ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার আওতায় ৪৫.৬৮ শতাংশ পরিবার

এখনও কাঁচা-ঝুলন্ত ল্যাট্রিন আছে নগরাঞ্চলে

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ৯ জানুয়ারি ২০২২

এখনও কাঁচা-ঝুলন্ত ল্যাট্রিন আছে নগরাঞ্চলে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশের নগরাঞ্চলে নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার আওতায় এসেছে ৪৫.৬৮ শতাংশ পরিবার। বাকি ৫৫ শতাংশ পরিবার নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে। এখনও কাঁচা-ঝুলন্ত ল্যাট্রিন রয়েছে নগরাঞ্চলে। সংখ্যায় কম হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য নগরীতে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ পরিবার খোলা মাঠ ব্যবহার করে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে কোন পরিবার ল্যাট্রিন হিসেবে খোলা মাঠ ব্যবহার করে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, নগরীতে পানি নিরোধক (ওয়াটার সিলবিহীন) পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ পরিবার। অন্যদিকে পানি নিরোধক নয় এমন পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ২৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও নগরাঞ্চলে গড়ে কাঁচা, ঝুলন্ত স্থায়ী ল্যাট্রিন ব্যবহার করে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য মহানগরে এ হার ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে কোন পরিবার ল্যাট্রিন হিসেবে খোলা মাঠ ব্যবহার করে না। ঢাকা ও চট্টাগ্রম মহানগর ছাড়া অন্য নগরে এর হার শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে গড় হার শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ (এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীকে হিসাবের আওতায় আনা হয়েছে)। বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, নগরাঞ্চলের প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার অন্য পরিবারের সঙ্গে তাদের ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। নগরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে মাত্র ৪৬ শতাংশ পরিবার। বাকি ২৪ শতাংশ পরিবার পানি নিরোধক এবং ২৯ শতাংশ পানি নিরোধক নয় এমন পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী পরিবারে পোকামাকড় বা অন্য বাহকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। নগরাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করার কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। নগরাঞ্চলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও পানির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষ্য করা যায়। নগরাঞ্চলের ৮৬ শতাংশ পরিবার টয়লেটের পাশে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখে এবং ৯০ শতাংশ পরিবার হাত ধোয়ার স্থানে পানির ব্যবস্থা রাখে। তবে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার বিচারে শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোতে হাত ধোয়ার উপকরণের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এর হার ৬৪ শতাংশ এবং অন্য নগর এলাকায় ৭৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশের নগর এলাকার জনগণ পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার অভাবে ডায়রিয়া, কৃমি সংক্রমণ ও উদরাময় রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। নিম্নমানের পয়ঃব্যবস্থাপনা যেমন- পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ও হাত না ধোয়ার কারণে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ফলে শহর এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ অবস্থায় নগরাঞ্চলের নিম্নআয়ের জনগণের পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে ধারণা পাওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে। জরিপে আরও দেখা গেছে, সরকারী ব্যবস্থাপনায় খাবার পানির উৎসের হার ৬৪ শতাংশ। গড়ে ৩৪ শতাংশ নগরাঞ্চলের পরিবার খাবার পানির উৎস হিসেবে নলকূপের পানি ব্যবহার করে। ২১ শতাংশ পরিবারের সদস্যরা পুকুর ও নদী-নালার পানি পান করেন। ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ পরিবার দৈনন্দিন কাজে পুকুর ও নদী-নালার পানি ব্যবহার করে। মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ মানুষ বোতলজাত পানি পান করে। ৫৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরিবার নিজস্ব টিউবওয়েল ব্যবহার করে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য নগরীতে এর হার ৬৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পরিবার কমিউনিটি টিউবওয়েল ব্যবহার করে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ পরিবার। জানা যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এমডিজি (সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করেছে। ২০৩০ সালে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করার পথে। এ লক্ষ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করার উদোগ নেয়া হয়েছে। এডিবির অর্থায়নে একটা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্যানিটেশনের আওতা দেশব্যাপী বিস্তৃত হবে।
×