ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

নতুন দিনের বর্ণিল ফ্যাশন

প্রকাশিত: ০০:০১, ১০ জানুয়ারি ২০২২

নতুন দিনের বর্ণিল ফ্যাশন

কখন শুরু হবে নতুন বছর আর কখন তাকে বরণ করব এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা কম ছিল না সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ নানা সেক্টরে। সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে নতুন বছরের দশ দিন পেরিয়ে এলাম। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষে এখন শুধু এগিয়ে যাওয়ার নতুন স্বপ্ন। কি হতে চলেছে এই নতুন বছরে? করোনা মহামারীতে দেশের সব সেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যার মধ্যে ফ্যাশন হাউজও ছিল। দেড় বছরের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সদ্য সমাপ্ত বছরের আগস্ট মাস থেকে আবার তারা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। আবার শুরু করে নতুন করে স্বপ্ন বুনতে। মহামারীকালীন তাদের একমাত্র ভরসা ছিল অনলাইন শপ। শঙ্কা কাটিয়ে এখন সকল ফ্যাশন হাউজের শোরুম খোলা। পূর্বের ন্যায় ফিরে এসেছে তাদের ব্যস্ততা। বিক্রিও অনেক ভাল হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্যাশন হাউজের রয়েছে অনলাইন শপ। ডিজিটাল প্রযুক্তির এই সেবা তাদের আরও সমৃদ্ধ করছে। সদ্য সমাপ্ত বছরের ফ্যাশন ট্রেন্ডে যা ছিল: ফ্যাশন জগত থেকে গুমোট ভাব চলে গেছে গত বছরেই। অস্কার, কান চলচিত্র উৎসব, প্যারিস ফ্যাশন উইক, লন্ডন ফ্যাশন উইক এবং ভারতের ল্যাকমে ফ্যাশন উইকসহ নানা ধরনের উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব ফ্যাশনে ফিরে এসছে পুরনো ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্কৃতির মিশেলে দেশীয় ফ্যাশন হয়েছে সমৃদ্ধ। ২০২১ সালে ফ্যাশনে যুক্ত হয়েছে কিছু নতুন মাত্রা তার মধ্যে অন্যতম মাস্ক। এটি এখন ছোট থেকে বড় সবার ভ্রমণসঙ্গী। ফ্যাশন হাউজগুলো তৈরি করছে ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে মাস্ক। মহামারীর শুরুতে সবাই সার্জিক্যাল মাস্ক পরলেও বর্তমান তরুণ-তরুণীরা মাস্কের ক্ষেত্রে বেশ সচেতন। তাই মাস্ক সদ্য সমাপ্ত বছরে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। নানা রঙের, নানা বিচিত্র কারুকাজ করে বানানো হয়েছে মাস্কগুলো। সিল্ক, কটন, ভেলভেট নানা ফেব্রিকে বানানো হয়েছে এগুলো। অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল কটি: ফ্যাশন সচেতন নারীদের কাছে কটির জনপ্রিয়তা ২০২১ সালে এসে বেড়েছে। প্রতিদিনের অফিস লুক থেকে শুরু করে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আড্ডা কিংবা কেনাকাটার উদ্দেশ্যে শপিংমলে যাওয়া, সবকিছুর সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে যায় কটি। প্রায় সব ঋতুতেই ডিজাইনাররা হাল ফ্যাশনের অংশ করে তুলছেন কটিকে। কটিরও রয়েছে আবার নানা ধরন। কটির ডিজাইন সাধারণত ট্র্যাডিশনাল, ওয়েস্টার্ন ও কনটেম্পরারি ধাঁচের পাওয়া যায়। বর্তমানে লং কটি নারীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। ফ্যাশনে নতুনত্বের ছোয়া: ডেনিম কাপড়ের জনপ্রিয়তা ছিল কয়েক দশক আগে থেকেই । তবে গেল বছরে এটি ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। ডেনিম প্যান্টে কাটছাঁট দিয়েছে ট্রেন্ডি ধাঁচ। ডেনিমের শীতকালীন কোট, টপস বর্তমানে টিনএজদের পছন্দের শীর্ষে। সত্তর বা আশির দশকের ফ্যাশন নতুনভাবে ফিরে এসেছে একালে। ২০২১ সালের শুরু থেকেই টাইট জিন্সের চাহিদা থাকলেও বছরের মাঝামাঝিতে তার ধরন অনেকটাই বদলেছে। অর্থাৎ বেল বটম ও অনেক ঢিলেঢালা জিন্স প্যান্টের চল শুরু হয়েছে সেকালের মতো। ২০২১ সালে ছেলেদের ফ্যাশনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। যদিও আরামদায়ক পোশাকের প্রাধান্যই ছিল বেশি। গরমে গ্যাবার্ডিন প্যান্ট বেশি চলেছে। অফিসের লুকে সুতি ফুলহাতা শার্টের কদর ছিল। শীতের পোশাকে জ্যাকেটের পাশাপাশি রঙিন সোয়েটার চলেছে বেশি। ঈদ, পূজা বা বিয়ের মতো বিশেষ আয়োজনে ছেলেরা পরেছেন পাঞ্জাবি। তবে পাঞ্জাবিতে ভারি কোন কাজ ছিল না। যতটা সাধারণ রাখা যায়, সেদিকেই ছিল ঝোঁক। চুলের স্টাইলেও এসেছে পরিবর্তন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বছরের একটা বড় সময় ধরে অনেকে চুল বড় করেছেন। একাধিক লেয়ার করে চুল ছাটতে দেখা গেছে ছেলেদের। নারীরাও চুল নিয়ে ছিলেন বেশ যতœবান। বড় চুলের চেয়ে ছোট ও মাঝারি চুল এবং কালার হেয়ারে আসক্তি বেড়েছে নারীদের। নতুন বছরে সম্ভাব্য ফ্যাশন : বিগত তিন দশক ধরেই ফ্যাশন ট্রেন্ডে এসেছে পরিবর্তনের ছোয়া। প্রতিবছরই কিছু না কিছু নতুনত্ব সবার নজর কাড়ে। এ বছরের ফ্যাশনে কি কি পরিবর্তন দেখা যাবে এ নিয়ে ফ্যাশনপ্রেমীরা হয়ত কিছুটা চিন্তিত। যেহেতু সুবর্ণজয়ন্তীর মতো উৎসবের আমেজ দিয়ে নতুন বছরের শুরু তাই ফ্যাশনে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়। ওমিক্রনের প্রভাব কাটাতে পারলে ফ্যাশন হাউজের সাফল্যধারা বজায় থাকবে। চলছে শীতকাল। তাই শীত ফ্যাশনে রয়েছে নানা আয়োজন। পুরনো ধাঁচের অনেক পোশাকের মাঝে কিছু নতুন ট্রেন্ডের পোশাক তরুণ-তরুণীদের শীত নিবারণ ও ফ্যাশনের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। শীত এলেই জ্যাকেট কেনার ধুম পড়ে। আবার আলমারি ঘেঁটে পুরনো জ্যাকেট দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চলে। তবে মানুষ সব সময়ই পোশাকে নতুনত্ব খোঁজে। এ জন্য জ্যাকেটের অনুরূপ তৈরি করা শ্যাকেট এখন সবার কাছে প্রিয় হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশনেবল পোশাকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে শ্যাকেট। যে কোন শার্ট কিংবা টি-শার্টের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায় এ পোশাকটি। ঘরে ও বাইরে সমানতালে পরতে পারেন শ্যাকেট। আরাম লাগবে এবং ফ্যাশনও হবে। টাইট জিন্সের সঙ্গে শ্যাকেট পড়লে খুবই স্টাইলিস লাগবে। একই সঙ্গে শারীরিক গঠনও সুন্দর দেখাবে। ফিটিং জিন্স ছাড়া জেগিংসও পরতে পারেন। জিন্স, শু ও শ্যাকেট পরলে দুর্দান্ত দেখাবে আপনাকে। শীতের ফ্যাশনে শ্যাকেটের ব্যবহার এখন অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ ছাড়াও অভিনেতা ও অভিনেত্রীরাও ফ্যাশনে জুড়ে দিয়েছেন এই পোশাক। দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ছাড়াও ছোট-বড় শপিংমল ও অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এই পোশাক। ঢিলেঢালা শার্টে অনেক সময় পকেট থাকে না। তবে শ্যাকেটে পকেট থাকায় এর ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। শ্যাকেট সব বয়সের সঙ্গে মানানসই। শ্যাকেটের রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। বেল্ট বা ফিতা দেয়া শ্যাকেট, শর্ট শ্যাকেট, লং শ্যাকেট। এগুলো বিভিন্ন প্রিন্টেরও হয়। আবার এক রঙের শ্যাকেটও পাওয়া যায়। বর্তমানে টিনএজ ফ্যাশনে বৈচিত্র্যময় স্কার্ফের বেশ জনপ্রিয়তা। নতুন বছরে এর ব্যবহার আরও বাড়বে। ধর্মীয় অনুভূতি হোক বা রোদ ও ধূলাবালি থেকে রক্ষার জন্য এর কদর বেড়েই চলছে। অনেকে ওড়নার পরিবর্তে স্কার্ফ ব্যবহার করছেন। ফলে দেখতেও যেমন সুন্দর লাগে তেমনি চলাফেরায়ও স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। স্কার্ফের আকার হয় বিভিন্ন ধরনের। কিছুদিন আগেও চারকোনার ছোট ছোট স্কার্ফগুলোর ব্যবহার বেশি ছিল। বর্তমানে স্কার্ফগুলোর আকার বেড়েছে। বেশিরভাগ স্কার্ফের কাপড় হয় জর্জেট ও সিল্ক। তবে সুতি, উল, নেট নানা কাপড়ের স্কার্ফও পাওয়া যায়। জরি, এ্যাম্ব্রয়ডারি, চুমকি, লেস অথবা টারসেল দিয়ে এগুলোর ডিজাইন ও নকশা করা হয়। জিন্স প্যান্ট এবং ফতুয়া বা কুর্তির সঙ্গে মানানসই স্কার্ফ আপনাকে করে তুলবে অতুলনীয়। এখন যেহেতু শীতকাল তাই স্কার্ফের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। মোটা কাপরের স্কার্ফগুলো গলার সঙ্গে পেঁচিয়ে মাফলারের মতো ব্যবহার করা হয়। এতে উষ্ণতাও পাওয়া যায় এবং দেখতে বেশ দারুণ লাগে। শীতের তীব্রতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই ঢাকার রাস্তার দুই ধারে দেখা যায় শীত পোশাকের ফ্যান গাড়ি। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটলে পাঁচ মিনিট পর পর এই ফ্যান গাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এ গাড়ির পাশে যেসব ক্রেতা থাকে তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। গাড়ির এক ক্রেতা থেকে জানা যায় তার ভ্যানের সব পোশাক ভাল গার্মেন্টস থেকে তৈরি। তাহলে রাস্তার পাশে কম দামে বিক্রি হচ্ছে কেন? বললো ‘সব পোশাক ভালো গার্মেন্টস থেকে তৈরি।’ তাহলে রাস্তার পাশে কম দামে বিক্রি হচ্ছে কেন? ‘সব পোশাকেই অল্প অল্প খুত আছে যা সাধারণ মানুষ বুঝবে না।’ এ কারণে আপনি পোশাকটি কোথা থেকে কিনেছেন তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ন আপনাকে কতটা ফ্যাশনাবল লাগবে। ফ্যাশনাবল তরুন-তরুনীরা নিত্য-নতুন ফ্যাশনে নিজেকে আবিস্কার করতে চায়। এজন্যই ফ্যাশন ট্রেন্ডে আসে নতুন নতুন পোশাক । আশা করা যায় ২০২২ সালের ফ্যাশন হবে রঙিন। যেহেতু উতসবগুলো হবে প্রানবন্ত তাই পোশাকে থাকবে উজ্জ্বলতা। মানুষের নজর থাকবে জলমলে পোশাকের দিকে। এজন্য ফিরে আসতে পারে পোশাকে চুমকির কাজ। মানুষ এখন স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাককে প্রাধান্য দেয়। তাই নতুন বছরে ঢিলেঢালা ড্রেসের প্রাধান্য থাকবে।
×