ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭টি থাকার পর তৈরি হয়েছে নতুন ৩টি

কক্সবাজারে বন্ধ হয়নি মাদক কারখানা, হচ্ছে আরও

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২২

কক্সবাজারে বন্ধ হয়নি মাদক কারখানা, হচ্ছে আরও

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে সাড়ে ১২ কোটি টাকার মাদক ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। মিয়ানমারে ৩৭টি ইয়াবা কারখানা চালু থাকার পরও আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৩টি ক্রিস্টাল মেথ আইস কারাকানা। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশকে তাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত ইয়াবা কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না মাদক তৈরির কারখানা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক-সৌজন্য বৈঠক বা চা-চক্রের বৈঠক ইত্যাদি যতবার উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে বৈঠক বা সভা-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, ততবারই বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ইয়াবা প্রতিরোধে অনুরোধ জানিয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে। বন্ধ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে মিয়ানমার অভ্যন্তরে চালু থাকা ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো। পতাকা বৈঠকে ইয়াবা রোধকল্পে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ (বিজিপি) ওইসব কারখানা বন্ধ করবে বলে কথা দিয়ে থাকে ঠিকই, তবে বৈঠক থেকে ফিরলে তা আর কার্যকর করেনা মিয়ানমার। ৩৭টি ইয়াবা কারখানার পর এবার ৩টি ক্রিস্টাল মেথ আইস তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে। যেহেতু ৪০টি ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ তৈরির কারখানা মিয়ানমারে, সেহেতু মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরাই ইচ্ছে করলে তা রোধ করতে পারে। টেকনাফে সাড়ে ১২ কোটি টাকা মূল্যের আড়াই কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস জব্দ করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। তবে এ সময় কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। শুক্রবার ভোরে টেকনাফ সদর দরগাহ ছড়া মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন এলাকা থেকে এসব ভয়ঙ্কর মাদক আইস জব্দ করা হয়। কোস্ট গার্ড টেকনাফের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম নাঈম উল হকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করার সময় এক ব্যক্তিকে ব্যাগ হাতে ঝাউবনের দিকে আসতে দেখে তাকে থামার সঙ্কেত দিলে লোকটি হাতে থাকা ব্যাগটি ফেলে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা ব্যাগটি তল্লাশি করে ২ কেজি ৫০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করা হয়। বিশ্লেষকরা বলেছেন, মিয়ানমারে স্থাপিত ৩৭টি ইয়াবা ও ৩টি ক্রিস্টাল মেথ আইস তৈরির কারখানার মালিকানায় অংশীদার হচ্ছেন- দেশটির সেনা বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু উর্ধতন কর্মকর্তা। আর তাদের ওইসব কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের প্রধান মার্কেট হচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান পৌঁছানোর সময় পাহারা দিয়ে থাকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা। বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবার চালান জব্দের দরকার নেই। মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় হাঁটুর নিচে গুলি করতে হবে। এতে রোহিঙ্গা হোক-বা বাংলাদেশী বাসিন্দা হোক প্রাণ বাঁচাতে অথবা পঙ্গুত্ব বরণ করার ভয়ে কেউই ইয়াবার চালান আনতে যাবে না মিয়ানমারে। তখন ক্রেতা না পেয়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের ইয়াবা কারখানাগুলো অনায়াসে বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু কিছু অভিযানে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান জব্দ হয়ে থাকে, কিন্তু পাচারকারীরা পালিয়ে যায় কিভাবে? এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কোস্টগার্ডের ও বিজিবির উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর নিচে গুলি করে মাদক কারবারিদের পঙ্গু করে দিলে মাদক আনতে আর কেউ যাবে না সীমান্তের কাছে। তাই মাদক নির্মূল করতে হলে টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তেই নতুন ডিজাইনের অভিযান পরিচালনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবি টেকনাফ সদর মিঠাপানিরছড়ায় বসতঘরে তল্লাশি করে ১০ কোটি টাকা মূল্যের দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ একজন মাদক কারবারিকে আটক করেছে। ধৃত মাদক কারবারি মোঃ মুজিব টেকনাফ মিঠাপানিরছড়ার সোনার মিয়ার পুত্র। মাদকের চালান পৌঁছাতে প্রতিদিনই রুট ও কৌশল পাল্টাচ্ছে ইয়াবা কারবারিরা। নৌপথ ও স্থলপথ কোনটা বাদ নেই তাদের। যে রুট দিয়ে সুবিধা মনে হয়- সেই রাস্তায় দেশে ঢুকানো হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবার চালান। মিয়ানমার থেকে নৌপথের পরিবর্তে এখন স্থলপথে বেড়েছে ভয়ঙ্কর এই মাদকের চালান। টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের স্থলপথে ইয়াবার অহরহ চালান ঢুকেছে দেশে। বিশেষ করে আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারিরা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে আসার পর অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে মাদক কারবার। উখিয়ার ডেইল পাড়া ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে প্রথমে এখানেই জমা করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি ইয়াবা ডন শাহাজাহান বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার সিন্ডিকেটের কারবারিরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রেজু সীমান্তের করই বনিয়া পথে ইয়াবার চালান ঢুকাচ্ছে দেশে। স্থারীয়রা মনে করেন, ইয়াবা বন্ধ করতে হলে ডেইলপাড়া সীমান্তের চিহ্নিত কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এই কারবারিরা ইয়াবার চালান আনছে মিয়ানমার থেকে।
×