ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছয়মাসের মধ্যে নির্বাচন করে দায়িত্ব হস্তান্তর ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

প্রশাসক নিয়োগে বারভিডায় অসন্তোষ

প্রকাশিত: ২২:১৬, ১০ জানুয়ারি ২০২২

প্রশাসক নিয়োগে বারভিডায় অসন্তোষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রশাসক নিয়োগ করায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে ব্যবহৃত জাপানী গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডায়। আগামী ছয় মাসের জন্য উপসচিব ছাদেক আহমেদকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বারভিডায় নির্বাচন দেয়া হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) ও ডাইরেক্টর ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডিটিও) মোঃ হাফিজুর রহমান। এদিকে, সমস্যা নিষ্পত্তি না করে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় এ খাতের সঙ্কট আরও বাড়ল মনে করা হচ্ছে। সামনে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির মাধ্যমে এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, আমদানি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত গাড়ি পৌঁছে দিতে বন্দর, কাস্টমস, রেজিস্ট্রেশন ও ইন্স্যুরেন্সসহ একাধিক ধাপ পার হতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। শুল্ককর ও ভ্যাট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বাজেট আলোচনায় একাধিকবার মিলিত হউন মালিকরা। সরকারের মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতরের সঙ্গে শুল্ককর পলিসি নিয়ে এ্যাডভোকেসি করতে হয়। এ অবস্থায় এ খাতে প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় দেশের ব্যবহৃত গাড়ির বাজার নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য আর কেউ থাকল না। জানা গেছে, সংঘস্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন করা সম্পন্ন না হলে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সম্প্রতি বারভিডার বার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ সদস্যরা প্রশাসক নিয়োগ না করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে। কিন্তু একজন সদস্যের ভোটার হওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার মুখে পুরো খাতটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। বারভিডার সংঘস্মারক ও সংঘবিধিতে বলা হয়েছে- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচন বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তক্রমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়বৃদ্ধির জন্য পরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের নিকট আবেদন করা যাবে। পরিচালক বাণিজ্য সংগঠন কর্তৃক ওই সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলে তৎকর্তৃক বর্ধিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে। এ কারণে নির্বাচন করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রায় দেড় বছর আগে বারভিডার স্বার্থের পরিপন্থী কাজ এবং সংগঠনের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণের অভিযোগ উঠে সেই সময়ের সহ-সভাপতি এসএম আনোয়ার সাদাতের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে গণমাধ্যম, ফেসবুক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারভিডার বিদ্যমান কমিটির বিরুদ্ধে মনগড়া, মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচারে লিপ্ত হন। এছাড়া কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে টেনে আক্রমণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় সংগঠনে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে প্রথমে তাকে সাবধান করা হয়। এতেও তিনি সতর্ক না হওয়ায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে সাময়িক বহিষ্কার এবং পরবর্তীতে তাকে বহিষ্কারের আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় বারভিডা। বিষয়টি তিনি আগেভাগে টের পেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। এরপর নির্বাচন সামনে রেখে এবার ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণে মহামান্য হাইকোর্টে আনোয়ার সাদাত রিট পিটিশন দাখিল করেন। বেসরকারীখাতের কোন সংগঠনের বিরুদ্ধে রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণবেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দিয়ে এক আদেশ প্রদান করেন। ওই আদেশে মহামান্য আপীল বিভাগ দুই সপ্তাহের মধ্যে রিট দায়েরকারীর বিষয়টি আইন ও বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তিকরণের জন্য পরিচালক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে (ডিটিও) নির্দেশ প্রদান করেন। একইসঙ্গে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন পুনর্তফশিলীকরণের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু মহামান্য আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ না করে বারভিডায় প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে করে সংগঠনটির সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, সংঘস্মারক ও সংঘবিধি মেনে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব পালন করে আসছিল। এমন এক সময়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হলো, যখন আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছিলাম। ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ হলো অথচ সামনে বাজেট। শুল্ককর, ভ্যাট, আমদানি, বন্দর ও রেজিস্ট্রেশনসহ এ খাতটির বিষয়গুলো অনেক জটিল। গাড়ি আমদানি সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন পলিসিগত বিষয়ের বৈঠকে বারভিডার সদস্যদের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। এনবিআরের সঙ্গে বিভিন্ন পলিসিগত বিষয়ে এ্যাডভোকেসি করতে হয় বারভিডাকে। তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে নতুন সঙ্কট তৈরি হতে পারে ব্যবহৃত গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন সম্পন্ন করে নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হউক।
×