোঃ কামরুল ইসলাম (ঘোড়া) ॥ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোঃ কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে তিনি নির্বাচন করছেন। তার পিতা মোঃ মনিরুল ইসলাম, মাতা- বেগম কামরুন নেছা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েট হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তার ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

×