ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য তিন বছর পর উদ্ঘাটন

প্রকাশিত: ০১:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য তিন বছর পর উদ্ঘাটন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে বহুল আলোচিত স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য তিন বছর পর উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মাদক সেবনের আসরে পালাক্রমে ধর্ষণের পর তাকে খুন করেছে হত্যাকারীরা। পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ নিতে এবং স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিতে এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার বরাব মসজিদ মার্কেট এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৮), একই থানার ভান্নারা এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে মোঃ নাহিদ হোসেন (২৮) ও বরাব পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে মোঃ সুজন মিয়া (৪৬)। পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার দক্ষিণ ভান্নারা এলাকার কেয়াম উদ্দিনের মেয়ে স্বপ্নার (১৯) লাশ স্থানীয় হানিফ স্পিনিং মিলের পূর্ব পাশের বাউন্ডারী সংলগ্ন হাফেজ দেওয়ানের কাঠ বাগানের ভেতরে একটি গর্তে দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের চাচা আবুল হোসেন বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, কালিয়াকৈর থানা পুলিশ প্রায় ৩ মাসের অধিক সময় মামলাটির তদন্ত করে। কিন্তু কোন রহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই গাজীপুর জেলা কর্তৃক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মনির হোসেন মামলাটি প্রায় ৮ মাস তদন্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ায় মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান তদন্ত করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত মোহাম্মদ আলী, নাহিদ হোসেন ও মুজন মিয়াকে মঙ্গলবার ভোর রাতে কালিয়াকৈর থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করে। আগে সুজন ও মজিবর নামে দু’মাদক কারবারিকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করায় ভিকটিম স্বপ্না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে চট্টগ্রামের ওই মাদক কারবারির সঙ্গে ভিকটিম স্বপ্নার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করত স্বপ্না। কিন্তু স্বপ্নাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় চট্টগ্রামের উক্ত মাদক কারবারি। একপর্যায়ে পথের কাঁটা দূর করতে সুজন, মজিবর ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে চট্টগ্রামের ওই কারবারি বসে স্বপ্নাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বপ্নার সঙ্গে একত্রে বসে মাদক সেবন করে তারা। একপর্যায়ে মাদক সেবনের আসরে ভিকটিম স্বপ্নাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আসামিরা। পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ^াসরোধে স্বপ্নাকে খুন করে। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ আলী ও মোঃ নাহিদ হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। অপর আসামি সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর প্রেক্ষিতে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য ঘটনার প্রায় তিন বছর পর উন্মোচন হয়েছে।
×