ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজন্মকে রক্ষার দায় সবার ॥ নিষিদ্ধ কনটেন্টে আসক্তি

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১২ জানুয়ারি ২০২২

প্রজন্মকে রক্ষার দায় সবার ॥ নিষিদ্ধ কনটেন্টে আসক্তি

(গতকালের সম্পাদকীয় পাতার পর) অনলাইনের হাজারটা সুফল বিদ্যমান, কিন্তু গুটিকতক অপব্যবহারের কারণে অনেক সময়েই অস্বস্তিকর অনভিপ্রেত বাস্তবতা তৈরি হয়। তাই বলে মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার দাওয়াই দায়িত্বশীলরা দেবেন না। এর অপব্যবহার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, মানুষকে সতর্ক ও সচেতন করা যায় এবং পারিবারিক সম্প্রীতি ও মূল্যবোধ সুপ্রতিষ্ঠা ও প্রত্যাশিত সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেটিই এ সময়ের মূল ভাবনা। বাস্তব জীবন বনাম ভার্চুয়াল জগত সমাজবদ্ধতা ও সামাজিকতার জন্য মানুষ যুগে যুগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ঘরে রয়েছে পরিবার, বাইরে পুরো বিশ^ : ধারাবাহিকতা রেখে বললে বলতে হবে শিক্ষালয়, কর্মস্থল এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে সামাজিক মিলনের কথা। এক্ষেত্রে বিবিধ বিচিত্র সংগঠন তথা যূথবদ্ধতার কথাটিও বলা চাই। এখন পাঁচজন মানুষ কোথাও মিলিত হলে তাদের ভেতর আর আগের মতো আন্তরিক মানবসম্মত সংযোগ তৈরি হয় না। প্রত্যেকেই নিয়মিত বিরতিতে ফিরে যান ভার্চুয়াল জগতে। এটি সব বয়সের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। আমি নিজেই ঘরোয়া প্রীতিসমাবেশে দেখেছি, শিশু-কিশোর বয়সীরা নিজেদের মধ্যে গল্প না করে সবাই নিজের নিজের ট্যাব নিয়ে ব্যস্ত। দুজনে মিলে কোন অনলাইন গেম খেললেও এক ধরনের সামাজিকীকরণ ঘটে। এক্ষেত্রে সেটাও অনুপস্থিত। বড়রা একটু সাবধানী ও বিচক্ষণ বলেই তারা আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুকিং করে বা অন্য কোন কনটেন্টে মশগুল হয়। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। আমাদের এক বন্ধু তার প্রতিবেশীর পরিবারসহ ভ্রমণে বের হয়ে পেয়েছেন তিক্ত অভিজ্ঞতা। পাঁচ-ছয় ঘণ্টার ভ্রমণে ভদ্রমহিলা গাড়ির ভেতরে অন্যদের হাস্যকৌতুকে তেমন একটা যোগ দেননি। দীর্ঘ ভ্রমণে তার চোখ সারাক্ষণই ছিল মোবাইল ফোনের পর্দায়। এই যে বাস্তবে বসবাস করেও চারপাশকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অদৃশ্য জগতে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত থাকা, এটি কোন সুস্থতার লক্ষণ নয়। মহাব্যাধির অশনি সঙ্কেত। এ বিচ্ছিন্নতা মানুষকে পরস্পর থেকে দূরবর্তী করে তুলছে। ভার্চুয়াল জগতে মানুষ মন্তব্য করে কিংবা বাটন টিপে ইমো দিয়েই খালাস। বন্ধুর বিপদে সে কখনই সশরীরে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে না কিংবা কোন খুশির খবরে আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে না একটা ফোন করার মধ্য দিয়ে। লিখিত শব্দ বা ভাব প্রকাশের প্রতীক (ইমো) ক্রমান্বয়ে আগ্রাসী হয়ে উঠছে। মানুষের সান্নিধ্য, তার কণ্ঠস্বর, চোখে চোখ রেখে কথা বলার ভেতরে যে সজীবতা সপ্রাণতা সম্প্রীতি রয়েছে, তা শুধু মোবাইলে টাচ করে বা কিবোর্ডে আঙ্গুল টিপে শব্দ ডেলিভারি দিয়ে কখনই সম্ভব হতে পারে না। শাখের করাত ফেসবুক রীতিমতো মহাপ্রভাবশালী দানব হয়ে উঠেছে ফেসবুক। শুধু ফেসবুকের কুপ্রভাব নিয়ে লিখলে কমপক্ষে দুটো নিবন্ধ লিখতে হবে। তবে এর যে সুফল একেবারে নেই, তা বলা হচ্ছে না। বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া হারিয়ে যাওয়া বন্ধু ও স্বজনদের খোঁজ পেতে এবং সমমনা সমপেশা এবং সমবিষয়ে কৌতূহলী বন্ধু পেতেও এর জুড়ি নেই। তাই ফেসবুক হলো আজ ও আগামীর শাখের করাত। এটি যেতেও কাটে, আসতেও কাটে। ফেসবুক আসক্তির অপকারিতা নিয়ে হাজার শব্দ লেখাই যায়। সেদিকে না গিয়ে আমরা দু’কথায় বলতে পারি আজকের দিনে একজন কর্মপ্রাণ আধুনিক মানুষের ফেসবুক ব্যবহার করতেই হবে। এটি চমৎকার কাজেরও, যদি সঠিক নিয়মে সঠিক সময়ে এতে সক্রিয় থাকা যায় তবেই। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুধু ফেসবুককে নির্ভর করেই জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছেন। অবশ্য ফেসবুকেও থাকে ক্ষতিকর কনটেন্ট, যাতে আসক্তি হলে সর্বনাশ। ফেসবুক তথা অনলাইনের মোহময় প্রলোভনযুক্ত রকমারি হাতছানি থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় আত্মনিয়ন্ত্রণ। মানুষ অভ্যাসের দাস হয়ে উঠলে খারাপ। অভ্যাসকে বশে রাখাটাই বিচক্ষণতা। ফেসবুক ব্যবহার করেও সাইবার অপরাধীরা শিকার খুঁজে বেড়ায়, সমাজ ও রষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করে। তাই তাদের রোখা চাই, যে কোন মূল্যেই। বদলে যাওয়া জুয়ার ধরন এই তো সেদিনেরই কথা। ক্লাবকেন্দ্রিক ক্যাসিনোতে ধুন্ধুমার ছিল জুয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে দেশের ক্যাসিনোতে এখন আর প্রকাশ্যে চলে না জুয়া খেলা। তবে অনলাইনে চলা ক্যাসিনো জুয়ার আগ্রাসনের রাশ এখনো টানা যায়নি। দু’মাস আগে মফস্বলের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাক, রাজধানীর প্রসঙ্গ না হয় বাদই রাখলাম। অনলাইন জুয়ার নামে দেশের একটি জেলাতেই দিনে অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৫০ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের তথ্য পাওয়া গেছে, যে নম্বরগুলো থেকে অনলাইন জুয়ার টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই নম্বরগুলোর মধ্যে অন্তত ১৫টিতে দিনে ১০ লাখের ওপরে টাকা লেনদেন করছে জুয়াড়ি চক্র। পরে এই টাকা হুন্ডি বা অবৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাচার হচ্ছে বলে ধারণা সিআইডির। চক্রটি বিভিন্ন বড় লিগ টার্গেট করে অনলাইন জুয়ার আয়োজন করে। বেটিং সাইট বা ্এ্যাপসে যে কেউ লগিং এ্যাকাউন্ট খোলার পর একটি ই-ওয়ালেট পান। সেটিতে এ্যাকাউন্ট ওপেনকারী ব্যক্তিকে টাকা রিচার্জ করতে হয়। বেটিং সাইটে দেয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরে টাকা পাঠানোর পর এই ই-ওয়ালেটে টাকা যুক্ত হয়। ন্যূনতম ১ হাজার টাকা ই-ওয়ালেটে প্রবেশ করাতে হয়। এরপর এ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ব্যক্তি জুয়া খেলেন। এমন অবাক করা কৌশল রুখতে হলে কর্র্তৃপক্ষকে আরও স্মার্ট হতে হবে। অনলাইন প্রতারণার বিচিত্র ফাঁদ মানুষের পকেট থেকে টাকা বের করা খুব কঠিন কাজ। ধূর্ত প্রতারকরা নানা ফন্দি-ফিকির করে এই কঠিন কাজটিই সহজ করে ফেলে। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো এমন এক বাঁশির সুর তারা বাজায়, যাতে সম্মোহিত হয়ে তাদের অনুসরণ করে সাধারণ মানুষ। বলাবাহুল্য বাঁশির সেই সুরটি হচ্ছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লাভের, প্রলোভনের। মানুষ অর্থ ব্যয় করে পণ্য কিনতে চায়। সেই পণ্যটি যদি বাজারমূল্যের চেয়ে কমে পাওয়া যায়, তবে ক্রেতা তাতে আকৃষ্ট হবেই। কিংবা পণ্য কিনতে কখনও দ্বিগুণ, আবার কখনও তিনগুণ ক্যাশব্যাক অফার দিলে মানুষ চমকে যায়। শুভঙ্করের ফাঁকি ধরতে পারে না। ফলে সহজেই ফাঁদে পা দেয় এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়। প্রতারক রাঘব বোয়ালরা আইনের জালে ধরা পড়ার পর গ্রাহক বুঝতে পারে সে কিভাবে ঠকেছে। আমাদের দেশে এমন প্রতারক প্রতিষ্ঠান কিছুকাল পরপরই গজিয়ে ওঠে। বেশ ক’বছর খুব হাঁকডাক শোনা যায়। তারপর গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। মাঝখান থেকে গ্রাহকদের পকেট মারা যায়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলে আসছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি। আরেকটি অনলাইন প্রতারণার কথা তুলে ধরা যাক। রীতিমতো প্রতারণার অফিস খুলে বসেছিলেন এক ডজন নাইজিরিয়ান। রাজধানীর পল্লবীর একটি ভবনের এক ফ্লোরে ছিল তাদের অফিস, অন্য ফ্লোরে বাসা। ওই ভবনে তাদের একমাত্র নারী সহযোগী থাকতেন অন্য আরেকটি তলায়। এই মহিলা আবার বাংলাদেশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রীধারী হলেই যে মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না তার উদাহরণ তো আমাদের সমাজে কম নেই। রাহাত আরা খানম নামের ওই মহিলা অবশ্য নাইজিরীয় প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী প্রতারক হিসেবে ‘ফারজানা মহিউদ্দিন’ নাম গ্রহণ করেছিলেন। নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি ভুক্তভোগীদের বিদেশ থেকে আসা উপহার নেয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা জমা দিতে বলতেন। ওই অফিসের কাজ শুধু ফেসবুকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যাট করা। এভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার জাল বিছিয়ে বন্ধু তৈরি করে অভিনব পদ্ধতিতে দুই মাসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। অবশ্য বেশ পরে সিআইডি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে। সাইবার অপরাধ কমবে সাইবার ভুবন যতই বিস্তৃত হচ্ছে, আমাদের দেশের সাইবার অপরাধীরা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মূলত ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধই বেশি সংঘটিত হচ্ছে। প্রতারণার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে অর্থ হাতানোর নতুন মাধ্যম হয়ে উঠেছে সাইবার জগত। এইসব ডিজিটাল অপরাধীদের এখুনি রোখা না গেলে সামাজিক সঙ্কট বাড়বে। সেইসঙ্গে মানুষে মানুষে স্বাভাবিক সম্পর্কের ভেতর কদর্য সন্দেহ অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা বৃদ্ধি পেয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এখন নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কের কালে তুলে রাখা ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এটি সম্পর্কের অবসান হওয়া পুরুষের পক্ষ থেকে যেমন করা হচ্ছে, তেমনি হ্যাক করা ফেসবুক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও করা হচ্ছে। যা অগ্রহণযোগ্য। প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় এর অপব্যবহার হচ্ছে, সাইবার অপরাধ বেড়েই চলছে। সাইবার বুলিংও বাড়ছে। যার শিকার হচ্ছেন প্রধানত নারীরা। তবে সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যাচ্ছে ৮৫ ভাগ তরুণ অনলাইন বুলিংকে ( উত্ত্যক্ত-হয়রানি) মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখছেন। বর্তমানে সাইবার মনিটরিং ও সাইবার ইন্টেলিজেন্স, সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও সাইবার সাপোর্ট সেন্টার সক্রিয় রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপারের (সাইবার ইন্টেলিজেন্স) বক্তব্য থেকে সাম্প্রতিক সাইবার অপরাধের মাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তিনি জানান, প্রতারণা, হুমকি, হ্যাকিং, পর্নোগ্রাফি, আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগই বেশি। এসব অপরাধের অধিকাংশ ভুক্তভোগী হলেন নারী। তারা সাইবার পুলিশ সেন্টারের ই-মেইল, ফেসবুক অথবা ইমোতে ফোন করে অভিযোগগুলো দেন। সাইবার অপরাধ দমনে কর্তৃপক্ষ আগের চাইতে অনেক সজাগ ও সক্রিয়। তাই আমরা আশাবাদী যে সাইবার অপরাধ কমে আসবে। সুসংবাদ : কনটেন্ট ফিল্টারিং কনটেন্ট ফিল্টারিং (ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন) চালু করার জন্য কাজ চলমান। এই ফিল্টারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনে থাকা বিপথগামী কনটেন্ট বা যেসব কনটেন্ট বাংলাদেশের সংস্কৃতি, জীবনযাপন বিরোধী বা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক সেসব কনটেন্ট ফিল্টার বা ব্লক করতে পারবে সরকার। ফলে বাংলাদেশে বসে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা দেখতে পাবেন না এসব কনটেন্ট। শিশু থেকে বয়স্ক, সবার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্বে কনটেন্ট ফিল্টারিং প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এই কনটেন্ট ফিল্টারিং প্রকল্পের অর্ধেক অংশের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশের কাজ শেষ হবে কয়েক মাসের মধ্যেই। বাকি কাজ শেষ হলেই ইন্টারনেটে থাকা বিপথগামী কনটেন্ট মুছে ফেলার বড় ধরনের সক্ষমতা অর্জন করবে সরকার। এটি চালু হলে কী ধরনের সুবিধা হবে সে বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি চালু হলে সুবিধা হবে যে, ফেসবুক, টুইটার, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে যা আমরা ক্ষতিকর মনে করব সেটাকেই বন্ধ করতে পারব। এখন আমি সেন্ট্রালি যে ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করা দরকার সেগুলো আমি করতে পারি। এখন আমাকে আইআইজি বা অপারেটরের পেছনে ঘুরতে হয় না। এতে আমাদের একটি সুবিধা হয়েছে।’ আশার খবর হলো নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধ করা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বিপথগামী সাইট। আরও প্রায় ২০ হাজার বিপথগামী সাইট বন্ধে কাজ করছে সরকার। আলোর পথরেখা সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজের মানুষের জন্য কিছুটা ছাড় দেন, বাতায়ন পুরো বন্ধ রাখার পক্ষে নন। তাই ঢালাওভাবে পর্নোসাইট বন্ধ রাখার কথা বলা হয় না, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তার আধিপত্যের যুগে বাস্তবে সেটি হয়ত অসম্ভবও। তাই এমন প্রযুক্তি প্রয়োজন যাতে একই ডিভাইস থেকে একদিনে একের অধিক পর্নোসাইটে প্রবেশ রোধ করা যায়। এই সঙ্গে সাইটে থাকার সময় দৈর্ঘ্যরেও সংক্ষেপণ সম্ভব বলে আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। মোবাইল অতি সহজলভ্য হওয়ায় মোবইল সেটে সব ধরনের ভিডিও দেখার হিড়িক পড়ে গেছে। গৃহপরিচারিকারা ইংরেজী বুঝবেন এমনটি আশা করা যায় না। তবু তারা নিষিদ্ধ কনটেন্টের প্রলোভনে ইংরেজী পর্নো সাইটগুলোয়ও প্রবেশ করে বলে একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। সব ধরনের মোবাইল সেটে যদি এডাল্ট কনটেন্ট উপভোগের পর নোটিফিকেশন আসত, তবে ভোক্তা বা ফোন ব্যবহারকারী দর্শক নিজেও সংযত হওয়ার সুযোগ পেত। তেমন প্রযুক্তি একদিন হয়ত সহজলভ্য হবে। আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে এমন স্বেচ্ছাচার প্রত্যাশিত নয় যেটি সমাজের আর দশজনের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রবাদটি স্মরণ করা যেতে পারে অনলাইনের বিষময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য। অনলাইনে ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রতিরোধে এই ক্ষতির দিকগুলোকেই উপজীব্য করে আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরির ব্যবস্থা নেয়া। বলাবাহুল্য, এটি সম্ভব কেবলই নাট্যদৃশ্য রূপায়ণের মাধ্যমেই, যাতে থাকবে উপভোগ্য কৌতুক, গান এবং অন্যান্য বিষয়। পাঁচ-সাত মিনিটের ছোট ছোট এমন ভিডিও দেখলে দর্শকরা নিজেরাই বুঝতে পারবে তারা নিজের ও সমাজের কী ধরনের অপকার করে চলেছে। সবটারই সীমা ও পরিমিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। সীমা লঙ্ঘন করলেই খারাপ। তাই নিজের বদাভ্যাসের লাগাম টানতে এজাতীয় কৌশলী ভিডিও ক্যাম্পেন বিশেষ উপকারে আসতে পারে। তবে এর বাজেট কোথা থেকে আসবে সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। সবটাই সরকারের ঘাড়ে চাপানো অসমীচীন। মানুষের ভাল-মন্দ দুটি দিক আছে। অনলাইনেরও কি নেই? সামাজিক আন্দোলনই অনলাইন রাক্ষসের হাত থেকে আমাদের পরিত্রাণ ঘটাতে পারে। পরিবারের বড়দের এতে দায়িত্ব বিরাট। সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা সংগঠনের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারাও সময়ের এই অনিবার্য দায়িত্বপালন থেকে গা বাঁচাতে পারেন না। হতাশ হলে চলবে না। সমস্যা আছে, তার সমাধানও বের করা চাই। গৃহকর্মীরা রাত জেগে বিচিত্র বিনোদনের সন্ধানে অনলাইনের উন্মুক্ত প্রান্তরে ঢুঁ মারতে মারতে রাতজাগা নিয়ম করে ফেললে দিনে তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সার্ভিস পাওয়া যাবে না। এটি বাস্তবতা। আবার তার ফোনের নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব। তাহলে কী উপায়। একটা সমাজসেবাধর্মী টিম চাই যারা অনলাইনের কুফলতার দিক তুলে ধরে কাউন্সেলিং করতে বাড়ি বাড়ি যাবেন। পরিবারে সব সদস্যের জন্যই যে এটি জরুরী তা নয়। যার দরকার রয়েছে এবং যার দরকার নেইÑ দুই ধরনের সদস্যের সামনেই খোলামেলা আলোচনা হওয়াটাই জরুরী। এতে সব পক্ষই উপকৃত হবে। আমরা আশাবাদী। অনলাইনের সুফল পেতে তার প্রতিপক্ষ দানব ও রাক্ষসদের পরাজয় ঘটবেই। (সমাপ্ত) ১০ জানুয়ারি ২০২২ [email protected]
×