ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী শ্রমিক ও গৃহকর্মীদের চরম দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০০:১৯, ১১ জানুয়ারি ২০২২

নারী শ্রমিক ও গৃহকর্মীদের চরম দুর্ভোগ

করোনার উম্মত্ত সংক্রমণে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত, চরম বিপর্যয়ের সম্মুখ সমরে। কোথায় এর শেষ পরিণতি কেউই ধারণা করতে পারছে না। বহুল আক্রমিত এই ভাইরাসটির নিরাময় কিংবা প্রতিষেধক নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষক-বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা নিরলস কর্ম প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও সুনির্দিষ্ট কোন দিকনির্দেশনা আজ অবধি কুয়াশাচ্ছন্ন। সেই ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে শুরু হওয়া এই কোভিড-১৯ সর্বপ্রথম তার বহুল সংক্রমণ নিয়ে হানা দেয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। সেই অবধি চীন একাই লড়ে যাচ্ছিল সর্বগ্রাসী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে। তখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো করোনার একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বৃহত্তর এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো শঙ্কিত হলেও এর সম্প্রসারিত বিস্তার ইউরোপ আর আমেরিকা পর্যন্ত তার কালো থাবা বিস্তারে আরও বেশি সফল হবে তেমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে একেবারেই ছিল না বললেই চলে। কিন্তু চীন প্রথম থেকে বিচক্ষণতার সঙ্গে ভাইরাসটির ক্রমসম্প্রসারণের ব্যাপারে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। প্রথমেই সে যখন বুঝতে পারে মাত্রাতিরিক্ত ছোঁয়াছে এই ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে গেলে আক্রমণের আগে তাকে ঠেকাতে হবে। ভাবনার সুদৃঢ় শক্তিকে বাস্তবে কাজে লাগাতে তারা মোটেও সময় ক্ষেপণ করেনি। ফলে জরুরী ব্যবস্থায় উহান শহরকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। অবরুদ্ধতার কঠিন জালে উহান আটকা পড়ার পর পরই সর্বনাশা করোনা শুধু একটি শহরেই তার সংক্রমণ সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ২০২০ সালে নববর্ষের আগত সম্ভাবনাকে যে মাত্রায় বানচাল করে দেয় এই ভাইরাসটির দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর মারাত্মক সম্প্রসারিত ঝুঁকির কারণে তা সভ্যতার মধ্য গগনে আলোকিত বিশ্ব ভ্রমেও কল্পনায় আনতে ব্যর্থ হয়। এই মরণ ঘাতক সংক্রমণটি এখন দুনিয়াজোড়া তার আগ্রাসী আক্রমণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে আশঙ্কার শেষ পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। এখন ২০০টিরও বেশি দেশ এই ভাইরাসকে প্রতিনিয়তই মোকাবেলা করে স্বাস্থ্য এবং প্রাণ ঝুঁকিকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ততদিনে চীনের উহান শহর করোনা প্রভাব থেকে অনেকটা বেরিয়েও আসে। চীনে কিন্তু অন্য কোন অঞ্চলে এই ভাইরাস তার সর্বগ্রাসী রূপ দেখাতে পারেনি দেশটির উপস্থিত ও যথার্থ কর্মদক্ষতায়। পরবর্তীতে চীনের এই মডেল অন্য কোন দেশ অনুসরণ কিংবা আমলে নেয়ার প্রয়োজনই মনে করেনি। ফলে ভোগান্তির সর্বশেষ পর্যায়ে আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। রোগটি শুধু স্বাস্থ্য এবং প্রাণহানির সঙ্কটকে প্রবলতর করছে তা কিন্তু নয়, সবচাইতে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক দুর্বিপাকে ফেলে দিচ্ছে পৃথিবীর অসংখ্য দেশ আর অসহায় মানুষকে। বাংলাদেশও আজ চরম দুরবস্থায় বিপন্ন ক্রান্তিকাল পার করছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া প্রতি দিনের দিনমজুররা। যারা দিন এনে নিত্য খাবার জোগাড় করে। তাদের রুজি-রোজগার এক চরম অনিশ্চয়তার আবর্তে। সরকার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক নয় এইভাবে ঘরে বসে থাকলে মানুষের সুস্থ মানসিক বিকাশ রুদ্ধতার জালে আটকে যায়। সব থেকে বেশি তার মূল্যবান শ্রমশক্তিও নিঃশোষিত হতে সময় লাগবে না। পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। সমাজের পশ্চাৎপদ, অসহায় ও অবহেলিত নারীরা যখন তার কর্মের ক্ষেত্রকে আয়ত্তে এনে নিদেন পক্ষে প্রয়োজনীয় খরচ জোগায় সেখানে এতবড় দুর্বিপাকে তাদের শেষ পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। শুধু তাই নয় নিরাপত্তাহীনতার শৃঙ্খলে আটকানো নারীদের কর্মক্ষেত্রও তাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কর্মজীবী নারীরা যে মাত্রায় তাদের নাজুক জীবনটার ঝক্কি সামলানোর ব্যাপারটিও আমলে নিতে অক্ষম সেখানে আর যথার্থ শুভ সঙ্কেত কোথায় তা মালিক পক্ষ জানলেও কোন ব্যবস্থা নিতে সেভাবে কখনও দেখাও যায় না। তার মধ্যে যে বস্তি এলাকায় তাদের নিত্য বসবাস সেটাও যে কতখানি নিরাপদ আর বিধিসম্মত তা নিয়েও কারও কোন মাথাব্যথা নেই। এরই মধ্যে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়া শিল্প-কারখানাগুলোর দায়ভাগ এসে বর্তাবে নিরীহ, অসহায় এই সমস্ত শ্রমিকের ওপর। যার মধ্যে নারীরাই থাকে এগিয়ে। কোন ধরনের অর্জনের মধ্যে নয়। বিসর্জনের নারীদের বলি হওয়ার দুঃসহ কাহিনী সব কালে সব যুগে সভ্যতার সমৃদ্ধ উৎকর্ষতারও। তাই করোনার আক্রমণে সবাই দিশেহারা, বিপন্নতার শিকার হলেও নারীরা পড়বে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন দুর্দশায়। ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে অসহায় খেটে খাওয়া হতদরিদ্রের মাঝে। সরকারী, বেসরকারী, সম্পদশালী ও ব্যক্তিক উদ্যোগে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু চরম অস্থিরতার এই দুঃসময়ে ত্রাণ বিতরণ নিয়েও নারীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কারণ দুর্যোগের চরম ভয়াবহতায় নারী নির্যাতন এক সহিংস আক্রমণ যেন এক প্রকার সভ্যতার অলিখিত বিধি। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে নারীর ওপর হিংস্র আক্রমণ সময়ের এক নিষ্ঠুর ছোবল তার ওপর শ্রমিকরা প্রতি মুহূর্তে শঙ্কিত তাদের চাকরি হারানোর ভয়ে। যদিও সরকার থেকে পরামর্শ আসে অসহায় মানুষদের কর্মটি যেন তাদের হাতেই থাকে। এই মুহূর্তে মালিক পক্ষও আশ্বস্ত করছে বেতন-ভাতা থেকে আরম্ভ করে শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা প্রদানে তাদের সচেতন সহযোগিতার। যদি কাউকে চাকরি হারাতে হয় সেখানেও সামনের সারিতে থেকে যাবে এই অসহায়, বিপর্যস্ত নারী শ্রমিকরা। কারণ দুর্যোগের ভয়ঙ্কর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এই নারীরা। সময়ই জবাব দেবে কারা যথার্থভাবে সুরক্ষিত থাকবে কিংবা অন্যরা কোন দুর্গতির অসহনীয় পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করবে। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×