ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানা অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাটোর ও বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ সময়ের প্রচারে সরগরম দুটি পৌরসভা। বিজয় নিশ্চিত করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীরা শক্তিশালী হওয়ায় নির্বাচনে জয় নিয়ে বাড়ি ফেরা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। এরপরেও নিজ নিজ জয়ের বিষয়ে আশাবাদী প্রার্থীরা। এদিকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা, হুমকি-ধমকির অভিযোগ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সরেজমিনে জানা যায়, এর আগে ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ও সীমানা সংক্রান্ত আইনী জটিলতার কারণে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ জানুয়ারি নাটোর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন হেভিওয়েট তিন প্রার্থী। দলীয় ও নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র উমা চৌধুরী জলি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ও কিংবদন্তি আওয়ামী লীগ নেতা বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর বিএনপির আহ্বায়কের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া শেখ এমদাদুল আল মামুন (নারিকেল গাছ মার্কা), আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সাজেদুল আলম খান চৌধুরী বুড়া চৌধুরী (মোবাইল মার্কা)। এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত মাহবুবল আলম হাতুড়ি মার্কায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে বাগাতিপাড়া পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্পাদিকা শাহীদা খাতুন, বিএনপির দলীয় পদ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শরিফুল ইসলাম আমিরুল ইসলাম (জগ মার্কা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মুয়মুর সুলতান (নারিকেল গাছ মার্কা) ও আমিরুল ইসলাম (মোবাইল মার্কা)। মামলা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাগাতিপাড়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে এই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকেই অদ্যাবধি এই পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নানা সমীকরণ, হিসাব নিকাশ। বিগত ৫ বছরে নাটোর পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন না হওয়ায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছে। এরমধ্যে প্রায় ২ বছর কেটেছে করোনার ভেতর। এই সময়টা তেমন উন্নয়ন হয়নি। নারদ নদের তীরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের কারণে নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। উন্নয়ন বাস্তবায়নে বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতার সুযোগগুলো কাজে লাগাতে চাইছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বুড়া চৌধুরী ও আল মামুন নাটোর পৌরসভার উন্নয়ন ও বর্তমান মেয়রের বড় বাজেটের তীব্র সমালোচনা করেন। দলীয় প্রার্থী উমা চৌধুরী জলির প্রচারে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অংশ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে প্রচারে বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মারপিটের অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেন পৌর বিএনপি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সাবেক মেয়র আল মামুন। সম্প্রতি তিনি ১০ দফা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রশাসন। কেন্দ্রে নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকলে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সঠিক নয়। দুই বছর করোনার কারণে উন্নয়নমূলক বাজেট খুব কম পেয়েছি। যার কারণে পুরো উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা বড় অঙ্কের টাকা পেয়েছি। আমরা আশা করছি আগামী ৫ বছরে নাটোরে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে পারব। স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ এমদাদুল হক আল মামুন জানান, আমার কর্মী সমর্থকদের প্রচারে বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও মারপিটের অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। বর্তমান মেয়র উমা চৌধুরী জলির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি (জলি) যে টাকার কথা বলছেন তা কি এখন দেখাতে পারবেন? এটা ভোটের একটা কৌশল মাত্র। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজেদুল আলম খান চৌধুরী জানান, বর্তমান উমা চৌধুরী জলি সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলতে পারতেন আমি পৌরসভার উন্নয়নের জন্য ৩,০৪০ কোটির বড় বাজেট নিয়ে এসেছি। কিন্তু তিনি তা করেননি। এটা কৗশল মাত্র। তবে হ্যাঁ, তিনি (জলি) ২ হাজার কোটি টাকার বেশি বাজেট পেশ করতে পারেন। জলি একজন ব্যর্থ মেয়র তিনি ধোঁকাবাজি করছেন বলে জানান তিনি। নাটোর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আছলাম হোসেন জানান, তফসিল ঘোষণার পর কোন সংসদ সদস্য কোন প্রকার মিটিং বা সভায় ভোট চাইতে পারবেন না। এটা করলে তারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবেন। এমন কোন অভিযোগ বা কোন প্রকার সংবাদ পাওয়া গেলে প্রার্থী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×