ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিটোজেনিক ডায়েটের ভাল-মন্দ

প্রকাশিত: ০০:১১, ১১ জানুয়ারি ২০২২

কিটোজেনিক ডায়েটের ভাল-মন্দ

কিটোজেনিক বলতে বুঝায় লো কার্ব ডায়েট। এর অর্থ হলো আপনি প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে বেশি ক্যালরি পাবেন এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে কম ক্যালরি পাবেন। কার্বোহাইড্রেট বা কার্ব জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে যা হজম করা সহজ যেমন সুগার, সোডা, প্যাস্ট্রি এবং সাদা রুটি। যখন আপনি দিনে ৫০ গ্রামের চেয়ে কম কার্ব খাবেন তখন আপনার শরীর থেকে ফুয়েল অর্থাৎ সুগার শেষ হয়ে যায়। এটা হতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। এরপর আপনার শরীর থেকে প্রোটিন ও ফ্যাট ভাঙ্গতে শুরু করবে শক্তির জন্য যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এই বিষয়টি কিটোসিস নামে পরিচিত। কিটোজেনিক ডায়েটের কার্যকারিতা : সাধারণত মানুষ কিটোজেনিক ডায়েট গ্রহণ করে ওজন কমানোর জন্য কিন্তু এটি কিছু মেডিক্যাল সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। যেমন এপিলেপসি বা মৃগি রোগের সমাধানে সহায়তা করতে পারে। কিটোসিস হৃদরোগী, কিছু ব্রেনের রোগে এবং একনি বা ব্রনের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনাকে এ বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে এজন্য যে কিটোজেনিক ডায়েট আপনার জন্য নিরাপদ কি না বিশেষ করে আপনার যদি টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে আপনাকে কিটোসিস সম্পর্কে অবশ্যই ভাবতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিটোজেনিক ডায়েট আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে প্রথম তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অন্যান্য খাবারের চেয়ে। এর কারণ হতে পারে এটি অধিক ক্যালরি গ্রহণ করে থাকে ফ্যাটকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করতে। এমনও হতে পারে অধিক প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার আপনাকে তৃপ্তি দেয় এবং এর ফলে আপনি কম খান। কিন্তু এটি এখনও প্রমাণিত হয়নি। ইনসুলিন এমন একটি হরমোন যা শরীরকে সুগার জ্বালানি বা ফুয়েল হিসাবে ব্যবহার করতে দেয় বা সুগারকে স্টোর বা সঞ্চয় করে রাখে। কিটোজেনিক ডায়েট সেই ফুয়েল বা জ¦ালানীগুলো বার্ন বা শেষ হতে দ্রুত সাহায্য করে। এর অর্থ হলো আপনার শরীরের কম ইনসুলিন দরকার বা আপনার শরীর কম ইনসুলিন তৈরী করে। এই লোয়ার লেভেল বা পরিমান কিছু ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে অথবা ক্যান্সার কোষের গতিকে ধীর করে। ফ্যাট সমৃদ্ধ একটি খাবার যা ভালো কোলস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে এবং খারাপ কোলস্টেরল কমিয়ে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ডিমের কথা বলা যায়। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে আপনার ভাল কোলস্টেরল বৃদ্ধি পাবে এবং খারাপ কোলস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার কিটোজেনিক ডায়েটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইনসুলিনের লোয়ার লেভেল বা পরিমাণ যা কিটোজেনিক ডায়েট থেকে সৃষ্ট সেটি আপনার শরীরকে অধিক কোলস্টেরল তৈরিতে বাধা দেয়। এর অর্থ হলো আপনার উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ফেইলর এবং আর্টারিতে ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের সঙ্গে চর্মের যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং কার্বোহাইড্রেট কম খেলে আপনি উপকৃত হতে পারেন। ইনসুলিন আপনার শরীর থেকে অন্যান্য হরমোন তৈরিতে প্রণোদনা দিতে পারে যা ব্রণের সৃষ্টি করতে পারে। তাই কিটোজেনিক ডায়েট খাবারের ফলে ইনসুলিন এর মাত্রা কমে যাওয়া একনি বা ব্রণ বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। কিটোসিস এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিস : লো কার্ব ডায়েট আপনার সুগারকে কমিয়ে রাখতে পারে অন্যান্য খাবারের চেয়ে। কিন্তু আপনার শরীর ফ্যাট জাতীয় খাবার বার্ন বা ভেঙ্গে ফেলে শক্তির জন্য। তখন এটি কিটোসিস কম্পাউন্ড তৈরি করে। যদি আপনার টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে তাহলে বেশি কিটোন আপনাকে অসুস্থ করতে পারে। তাই ডাক্তারের সহায়তা নিতে হবে। অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণ : কিটোজেনিক খাবার মৃগি রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া কিটোজেনিক ডায়েট এ্যালজাইমারস ডিজিজ, পারকিনসনস্ ডিজিজ এবং ঘুমের সমস্যায় সাহায্য করে। যখন আপনার শরীর ফ্যাট থেকে শক্তি উৎপাদন করে তখন আপনার শরীরের কিটোন ব্রেন সেল বা কোষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রার কারণে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। কিটোজেনিক ডায়েট ইনসুলিন এর পরিমাণ কমায় যা আমরা তৈরি করি বা প্রয়োজন হয়। এর ফলে কিটোজেনিক ডায়েট পরোক্ষভাবে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমের জন্য কাজ করে থাকে। একটি কথা সবার মনে রাখতে হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ এবং পুরোপুরি জ্ঞান না থাকলে অথবা আপনি বিষয়টি সম্পর্কে জানলেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন পদ্ধতি অনুসরণ অথবা ওষুধ সেবন করবেন না। যারা কিডনি রোগী তাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার এর মাত্রা নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হয়। কিডনি রোগীরা চাইলেই প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন না। তাই তাদেরকে ক্ষেত্রে কিটোজেনিক ডায়েটের পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিত। যাদের হার্টে ব্লক রয়েছে অথবা যারা করোনারি হৃদরোগী তাদের ক্ষেত্রেও মন চাইলে সব ধরনের ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করা যায় না। তাই হার্ট এবং কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে কিটোজেনিক ডায়েট সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭ ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স
×