ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরাবাস্তববাদ ॥ একটি আন্দোলন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

পরাবাস্তববাদ ॥ একটি আন্দোলন

পরাবাস্তববাদ ছিল একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপে বিকশিত হয়েছিল যেখানে শিল্পীরা অস্বস্তিকর, অযৌক্তিক দৃশ্যগুলো চিত্রিত করেছিলেন এবং অবচেতন মনের প্রকাশকে সচেতন মনের সমরূপ ভেবেছিলেন যা পরবর্তীতে ফ্রয়েডের তত্ত্বকে কাজে লাগায়। আলোচনায় সেই প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পরাবাস্তববাদের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বিস্ময়ের উপাদান, চেতনা এবং অবচেতনের মাঝে অপ্রত্যাশিত সংযোগ এবং ঘটনার অসংলগ্ন সমন্বয়। পরাবাস্তবতা বা সুরিয়ালিজম হলো স্বপ্ন ও জাগরণ বা বাস্তবতার মধ্যে যে বিরোধ তার একটি সমন্বয় চেষ্টা। এখানে এমন সব চিত্রকল্প সৃষ্টি করা হয় যা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। অনেকটা অবচেতন মনের প্রভাবে দেখা স্বপ্ন যার প্রতিটি উপাদানই বাস্তবিক, তবে অসঙ্গতিপূর্ণ। সেখানে চিন্তায় প্রবাহ যুক্তির পথে চলে না। কিন্তু একটা সময় এই স্বপ্নকে বাস্তবে সঙ্গে যুক্ত করতে হয়, একে বলা হয় পরাবাস্তবতা। ম্যাক্স আর্নস্ট, সালভাদর দালি ও পল ক্লে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর অর্থনৈতিক মন্দায় সমস্ত সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরিচিত সমাজ-ব্যবস্থার উপর যেন সকলের আস্থা চলে গিয়েছিল। ধনতান্ত্রিক সভ্যতায় সংস্কৃতির সঙ্কটে জীবন যতই অভ্যস্ত হয়ে গেল, ততই চেনা বাস্তব বিষয়ের তরুণ সংবেদনশীল মন ক্ষুব্ধ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে লাগল। তাই তারা বাস্তবের অতি ব্যবহৃত বহিরঙ্গকে চূর্ণ করে নৈরাজ্য চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে চাইলেন বাস্তবের পুনর্গঠন করতে এবং সঙ্গতিবোধের এক নতুন সূত্র সন্ধান করতে সেই সন্ধানের পরিণাম সুরিয়ালিজম। মানুষের চেতনায় সম্মুখের বাস্তব ছাড়াও আরও নানা ধরনের কর্মকা- সব সময় ক্রিয়াশীল। একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে যতখানি না বাস্তব নিয়ে ভাবে তার চেয়ে বেশি অবাস্তব, অবান্তর, অসম্ভব চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর কারণ মানুষ তার না পাওয়াটা তার চিন্তার ক্শুধা দিয়ে পরিপূর্ণ করে। আসলে মাটির মানুষ অনেক বেশি স্বাপ্নিক। মানুষ স্বপ্নে বিচরণ করে ক্লেদাক্ত জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে চায়। একজন বাস্তবের মানুষ যখন বাস্তবে থেকে অবাস্তব বা পরাবাস্তব চিন্তা করে তখন সেটি আর অবাস্তব থাকে না। কারণ এটি একটি বাস্তব মানুষের অনুষঙ্গ হয়ে যায় তখন। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, ইচ্ছা, সাধ, আহ্লাদ মানুষ স্বপ্নে পূরণ করতে সচেষ্ট বেশি। তাই এই অসম্ভব-বাস্তবতা এই পরাবাস্তবতা কখনও মিথ্যা নয় এটি ও বাস্তবের মত সত্য; আমরা এটাকে সত্য স্বপ্ন বলতে পারি। শিল্প সে কথাই বলতে চায় বিভিন্ন আঙ্গিকে। পরাবাস্তববাদ (ইংরেজী ঝঁৎৎবধষরংস) এ-মতবাদের মূলকথা অবচেতনমনের ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট ও আশ্চর্যকর সব রূপকল্পদ্বারা প্রকাশ করা। বিশ শতকের প্রথম থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এক শিল্পান্দোলনের নাম সুররিয়ালিজম বা পরাবাস্তববাদ। মূলত দাদাবাদ এর পর (উধফধরংস) থেকে এর উত্থান, মূল পুরুষ হিসেবে ছিলেন ফরাসী কবি-সমালােচক আঁদ্রে ব্রেত (অহফৎব ইৎবঃড়হ)। দাদাবাদীরা যেখানে চেয়েছিলেন প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধকে নস্যাৎ করে মানুষকে এমন একটি নান্দনিক দৃষ্টির অধিকারী করতে যার মাধ্যমে সে ভেদ করতে পারবে ভ-ামি ও রীতিনীতির বেড়াজাল, পৌঁছাতে পারবে বস্তুর অন্তর্নিহিত সত্যে; সেখানে পরাবাস্তববাদ আরও একধাপ এগিয়ে বলল, প্রকৃত সত্য কেবলমাত্র অবচেতনেই বিরাজ করে। পরাবাস্তববাদী শিল্পীর লক্ষ্য হলো তার কৌশলের মাধ্যমে সেই সত্যকে গভীর থেকে তুলে আনা। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ যেসব কবি ও শিল্পী পরাবাস্তববাদী প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন তারা হলেন শার্ল বোদলেয়ার (ঈযধৎষবং ইধঁফবষধরৎব), জাঁ আর্তুর রেবো এবং কঁত দ্য লত্রে (ঈড়সবঃ ফব খধঁঃৎবধসড়হঃ)। সুররিয়ালিজমের মূল কথা অবচেতন মনের ক্রিয়াকলাপকে উদ্ভট ও আশ্চর্যকর সব রূপকল্প দ্বারা প্রকাশ করা। কবিতায় ‘সুরিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তবতা’ বিংশ শতাব্দীর অভিনব সাহিত্য উপাদান। মানুষের মনের চেতন ও অচেতন অবস্থার উর্ধে যে একটি অবচেতন চেতনা বিরাজ করে সে অবচেতনের গহীন থেকে উঠে আসা বাস্তবের অধিক বাস্তব আপাত অবাস্তবই পরাবাস্তবতা। অবচেতন মনের ক্রিয়া কল্পনানির্ভর সাহিত্য হচ্ছে পরাবাস্তব সাহিত্য। ফরাসী সাহিত্যিক গিওম আপলেনিয়ের (১৮৮০-১৯১৮) ১৯১৭ সালে প্রথম ‘সুরিয়ালিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেন তার ‘টাইরেসিয়াসের স্তন’ নাটকে। সুতরাং সাহিত্য চক্র থেকেই ‘পরাবাস্তব’ অভিধাটির সূচনা। কিন্তু ইউরােপ বিশেষত প্যারিসের সাহিত্য থেকে চিত্রকলা, ভাস্কর্য ইত্যাদিতে ‘পরাবাস্তবতা’ সংক্রমিত হয়েছে। ফ্রান্সে পরাবাস্তবতার উৎসরণ ঘটলেও জার্মান ও ইংরেজী সাহিত্যের ধারাও একে সহায়তা করেছিল। কবিতার পরাবাস্তবতার সূচনায় রয়েছেন জঁ আতুর র‌্যাবোঁ (১৮৫৪-৯১), জেরার দ্য মেরভাল (১৮০৮-৫৫) প্রমুখ। প্রাথমিক পর্যায়ে পরাবাস্তববাদী কাব্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আঁদ্রে ব্রেত (১৮৯৬-১৯৬৬)। এ ধারার তিনি প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। ফ্রান্স থেকে পরাবাস্তবতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। সাহিত্যে প্রতীকীপন্থা বিশুদ্ধ বাস্তবতাকে ভেঙে-চুড়ে তছনছ করে দিয়েছিল এক সময়। তারপর ভবিষ্যত আলোচনা, সমালোচনা পার হয়ে শুরু হলো পরাবাস্তববাদের যাত্রা। শতাব্দীর সূচনায় সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার ‘নব্য মনোসমীক্ষণে’ তত্ত্ব প্রচার করেন। তার আবিষ্কারের ফলে পরাবাস্তবতার আহরণ কেন্দ্র উন্মােচিত হয়। মানুষের আন্তঃজীবন ও মনোজগতের প্রকাশ শিল্পে চিরকালই নিজস্ব স্থান দখল করেছে। পরাবাস্তববাদের ফলে তা আরো জাজ্বল্য সত্য হয়ে ধরা দিল। ফ্রয়েড মনের তিনটি স্তরের কথা বলেছিলেনÑ ইদ (ওফ) ইগো (ওমড়) এবং সুপার ইগো (ঝঁঢ়বৎ ঊমড়)। এই তিনটি স্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকলে মন হবে সুস্থ ও স্বাভাবিক। তার নিজের সঙ্গে ও পরিবেশের সঙ্গে থাকবে সুসম্পর্ক। অন্যথায় ব্যক্তি মনে জন্ম নেবে অসঙ্গতি। এই অসঙ্গতিই শিল্পী মনের কারুবাসনা রূপে বিকশিত হতে থাকে। পরাবাস্তবতার মূল প্রক্রিয়াকে তাই বলা যায় এক ‘সাইকোলজিকাল অটোমেটিজম। আর এই অটোমেটিজম সাহিত্যে জন্ম দেয় ‘অটোমেটিক রাইটিং’ এর। তাই তো অন্তরের স্বয়ংক্রিয় লেখনীকে বের করতে সুররিয়ালিস্টরা মাদকের আশ্রয় নিতে দ্বিধা করেননি। আরও একটু বিস্তৃত করে বললে, কেউ কেউ মনে করতে পারে যে পরাবাস্তববাদ কেবল আরেকটি শিল্প ফর্ম, এটি আসলে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা শিল্প, সাহিত্য এবং এমনকি রাজনীতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, এবং অনেক লোক বিশ্বাস করেছিল যে এই সংঘাতটি অত্যধিক যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা এবং মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর বস্তুবাদী মূল্যবোধের ফল। এই বিশ্বাসের শিল্পীরা দাদাবাদী হিসাবে পরিচিত ছিল এবং তারা বিশৃঙ্খলা এবং অযৌক্তিকতাকে গ্রহণ করেছিল। ১৯২০-এর দশকে ইউরোপে এই চিন্তার প্রক্রিয়া থেকে পরাবাস্তববাদের বিকাশ ঘটে। পরাবাস্তববাদ অচেতন আকাক্সক্ষার মনোবিশ্লেষণমূলক ধারণাকেও গ্রহণ করেছে, বা আমরা যা চাই তা আমরা জানি না। পরাবাস্তবতা আন্দোলন রাজনৈতিক ও শৈল্পিক সৃজনশীলতার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে অচেতন মনের গভীরে খনন করার প্রচেষ্টায় বিশৃঙ্খলা এবং অচেতন ইচ্ছার এই ধারণাগুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তারা বিশ্বাস করেছিল যে অত্যধিক যুক্তিবাদী চিন্তার এই প্রত্যাখ্যান উচ্চতর ধারণা এবং অভিব্যক্তির দিকে পরিচালিত করবে। পরাবাস্তবতাকে বাস্তবতা এবং কল্পনাকে একত্রিত করার একটি শৈল্পিক প্রচেষ্টা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। পরাবাস্তববাদীরা অবাস্তব বা উদ্ভট গল্প তৈরি করে সচেতন এবং অচেতন মনের দ্বন্দ্বগুলো অতিক্রম করতে চায়। আগেই বলা হয়েছে, আঁদ্রে ব্রেত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, পরাবাস্তববাদ ১৯২০-এর দশকে প্যারিসে একটি শৈল্পিক আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৪০-এর দশক পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। লেখক এবং দার্শনিক ব্রেত তার ‘দ্য ম্যানিফেস্টো অফ সাররিয়ালিজম’ প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে চালিত করেছিলেন, সেই সময়ে শিল্পকে যেভাবে বোঝা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি উপায় হিসেবে। পরাবাস্তববাদ মানুষকে আধ্যাত্মিক এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে মুক্ত করতে চেয়েছিল। এই শিল্পী এবং লেখকরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা ক্ষতি মেরামত করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বারপ্রান্তে ছিল এবং এই ধরনের আন্দোলন পরাবাস্তববাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। নাৎসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানের সময়, অনেক পরাবাস্তববাদী আমেরিকায় আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছিল। পরাবাস্তববাদ এখনও আজকের সাহিত্যের অনেক অংশে বিদ্যমান। পরাবাস্তবতাবাদী চিত্রকল্প, ধারণা বা কাব্যিক কৌশল ব্যবহার করে, লেখকরা সীমানা প্রসারিত করার, মনকে মুক্ত করার এবং পাঠকদের চিন্তা করার প্রচেষ্টা যোগান। পরাবাস্তববাদের ধারণা জটিল হলেও পরাবাস্তব সাহিত্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরাবাস্তববাদী সাহিত্যে বিপরীত চিত্র বা ধারণা থাকবে। এই কৌশলটি পাঠকদের নতুন সংযোগ তৈরি করতে এবং পাঠকের বাস্তবতাকে প্রসারিত করতে বা বাস্তবতা কি তা সম্পর্কে পাঠকের ধারণাকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তারা পাঠকদের সামাজিক প্রভাব থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার এবং ব্যক্তির মন উন্মুক্ত করার উপায় হিসাবে ফ্রয়েডীয় মুক্ত মেলামেশার ধারণাগুলোর দিকে আলোকপাত করে। পরাবাস্তববাদ পাঠককে গভীরভাবে চিন্তা করতে এবং অবচেতন অর্থ প্রকাশ করতে বাধ্য করার জন্য চিত্র এবং রূপক ব্যবহার করে। যা আগে বলা হয়েছিল, প্লটের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, পরাবাস্তববাদী লেখকরা পাঠকদের তাদের অচেতন মধ্যে খনন করতে এবং তারা যা খুঁজে পায় তা বিশ্লেষণ করতে বাধ্য করার জন্য চরিত্র, আবিষ্কার এবং চিত্রের উপর ফোকাস করেন। পরাবাস্তববাদ স্বপ্নের মতো এবং চমৎকার গল্পগুলো তৈরি করতে কাব্যিক শৈলীও ব্যবহার করে যা প্রায়শই যুক্তিকে অস্বীকার করে। রৈখিক প্লট এবং স্ট্রাকচার্ড সেটিংসের মতো সাধারণ প্রজাইক কাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিবর্তে, পরাবাস্তববাদ কাব্যিক কৌশল ব্যবহার করে, যেমন চিন্তায় লাফানো (মুক্ত মেলামেশা), বিমূর্ত ধারণা এবং অরৈখিক সময়রেখা। সাহিত্যের উদাহরণ স্টিফেন মাল্লারমে (১৮৪২-১৮৯৮) একজন ফরাসী কবি ছিলেন যা তার অস্পষ্ট এবং পরাবাস্তব লেখার শৈলীর জন্য পরিচিত। কবিতার একটি সংকলন, খবং চড়ল্কংরবং ফব ঝ. গধষষধৎসল্ক, দ্বারা পরাবাস্তববাদী আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত ও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাছাড়াও টিএস এলিয়টের কবিতাগুলো সমৃদ্ধ পরাবাস্তবতার প্রতীকে সমুজ্জ্বল। তার কবিতা ‘লাভ সং অফ জে আলফ্রড প্রুফ্রক’ এবং বিখ্যাত কবিতা ‘ওয়েস্ট ল্যান্ড’ পরাবাস্তব চিন্তা-চেতনাকে চমৎকারভাবে চিত্রায়িত করে। আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসিক জেমস জয়েস তার উপন্যাসে স্ট্রিম অফ কনশা¯েœস এবং পরাবাস্তবতার ব্যবহার খুবই দক্ষতার সঙ্গে করে গেছেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা অনেক লেখকের লেখায় পরাবাস্তবতা পাই যেগুলো হয়তো তিনি নিজে ব্যবহার করেননি স্বইচ্ছায়। আসলে বাস্তব জীবন কখনও পরাবাস্তবতাবিহীন হতে পারে না। পরাবাস্তবতা বাংলা সাহিত্যে অনেক চমৎকার ব্যঞ্জনা নিয়ে এসেছে এবং অনেক আগে থেকেই। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তা সচেতনভাবে প্রথম প্রয়োগ করেন কবি জীবনানন্দ দাশ। এরপর শামসুর রহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং জয় গোস্বামী এই তত্ত্বকে তাদের কবিতায় বিশেষভাবে ব্যবহার করেন।
×