ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

সূর্যের দেখা মেলেনি, সারাদেশে ফের জেঁকে বসেছে শীত

প্রকাশিত: ২২:২৮, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

সূর্যের দেখা মেলেনি, সারাদেশে ফের জেঁকে বসেছে শীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনভর মেঘলা আকাশে সারাদেশে ফের শীত জেঁকে বসেছে। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় আগের দিনের চেয়ে শীত বেড়েছে। উত্তরের জেলাগুলোতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত তিনদিন সারাদেশেই ঝলমলে রোদ থাকায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামে ৩১ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা কিছুটা বেড়ে যায়। হিমেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও ছিল থেমে থেমে। চলতি শীত মৌসুমের তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। মাঘ মাস শুরুতেই যেন নতুন রূপে ফিরেছে শীত। মাঘ মাসে বাঘ কাঁপে প্রবাদকে সত্য প্রমাণ করতেই এই শীত এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। কনকনে শীতে কাহিল হয়ে পড়েন দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষ। চলতি সপ্তাহে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এদিকে গত দুইদিন আগে উত্তর-পশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসলের বড় ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি শীত বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছে। রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর জয়পুরহাটেও শীত জেঁকে বসেছে। উত্তরদিক থেকে আসা হিমালয়ের হিম বাতাস আর ঘন কুয়াশার কারণে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি হচ্ছে রোগী। তবে সবেচেয়ে বেশি রোগী পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পঞ্চগড় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের রোগীর চাপে হাসপাতালে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় বারান্দা এবং মেঝেতেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেকেই। শিশুদের সঙ্গে বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হচ্ছেন ঠা-াজনিত রোগে। শিশুদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা মায়েদের টিকেট বিভাগে দেখা গেছে লম্বা লাইন। অনেকেই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন। তবে বেশিরভাগ শিশুকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে। ১০০ শয্যার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুশয্যা রয়েছে মাত্র ১৬টি? কিন্তু ১৬ জনের বিপরীতে প্রতিদিন ৫০/৬০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে থেকে আড়াই শতাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের মাত্র একজন শিশু বিশেষজ্ঞ দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। এতে রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের উচ্চ পর্যবেক্ষক জীতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, কয়েক দিন বিরতির পর আবারও তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করেছে। সম্প্রতি আকাশে মেঘ জমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছিল। এখন তেঁতুলিয়ার আকাশে মেঘ নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে উত্তরের ভারি শীতল বাতাস তেঁতুলিয়ায় সরাসরি প্রবেশ করে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গেছে। এতে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা ও জলীয়বাষ্প থাকায় সূর্যের তীব্রতা ভূপৃষ্ঠে আসতে না পারায় দিনেও বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন তেঁতুলিয়ায় এমন আবহাওয়া স্থিতিশীল থাকতে পারে। দেশের চার বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও এবং এর কাছাকাছি এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর আকাশ কখনও মেঘলা থাকছে, কখনও মেঘের আড়াল থেকে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। শনিবার সকালের পর দেশের অনেক স্থানে রোদের দেখা মিলতে পারে। আবার কিছু কিছু জায়গায় মেঘলা আবহাওয়া থাকতে পারে। তবে আগামীকাল রবিবার থেকে পুরো ঝলমলে আকাশের দেখা মিলবে দেশের সর্বত্র। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। আর উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর কাছাকাছি এলাকায় বিস্তৃত আছে। মৌসুমের লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। পঞ্চগড় ॥ সীমান্তঘেঁষা পঞ্চগড় জেলায় শীতের তীব্রতা একটু বেশিই। হিমালয়ের হিমেল বাতাসে জেলাজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলার মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না। গরম কাপড়ের অভাবে শীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এরপরও পেটের দায়ে তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে অনেকে কাজে নামছেন। এদিকে, শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন। জেলার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া রোগীদের ভিড় বাড়ছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৯ দশমিক শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটাই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। একদিনেই তাপমাত্রা কমে ৯ ডিগ্রীতে নেমে এলো। কুড়িগ্রাম ॥ জেলাজুড়ে কনকনে শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কুড়িগ্রামের আকাশে ঘন মেঘ কেটে গেলে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে আসতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। প্রচন্ড ঠান্ডায় গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুরাও পড়েছে কষ্টে। শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে দিন কাটছে জেলার হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে ৯ উপজেলায় ৩৫ হাজার ৫শ’ কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে ভুক্তভোগীরা জানান। রাঙ্গামাটি ॥ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও লুহাওয়ার ফলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। ঠান্ডায় প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ প্রচন্ড শীতের কারণে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। এই জেলায় প্রায় ২৫ হাজার জেলে কাপ্তাই লেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। শীত মৌসুমে হঠাৎ বিরূপ আবহাওয়া দেখা দেয়ায় অনেক জেলে মাছ শিকার করতে যেতে পারেনি বলে জানা গেছে। মাগুরা ॥ জেলায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শ্রমজীবী মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সকালে জমিতে কৃষিকাজ করতে গিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। এদিকে, পুরাতন কাপড়ের মার্কেট জমে উঠেছে।
×