ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ

ঘরের বাইরে মাস্ক বাধ্যতামূলক

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১১ জানুয়ারি ২০২২

ঘরের বাইরে মাস্ক বাধ্যতামূলক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছরের শুরু থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল করোনার সংক্রমণ। বছরের প্রথম দিন সংক্রমণের হার যেখানে ছিল ২.৪৩ শতাংশ সেখানে সোমবার সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ৮.৫৩। ফলে গত কয়েকদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। ১১ দফা বিধিনিষেধে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উন্মুক্ত স্থানে যে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ যে কোন ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ। স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিয়ে আরোপ করা বিধিনিষেধে প্রয়োজনে আইনপ্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রতিরোধে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৪ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আরোপিত বিধিনিষেধগুলো হলো দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে, রেস্তরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে, ১২ বছরের উর্ধে সকল ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোন সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে, ট্রেন, বাসা এবং লঞ্চের সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখ দেয়া সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ প্রয়োগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে, কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে এবং কোন এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রজ্ঞাপনে, সব সিনিয়র সচিব/সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং বিভাগীয় কমিশনারদের উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ২৪ মার্চ থেকে সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দফায় এই মেয়াদ বাড়িয়ে ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানে লকডাউন শিথিল করা হয়। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন নামে লকডাউনে ছিল পুরো দেশ। অর্থাৎ করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ১১ মাস দেশ কার্যত অচল ছিল। এর আগে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ডেল্টা ধরন সংক্রমণে উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার। ওই সময় শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল সব ধরনের সরকারী ও বেসরকারী অফিস আদালত, মার্কেট, শপিংমল। সাতদিনের ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয় ১৯ এপ্রিল। এ বিষয়ে ওই সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ ছিল বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ালে বর্তমান চেনটা ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে এবং সংক্রমণ নি¤œগামী হবে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধের সময় বাড়িয়ে সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ না কমায় এই মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় ৩ মে। মন্ত্রিপরিষদের নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওই বিধিনিষেধ বাড়ানো হয় ১৬ মে পর্যন্ত।
×