ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড

ক্রাইস্টচার্চে হতাশায় মোড়ানো দিন

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১১ জানুয়ারি ২০২২

ক্রাইস্টচার্চে হতাশায় মোড়ানো দিন

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ভারত-পাকিস্তানের মতো পরাশক্তি গত এক দশকে যা পারেনি, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেটিই করে দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্টের নাম্বার ওয়ান নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে তুলে নিয়েছিল অবিস্মরণীয় এক জয়। পঞ্চম দিন পর্যন্ত ডমিনেট করে খেলা বিশ^ব্যাপী ছিল প্রশংসিত। পরের টেস্টেই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছে মুমিনুল হকের দল। স্বপ্ন এবং বাস্তবতার জমিনের যোজন ব্যবধান হারে হারে টের পাচ্ছে টাইগাররা। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজ ফয়সালার দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই হার চোখ রাঙাচ্ছে। প্রথম ইনিংসে কিউইদের ৬ উইকেটে করা ৫২১ রানের (ডিক্লেঃ) জবাবে মাত্র ১২৬ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আগের টেস্টেই প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেয়া পেসাররা এবার লেন্থ খুঁজে পেলেন না! আবার ব্ল্যাক ক্যাপস পেসারদের সামনে ব্যাটসম্যানদের মধুসূদনত্রাহি অবস্থা। যদিও নিউজিল্যান্ড সোমবার দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশকে ফলোঅন করানোর ঘোষণা দেয়নি। তবে প্রথম ইনিংসের এই লজ্জার পর মুমিনুলরা এখনও পিছিয়ে ৩৯৫ রানে। আজ তৃতীয় দিন থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে থাকা বৃষ্টিই কেবল বাঁচাতে পারে তাদের! ১ উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা নিউজিল্যান্ড আরও ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮.৫ ওভারেই আরও ১৭২ রান যোগ করে। যেখানে গল্পটা কেবলই লাথামের। ৯৯ রান নিয়ে নামা ডেভন কনওয়ে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১০৯ রান করে রানআউট হন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্টে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি! ৩৭৩ বলে ৩৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৫২ রান করে অকেশনাল মুমিনুলের বলে ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্রাইস্টচার্চের লোকাল বয় লাথাম। ক্যারিয়ারে এটি তার ১২তম সেঞ্চুরি (অধিনায়ক হিসেবে প্রথম), দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। হ্যাগলি ওভালে রেকর্ড সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের এটিই সর্বোচ্চ, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ২০২ রান করেছিলেন স্টিফেন ফ্লেমিং। ফ্লেমিংয়ের পর মাত্র দ্বিতীয় কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুটি আড়াইশ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন থমাস উইলিয়ামস ম্যাক্সওয়েল লাথাম। সফরকারীদের হয়ে দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। বিশাল রানের জবাব দিতে নেমে ইনিংসের একদম দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। ট্রেন্ট বোল্টের বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ৭ রান করা সাদমান। অভিষিক্ত ওপেনার নাঈম শেখ শূন্য হাতে তার পথ ধরেন পরের ওভারে। তিনি টিকেছেন কেবল ৫ বল। এর মধ্যে দুবার হতে পারতেন আউট। টিম সাউদির বাড়তি বাউন্সের বলে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বল নামাতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন কোন রান করতে না পারা এই বাঁহাতি। প্রথম টেস্টে দারুণ ব্যাট করে ফিফটি করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এবার তিনি ব্যর্থ। বোল্টের আউট স্যুইংয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। প্রথম টেস্টে দৃঢ়তার ছবি হয়ে থাকা অধিনায়ক মুমিনুল হকও এদিন করেন হতাশ। সাউদির বল একটু সামনের পায়ে পুশ করার চেষ্টায় লাইন মিস করে হয়ে যান বোল্ড। বাংলাদেশ অধিনায়কও খুলতে পারেননি রানের খাতা। ১১ রানেই পড়ে যায় ৪ উইকেট। চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে চা-বিরতির আগে কিছুটা প্রতিরোধ আসে লিটন দাস-ইয়াসির আলির ব্যাটে। চা-বিরতির পর ফিরেই ছন্দে থাকা লিটন দেন আত্মাহুতি। বোল্টের স্যুয়িংয়ে ড্রাইভ করতে উইকেটের পেছনে ধরা দেন ৮ রান করা লিটন। দুই সুইং বোলার সাউদি-বোল্ট তাদের প্রথম স্পেল শেষ করতে স্বস্তিতে নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েন ইয়াসির। দুজনেই ছিলেন সাবলীল। আসতে থাকে দ্রুত রান। ৬ষ্ঠ উইকেটে ৬০ রানের জুটির পর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সোহানকে ছাঁটেন সাউদি। সাউদির ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন ৬২ বলে ৪১ করা সোহান। ইয়াসির ছিলেন চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা নিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ২২ রানের আরেক জুটি আসে তার ব্যাটে। তাতে মিরাজের অবদান কেবল ৫। এই জুটিতেই দিন শেষ করার আশায় ছিল বাংলাদেশ। মিরাজকে আউট করার মধ্য দিয়ে টেস্টে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার বোল্ট। সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায় মিরাজের বিদায়ে। ৩৩ বলে ৫ মিরাজ বোল্টের দারুণ এক বলে হয়ে যান বোল্ড। টেল এন্ডারদের মধ্যে কিছুটা ব্যাট করতে জানা তাসকিন আহমেদ টেকেননি ৩ বলের বেশি। অযথা মারার চেষ্টায় ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় ২ রান করে। বাকিদের বিদায়ে এক প্রান্তে তখন একার লড়াইয়ে ইয়াসির। তার লড়াইও থামে যায় ফিফটির পর। টেস্টে প্রথম ফিফটি করা ইয়াসির কাইল জেমিসনের শিকার হন ৫৫ রান করে। পরের ওভারেই শরিফুলকে তুলে ইনিংস মুড়ে দেন বোল্ট। ৪১.২ ওভারে ১২৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটা যৌথভাবে তৃতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে ১০৮, ২০০৮ সালে ১১৩, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১২৬ রানের পাশে সোমবারের ইনিংসটি পেল জায়গা। ২০০৪ সালে ১২৬ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ দল খেলেছে ৫৪.৫ ওভার। ইনিংসের স্থায়িত্বের দিক থেকে সেটি ক্রাইস্টচার্চের ১২৬-এর চেয়ে ১৩.৩ ওভার বেশি। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে মুমিনুলরা সাউদি-বোল্টের গতি-সুইংকে তোয়াক্কা করেননি। এই ভয়ঙ্কর পেস জুটির বোলিং অস্ত্রকে ভোতা করে দিয়েছেন তারা। তবে ক্রাইস্টচার্চে এই দুজনেই হাতেই খুন হলো বাংলাদেশ।
×