ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীর সমতল ভূমিতে চাষ হচ্ছে জগত বিখ্যাত দার্জিলিং এর “সাদকি” কমলা চাষ

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

নীলফামারীর সমতল ভূমিতে চাষ হচ্ছে জগত বিখ্যাত দার্জিলিং এর “সাদকি” কমলা চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ জগত বিখ্যাত বলে পরিচিত দার্জিলিং এর কমলা এবার সমতল ভুমিতে চাষ করে সফলতা নিয়ে এসেছে নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নের হাইস্কুল পাড়া গ্রামের নার্সারির মালিক এ আর লেবু মিয়া (৫৫)। তাঁর বাগানে ৬০টি গাছে এখন শোভা পাচ্ছে হলুদ ও সবুজ বর্ণের দার্জিলিং এর “সাদকি” কমলা। এসব কমলা আকারে যেমন বড়, তেমনি সুমিষ্ট। মৌসুস অনুযায়ী এই কমলার জনপ্রিয়তা এতো বেশী যে ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে লেবু মিয়ার বাগানে। দার্জিলিংয়ের কমলালেবু বলতে বোঝায়, মূলত দার্জিলিং পাহাড়ের কার্সিয়াং এবং মিরিক মহকুমাতে চাষ হওয়া কমলালেবু উৎপাদনকে। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর সামনে আর কোনো জায়গার কমলালেবু কখনোই পাত্তা পায়নি। পট পরিবর্তনে সেই দার্জিলিং এর বিখ্যাত কমলা চাষ এবং উৎপাদন বাংলাদেশের সমতল ভুমিতে জায়গা করে নিয়েছে। আজ শুক্রবার লেবু মিয়ার সাতে কথা বলে জানা যায, এক সময় তিনি ছিলেন ভুমিহীন। ২০০১ সালে এক বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। এরপর দিনে দিনে তাঁর নার্সারির প্রসার ঘটতে থাকে। বর্তমানে সাড়ে ১৩ বিঘা জমি কিনে নার্সারির পরিধি বৃদ্ধি করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে তিনি ভারত গিয়েছিলেন। সে সময় দার্জিলিং পাহাড়ের কার্সিয়াং থেকে দুটি সাদকি জাতের কমলার চারা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে এসেছিলেন এবং তা নার্সারীতে রোপণ করেন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে চারা তৈরির পর এখন পরিপূর্ণ ফল পেতে শুরু করেছেন ৬০টি গাছে।এসব গাছ থেকে নার্সারিতে বর্তমানে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩০ হাজার কমলার চারা। নার্সারিতে কমলার চারার পাশাপাশি আছে ৬০০ প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। বর্তমানে নার্সারিতে প্রতিদিন ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এক সময়ের ভুমিহীন লেবু মিয়া এখন বছরে আয় করেন কয়েক লাখ টাকা। এ বিষয়ে তিনি জানান প্রতিবছর খরচ বাদে নার্সারি থেকে তাঁর আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। বড় ছেলে এ আর হারুন। এই নার্সারিতে কাজ করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি দেখাশোনার কাজ করেন মেজো ছেলে এ আর মামুন। শুক্রবার সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেল থোকায় থোকায় ঝুলছে সাদকি মিষ্টি হলুদ রং এর কমলা। এ ছাড়া রয়েছে চায়না কমলা, মাল্টা, ত্বিন ফল, পেঁপে, মিষ্টি লেবু, তেঁতুল, আমলকিসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছও । বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতারা গাছের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন ছাদ বাগান সহ বাড়ির উঠনে বাগান করবেন বলে। বাগানের ব্যবস্থাপক লেবু মিয়ার মেজো ছেলে এ আর মামুন বলেন, বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের মাধ্যমে তাঁরা ফলের চারা সংগ্রহ করেন। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে বাগানে এসব চারা রোপণ করেন। বাগানের সাদকি কমলা খুবই সুমিষ্ট। অনেকেই এখন এই কমলার চারা সংগ্রহ করছেন। মামুন আরও জানান, কৃষি বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে কৃষি মন্ত্রনালয়ের বিশেষজ্ঞ সদস্য ড. হামিদুর রহমান সহ নীলফামারী জেলা প্রশাসন আমার বাগান পরিদর্শন করে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। আমাদের নার্সারী ও দার্জিলিং এর কমলা চাষের বিষয়টি মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক অবগত হয়েছেন। তিনি আমাদের মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা বলেন ও খোজ খবর নেন। মন্ত্রী আমাদের নার্সারী পরিদর্শন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অচিরেই তিনি আমাদের বাগান দেখতে আসবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নীলফামারী জেলার মাটি লেবুজাতীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। এখানে আবহাওয়া ও মাটি অনুকূলে থাকায় প্রচুর মাল্টা ও কমলার চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার বানিজ্যিক চাষে বেশী জোড় দিয়েছেন। দাজিংলিং এর এই সম্ভাবনাময় কমলার চাষ বানিজ্যিকভাবে দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের কৃষক। অন্যদিকে, পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিরাট ভুমিকা রাখবে।
×