মোঃ মামুন রশীদ ॥ ৫ বছর পর হ্যাগলি ওভালে টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। সেবার যতটা ভাল স্মৃতি নিয়ে নেমেছিল, এবার তারচেয়েও বড় স্বস্তি নিয়ে উজ্জীবিত হয়ে নামে টাইগাররা। কারণ মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে টেস্ট জয়ের অবিস্মরণীয় এক কীর্তি গড়ে ক্রাইস্টচার্চে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে নেমেছে তারা। কিন্তু প্রথম দিনই বাংলাদেশকে হতাশায় পুড়িয়েছেন স্বাগতিক ব্যাটাররা। সিরিজ বাঁচাতে জয়ের বিকল্প নেই যে ম্যাচে সেই ম্যাচের প্রথম দিন মাত্র ৩ ব্যাটার ব্যাট করতেই ১ উইকেটে ৩৪৯ রানের বিশাল এক সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে কিউইরা। অধিনায়ক হিসেবে টম লাথাম চরম ব্যর্থতায় সমালোচিত ছিলেন। তিনি শুধু ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম অর্ধশতকই করেননি সেটাকে তিন অঙ্কে রূপ দিয়ে ১৮৬ রানে অপরাজিত। এখন ডাবল সেঞ্চুরির আশায় আজ নামবেন তিনি। আর ন্যূনতম ড্রয়ের পরিকল্পনায় অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকেও বাদ রেখে নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ১৫ বছর পর পঞ্চ পা-বের কেউ নেই দলে, সেই দলটি প্রথম দিন কিউইদের মাত্র একটি উইকেট তুলে নিয়ে হতাশায় মাঠ ছেড়েছে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগের দিন কুঁচকিতে টান লেগেছিল মুশফিকের। তাকে নিয়ে আর নামাই হয়নি বাংলাদেশের। তাই বে ওভালের জয়ী একাদশে ২ পরিবর্তন। দেশের ১০০তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ক্যাপ পান বাঁহাতি ওপেনার নাইম শেখ। আর মুশফিকের বদলি হিসেবে নুরুল হাসান সোহান নেমে কিপিং গ্লাভস নিয়েছেন লিটন দাসের হাত থেকে। সাড়ে ৩ বছর পর গত নবেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ইয়াসির রাব্বির কনকাসন সাব হিসেবে নেমেছিলেন সোহান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটও করেন। এবার শুরুর একাদশেই আছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। কিউইরা শুধু রাচিন রবীন্দ্রকে বাদ দিয়ে ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে নামে। আগের দিনই দুই দল জানিয়েছিল টস জিতলেই বোলিংয়ের। কারণ হ্যাগলি ওভালে সবুজ ঘাসের উইকেটে পেসাররা প্রথম দিন দারুণ সুবিধা পাবেন। গতি উঠবে এবং বাউন্স থাকবে। এবারও মুমিনুল হক টস জিতলেন, কিন্তু সুবিধা করতে পারলেন না পেসাররা। শুরুটা তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম করেছেন। আর লাথাম প্রথম থেকেই সাবলীলভাবে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ইয়াং ছিলেন অনেকটাই সতর্ক এবং ধীরস্থির। আগের টেস্টে নায়ক এবাদত হোসেন নবম ওভারে এসেই দুইবার লাথামকে এলবিডব্লিউ করেন। কিন্তু আম্পায়ারের দেয়া আউট বাতিল হয়ে যায়, রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লাথাম। এছাড়া আর কোন সুযোগ সৃষ্টি করেননি তিনি। দু’জন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই রান করেছেন। ২৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৯২ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় কিউইরা। ওয়ানডে মেজাজে থাকা লাথাম ক্যারিয়ারের ২৩তম ও অধিনায়ক হিসেবে প্রথম অর্ধশতক পেয়েছেন মাত্র ৬৫ বলে।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই সুযোগ তৈরি করেছিলেন এবাদত। ওভার থ্রো থেকে লাঞ্চ বিরতির পর দুই দফায় ২ বল থেকে এসেছে ১২ রান! প্রথমবার ক্যাচ তুলে দেওয়া ইয়াং বেঁচে যান দ্বিতীয় স্লিপে থাকা লিটন দাস ঝাঁপ দিয়ে ক্যাচ নিতে না পারা এবং পরে সেই বলটি ডি ফাইন লেগে গিয়ে কুড়িয়ে নুরুল হাসান সোহান থ্রো করার পর তা নন স্ট্রাইক এন্ডে থাকা বোলার এবাদতকে ফাঁকি দিয়ে সীমানা অতিক্রম করে। ফলে দৌড়ে ৩ রানের সঙ্গে ওভার থ্রোর ৪ রান মিলিয়ে ৭ পান আউট থেকে বাঁচা ইয়াং। এবাদতের পরবর্তী ওভারেও আরেক ওভারথ্রোর কারণে ইয়াং আবার পান ৫ রান। আর তাই ভাগ্যবান ইয়াং করে ফেলেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতক। দু’জনের জুটি হয় ১০০ রানের। এরপরই অবশ্য তাকে নাইমের ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল।
১১৪ বলে ৫ চারে ৫৪ রানে আউট হন তিনি। ১৪৮ রানের জুটি ভাঙ্গে। ২০১২ সালের পর এই প্রথম কিউই ভূমিতে ওপেনিং জুটিতে শতরান করেছেন তারা। সেবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও মার্টিন গাপটিল শতরানের জুটি গড়েন। এরপর লাথাম-ডেভন কনওয়ে জুটি আক্ষেপ বাড়িয়েছেন আবার। তারা আরও ৫৪ রান যোগ করলে ১ উইকেটে ২০২ রানে চা বিরতিতে যায় কিউইরা। দিনের শেষ সেশনটাও বাংলাদেশী বোলারদের জন্য হতাশার, কোন সুযোগই দেননি লাথাম-কনওয়ে। ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি পান লাথাম। অধিনায়ক হিসেবে ষষ্ঠ টেস্টে এসে প্রথম অর্ধশতক পেয়েই তিনি সেঞ্চুরিতে রূপ দেন। এখন দিনশেষে ২৭৮ বলে ২৮ চারে ১৮৬ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির পথে তিনি। কনওয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়ে ১ রানের জন্য শতক পূর্ণ করতে পারেননি। অপরাজিত আছেন তিনি ১৪৮ বলে ১০ চার, ১ ছক্কায় ৯৯ রানে। হ্যাগলি ওভালে গড় দলীয় সংগ্রহই যেখানে ২৮২, কিউইরা সেখানে প্রথম দিনেই তুলেছে ১ উইকেটে ৩৪৯। নিশ্চিতভাবেই বিশাল এক সংগ্রহ গড়তে চলেছে তারা।