ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের পানি পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। দুই দেশেই এবং বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারীর কারণে যে কাজ ব্যাহত অথবা স্থগিত ছিল। পদ্মার পানি পর্যবেক্ষণে ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল ১০ দিনব্যাপী পানি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে শনিবার থেকে। দলটি পদ্মার আড়াই হাজার ফুট উজানে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল পানি পর্যবেক্ষণ করছে ভারতের ফারাক্কার ভাটিতে গঙ্গায়। যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা ১০ দিন পর পর পানি প্রবাহের রেকর্ড প্রকাশ করবে। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হচ্ছে কি-না, সেই নিশ্চয়তা বিধানের জন্য প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১০ দিন ভিত্তিতে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ফারাক্কায় গঙ্গানদীর পানি প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়। তবে বাংলাদেশ পক্ষের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী পানির ন্যায্যা হিস্যা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত থেকে গেছে বর্ষাকাল বাদে অধিকাংশ সময়, যা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। ফলে বাংলাদেশের অংশে দিন দিন পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধিসহ খরা ও অনাবৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে বহুলাংশে। তবে এ বছর ঈশ্বরদীর পাকশীর পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানি প্রবাহিত হওয়ায় পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এর বাইরেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি, গঙ্গা ব্যারাজসহ কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়েছে, যা ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। ভারত কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বাঁধ এবং ব্যারাজ নির্মাণ করে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গঙ্গা ব্যারাজসহ অন্যান্য নদ-নদীর ক্ষেত্রে তা হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নন। তদুপরি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে তার চূড়ান্ত খারাপ সময় যাচ্ছে। মমতা শুধু তিস্তা চুক্তিতে বাগড়া দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বর্তমানে বেঁকে বসেছেন গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণেও। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। গঙ্গা চুক্তির সময় বাংলাদেশ ভারতকে গঙ্গা ব্যারাজ করার বিষয়টি অবহিত করলে সম্মত হয় উভয়পক্ষ। এটি নির্মিত হলে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গÑ উভয় অংশেই পানির প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজারের বরাতে জানা যায়, মমতা এখন গঙ্গা ব্যারাজেরও বিরোধিতা করছেন। ২০১৪ সালে দিল্লীকে ঢাকার তরফ থেকে এই প্রকল্পের সার সংক্ষেপ হস্তান্তর করা হলেও সাড়া মেলেনি অদ্যাবধি। অথচ গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই বাস্তবায়ন করতে হবে প্রকল্পটি। অবশ্য তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজের ব্যাপারে মমতাকে রাজি করানোর দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের, বাংলাদেশের নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেটিই দেখার বিষয়।
×