ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলবাড়ীর বারো মাসিয়া নদীর ওপর সাঁকোই ভরসা ৩০ হাজার মানুষের

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ১২ জানুয়ারি ২০২২

ফুলবাড়ীর বারো মাসিয়া নদীর ওপর সাঁকোই ভরসা ৩০ হাজার মানুষের

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ সেতু নেই, তাই বাঁশের সাঁকোই ভরসা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন এ সাঁকো দিয়ে।এটি ফুলবাড়ীর নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারো মাসিয়া নদীর ওপর নড়োবড়ো সাঁকোর অবস্থা। প্রতিদিন ছয়টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন বাঁশের সাঁকো দিয়ে । এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খুদে শিক্ষার্থী ও রোগীরা। দীর্ঘ দিনেও সেতু না হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর কেউ খোঁজ রাখেনি। আর দুর্ঘনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়াও এ অঞ্চলের কৃষিপর্ণ চাষাবাদ প্রচুর হলেও সময়মত যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকায় পাচ্ছে না ফসলের ন্যায্যমূল্য । সেখানে সেতু নিমার্ণ করা হলে পাল্টে যাবে ৩০ হাজার মানুষের জীবন যাত্রারমান । জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বারো মাসিয়া নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছে গ্রামের মানুষ। এই সাঁকো দিয়ে ছয়টি গ্রামের অর্ন্তত ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করছেন জীবন ঝুঁকি নিয়ে । সাঁেকার পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পশ্চিম কান্তাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাউকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চর গোরুকমন্ডপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ফয়জুল উলুম মাদ্রাসা, গোরুকমন্ডপ কমিউনিটি ক্লিনিক । পূর্ব পাশে রয়েছে পশ্চিম ফুলমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালাহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বালার হা আর্দশ স্কুল এন্ড কলেজ , নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ ও পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। দু’পান্তের গ্রামগুলোর যোগাযোগের সংযোগস্থল হওয়ায় এ সাঁকো দিয়ে হাজারও মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এতে হরহামেশাই ঘটে দুর্ঘটনা। রোগী থাকলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষদেরকে ভোটের সময় জন প্রতিনিধিরা সেতু নির্মানের আশ্বাস দিয়ে আসলেও তা বাস্তবায়ন করেনি । এমন অভিযোগ দু’পারে কান্তাপাড়া, ঝাউকুটি চরগোরুক , পশ্চিম ফুলমতি ,জামাকুটি ,কলাবাগা গ্রামে মানুষের । শুধু মাত্র একটি সেতুর কারনে ওই গ্রাম গুলোতে ছোয়া লাগেনি ডিজিটাল যুগের হাওয়া । ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভাবনা থাকলেও প্রধান বাঁধা এ বারো মাসিয়া ইন্দুর ঘাটের বাশেঁ সাঁেকা। নিজের চাহিদায়মতে চাঁদা সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়েছে বাঁেশর সাকোঁ । সে সাকোঁর দু’পারের মানুষের প্রধান ভরসা । শুকনো মৌসুমে হাসি খেলি লেখা পড়ার জন্য স্কুল কলেজ গামী ছাত্রছাত্রী পারা পাড় হলেও বর্ষা মৌসুমে লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটে তাদের। সময়মত পারা পাড় করতে না পারায় ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েন অনেক সময়। নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ আলী বলে, 'এ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। একবার পা পিচলে পড়ে আহত হয়েছি। এখন সাবধানে সাঁকোতে উঠে চলাচল করছি। এ খানে একটা ব্রিজ দিলে ভালোই হতো। পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মীর হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে চল্লিশ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন,অসুস্থদের অবস্থা বলার মতো নয়। বেশি সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়ে।জন প্রতিনিধিরা কথা দিয়ে ভোট নেন।ভোট পার হলে তারা আর খোঁজ রাখেন না। স্বেচ্ছায় সাঁেকা মেরামতকারী শাহাজামাল আলী জানান ৭ বছর ধরে বাঁেশর সাঁেকাটি প্রতিদিন মেরামত করে আসছি। এলাকার বাঁশ ও ধান সংগ্রহ করে সাঁেকাটি চলাচলের উপযোগি করে দেয় হয়। এ জন্য ধান মৌসুমে ওই নদীর পাড়ে মাইক বাজিয়ে হালখাতা করে কিছু টাকা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নেয়া হয়। উঠানো টাকা দিয়ে রশি গুনা অন্যান্য প্রয়োজনিয় জিনিষ পত্র ক্রয় করে সাঁেকা চালু রাখা হয়। নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গা সাঁেকা দিয়ে যাতায়াত করেন। তা ছাড়াও কৃষকদের পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাছেন আলী এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, বারোমাসিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ অতি প্রয়োজন। অনেক আগে থেকে চেষ্টা করা হ্েচ্ছ কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত কাগজপত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রনালয়ে গিয়ে সেতু নির্মানের চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আসিক ইকবাল রাজিব বলেন, বারো মাসিয়া নদীর ওপর ৩০মিটার সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে । বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×