ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবার দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জের দিকে নাসিক নির্বাচনে নানামুখী মেরুকরণ নিজ নিজ কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীরা

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা-হাতির

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে নৌকা-হাতির

শরীফুল ইসলাম ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন জমে উঠেছে। সকল প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচার জোরদার করার পাশাপাশি নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে নানামুখী মেরুকরণ হচ্ছে। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নৌকা ও হাতির মধ্যে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্য সারাদেশের মানুষের চোখ এখন নারায়ণগঞ্জের দিকে। নির্বাচনের আর মাত্র ২ দিন বাকি। তাই নাসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। বাসায় ফিরে পরের দিনের কর্মসূচী নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। এর ফলে তাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কে কার চেয়ে বেশি কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান জোরদার করবেন এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কৌশল প্রয়োগ করেই ব্যাংক ভোটের বাইরে থাকা ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। আর এ নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থন এবং প্রশাসনিক লোকজনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানামুখী সমীকরণ আলোচনায় আসছে। প্রার্থীদের মধ্যে কার পাল্লা ভারি তাও নির্ভর করছে এই সমীকরণের ওপর। এখন পর্যন্ত নাসিক নির্বাচনের পরিবেশ প্রশংসনীয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের লোকজন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে নাসিকের দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীই বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এটি একটি ইতিবাচক দিক বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। নাসিক নির্বাচনে এবার প্রচারযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত গণসংযোগ করার পাশাপাশি পল্টাপাল্টি বক্তব্যও রাখছেন। বিরামহীন এই নির্বাচনী প্রচারে নেমে কখনও কখনও মুখোমুখিও হয়ে পড়ছেন তারা। তবে কেউ কারো সঙ্গে কোন বৈরী আচরণ করছেন না। এর ফলে এখন পর্যন্ত নাসিক নির্বাচনে তেমন কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। রাজধানী ঢাকার অতি নিকটে অবস্থান হওয়ায় দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও নাসিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব পড়ে। মূলত এ কারণেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনটিকে গুরুত্বসহকারে নেয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই সিটির যে কোন নির্বাচনকেই খুবই গুরুত্বসহকারে নেয়। তবে এবার আওয়ামী লীগ দল থেকে সরাসরি প্রার্থী দিয়ে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি পরোক্ষভাবে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সরাসরি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট করলেও বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তবে নির্বাচন করায় তার দলীয় পদ স্থগিত রাখা হলেও বিএনপি হাইকমান্ডের পরামর্শেই তিনি নির্বাচন করছেন বলে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাই বলে বেড়াচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নাসিক নির্বাচনকে দলের জনপ্রিয়তার প্যারামিটার হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজ নিজ কৌশলে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শোডাউন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যের চেয়ে অপ্রকাশ্যে বেশি কাজ করছেন। এটিও দলটির একটি কৌশল বলে জানা যায়। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে সবসময় মতের মিল না হওয়া প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান প্রথম দিকে নীরব থাকলেও এখন প্রকাশ্যে আইভীর পক্ষে প্রচারে নেমেছে। তবে আইভী এ প্রচারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে সংসদ সদস্যরা কারো পক্ষে প্রচারে নামতে পারেন না। তাই আইভী শামীম ওসমানের নির্বাচনী প্রচারে নামার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নামলেও ওসমান পরিবারের কিছু লোক এ বিষয়ে নীরব। তারা তলে তলে আইভীর বিপক্ষে কাজ করছেন কি না এমন সন্দেহও করছেন কেউ কেউ। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নাসিক নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন এমন ইঙ্গিত পেয়ে ওসমান পরিবারের লোকজন এখন কৌশল পরিবর্তন করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলটির নেতা প্রথমদিকে আইভীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিলেও এখন নিচ্ছেন না। তবে জাতীয় পার্টির কিছু নেতা এখনও আইভীর পক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ছাড়াও আইভীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন বেশিরভাগ নারী ও নতুন ভোটাররা। এছাড়া পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে বিগত দুই দশক যারা আইভীর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন তারাও তার পক্ষে রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন কারণে যারা আইভীর প্রতি বিরাগভাজন হয়েছেন তারা এখন তার বিপক্ষে কাজ করছেন বলে জানা যায়। তারপরও ক্লিন ইমেজের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী অতীতের মতো এবারও নির্বাচিত হবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। অপরদিকে তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অংশ প্রকাশ্যে প্রচারে না নামলেও ভেতরে ভেতরে সর্বস্তরের নেতাকর্মীই একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। এতে ভাল সাড়াও পাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এছাড়া বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত ও হেফাজতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চুপেচাপে প্রতিটি ওয়ার্ডের নিজেদের সমর্থিত কাউন্সিলর ও মেয়র পদে তৈমুর আলম খন্দকারের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। বিশেষ করে বড় দুই দলের বাইরে থাকা ভাসমান ভোটারদের টার্গেট করে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। এছাড়া ভেতরে ভেতরে ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কৌশল সফল হলে তৈমুর আলম খন্দকারের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানায়। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মতামত থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে সেলিনা হায়াৎ আইভী একজন সাহসী নেতা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন। নাসিকের কোন মানুষ যে কোন সময় তার কাছে যেতে পারেন এবং তাদের মনের কথা বলতে পারেন। বিশেষ করে নারীদের জন্য তার দরজা সবসময় খোলা। তাই নারী ভোটারদের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয়। এর ওপর ভিত্তি করে ২০১১ এবং ২০১৬ সালে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। তবে এবার আইভীকে নৌকাবিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের একটি ক্ষুদ্র অংশের বিপক্ষেও লড়াই করতে হচ্ছে। আর বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকদের বেশিরভাগ ভোট যাবে তৈমুরের পক্ষে। এ পরিস্থিতিতে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নাসিক নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত মেয়রদের চেয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার বেশি জোরদার। বিশেষ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারী দল আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় মাঝে মধ্যে নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তারা কাউন্সিলর পদ নিয়ে বেশি সিরিয়াস থাকায় মেয়র পদে আইভীর পক্ষে তেমন কাজ করতে পারছে না। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভোটের সমীকরণ শেষ পর্যন্ত কি হয় তা কেউ বলতে পারছে না। অপরদিকে কাউন্সিলর পদে সরাসরি বিএনপি প্রার্থী না দিলেও তলে তলে প্রতিটি ওয়ার্ডেই তাদের পছন্দের প্রার্থী রয়েছে। তবে এক ওয়ার্ডে একাধিক পছন্দের প্রার্থী না থাকায় বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ভোট চাওয়ার সমান্তরালে মেয়র পদে তৈমুরের জন্যও ভোট চাচ্ছেন। এ কৌশল তাদের জন্য ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে বলে বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নির্দলীয় নির্বাচনে দেশের কোন সিটি কর্পোরেশনে প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেবার তিনি নিজ দলের শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে নাসিক মেয়র নির্বাচিত। এর পর ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপক্ষে মেয়র পদে লড়েন বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। কিন্তু দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপির পক্ষ থেকে দুপুর ১২টায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণা শোনে তৈমুর আলম খন্দকার হাউমাউ করে কাদেন এবং বাধ্য হয়ে ভোটের মাঠ ছেড়ে চলে আসেন। ভোট গণনা শেষে আইভী ৮০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন। এরপর থেকে বহুদিন বিএনপির কোন কার্যক্রমে অংশ নেননি তৈমুর আলম খন্দকার। যদিও এক সময় দলে সক্রিয় হয়ে যান। এবারের নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে সমঝোতা করেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তৈমুর আলম খন্দকার। এছাড়া আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থনও তার প্রতি রয়েছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে প্রথম দিকে পরোক্ষভাবে আইভীর বিপক্ষে স্থানীয় দলীয় এমপি শামীম ওসমান কাজ করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ পরিস্থিতিতে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলেন আইভী। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ কখনও কোন সন্ত্রাসী, গডফাদার, চাঁদাবাজকে গ্রহণ করেনি, করবেও না। নারায়ণগঞ্জে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এক পর্যায়ে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত পৌঁছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে শামীম ওসমান আইভীর পক্ষে প্রচারে নামেন। কিন্তু আইভী শামীম ওসমানের মাঠে নেমে প্রচারকে সন্দেহের চোখে দেখেন। সরাসরি বিরোধিতা না করে আইভী বলেন, কোন সংসদ সদস্য কারো পক্ষে প্রচারে নামলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। নির্বাচনের আর মাত্র ২ দিন বাকি থাকলেও পরস্পরবিরোধী প্রার্থীদের মধ্যে বাকযুদ্ধ এখনও বিরাজমান। নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাখেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার হয়রানির অভিযোগ তুলে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমার লোকজনের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। জবাবে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে মনগড়া অভিযোগ করছেন তিনি। নাসিক নির্বাচনে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনাল গঠন ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল ও আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মাধ্যমে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের নির্বাচনী বিরোধ সংক্রান্ত দরখাস্ত বা আপীল গ্রহণ ও শুনানি করে নিষ্পত্তি করা হবে। ইসির আইন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শাহীনুর আক্তার স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী বিরোধ সংক্রান্ত দরখাস্ত বা আপীল গ্রহণ, শুনানি ও নিষ্পত্তিতে নারায়ণগঞ্জের প্রথম আদালতের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এর সমন্বয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৮ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সব বিরোধ সংক্রান্ত শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন বা নির্বাচনী কার্যক্রম বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন ও প্রতিকার প্রার্থনা করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা যাবে। এ ধরনের কোন মামলা দায়ের করা হলে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়ের হওয়ার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায়ে কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে ওই ব্যক্তি রায় ঘোষণার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল দায়ের করতে পারবেন। এ ধরনের কোন আপীল দায়ের করা হলে নির্বাচন আপীল ট্রাইব্যুনাল আপীল দায়ের হওয়ার তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে।
×