ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া মেডিক্যালে স্ক্যানো ইউনিট চালুর সুফল

আধুনিক চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর হার কমেছে

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৯ জানুয়ারি ২০২২

আধুনিক চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর হার কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নবজাতক শিশুদের অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। এতে জটিলতা নিয়ে জন্ম নেয়া নবজাতকদের আর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ বগুড়ার বাইরে নিতে হচ্ছে না। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের জটিল অসুস্থতা নিয়ে দরিদ্র বাবা-মা’র দুশ্চিন্তা অনেকটাই দূর হয়েছে। এখন জটিল অবস্থা নিয়ে ভূমিষ্ঠ নবজাতকদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নাগালের মধ্যে। জটিলতা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের বিশেষ সুবিধা সংবলিত চিকিৎসা দেয়ার জন্য বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছে স্ক্যানো (সিভিয়ার চাইল্ড এ্যাডমিটেড ইউনিট) নামে নিওনেটাল ওয়ার্ডের বিশেষ ইউনিট। এটি স্পেশাল কেয়ার নিউবোর্ন ইউনিট নামেও পরিচিত। নবজাতকের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ইক্যুইপমেন্ট এখানে রয়েছে। এই স্ক্যানো ইউনিট চালুর পর থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির সমস্যায় শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে বলে চিকৎসকরা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিএইচ’র আওতায় ইউনিসেফের সহযোগিতায় এই স্ক্যানো ইউনিট চালু করা হয়েছে। নবজাতকদের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি উত্তরের অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে থাকলেও বগুড়ার ইউনিটটি অত্যাধিুনিক ও বড় পরিসরে করা হয়েছে। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ক্যানো ইউনিটে নবজাতকদের শয্যা রয়েছে ৮৫টি। একারণে নিরবচ্ছিন্ন কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা, রেডিয়েন্ট বেবি ওয়ার্মার, ইনকিউবেটর, ফটোথেরাপি, ইনফিউশন পাম্প মনিটর, গ্লুকোমিটারসহ বিশেষ বেড এবং অন্যান্য মেডিক্যাল যন্ত্রপাতির সুবিধা রয়েছে। এসব ব্যবস্থা স্কানো ইউনিটকে অনেকটা নিবেউবোর্ন ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে পরিণত করেছে। বগুড়া ছাড়াও পাশর্^বর্তী গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলা থেকে নবজাতকদের আধুনিক চিকিৎসার জন্য আনা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সময়ের আগে জন্ম নেয়া নবজাতক, ওজন কম থাকা, শুরুতেই শ^াসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে ভূমিষ্ঠ শূন্য থেকে দুই মাস বয়সী শিশুদের এখানে চিকিংসা দেয়া হচ্ছে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা আন্তর্র্জাতিক মানে উন্নয়নের চেষ্টা রয়েছে। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ গোলাম মোস্তাফা জানান, এটি চালুর পর এখানে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়ন হলেও এই ইউনিটটিকে আরও উন্নত করতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য লোকবলের অভাব রয়েছে। এছাড়া মায়েদের ওয়েটিং রুম থাকা প্রয়োজন। যেটি এখনও করা যায়নি। তবে পেডিয়াট্রিক বিভাগের বর্তমান লোকবল নিয়ে তারা এই বিশেষ ইউনিটটি চালাচ্ছেন। এখানে ভাল চিকিৎসাসেবার জন্য পাশের জেলা এমনকি যেসব হাসপাতালে স্ক্যানো ইউনিট রয়েছে, সেসব জেলা থেকেও বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিভাবকরা তাদের নবজাতককে চিকিৎসার জন্য আনছেন। এ জন্য দ্রুত আরও লোকবল প্রয়োজন বলে শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জানান। সূত্র জানায়, সারাদেশে এরকম স্ক্যানো ইউনিট ৪৬টি থাকলেও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের ইউনিটটিই সবশেষে চালু হয়েছে। এটি এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শয্যার। হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে জানান হয়েছে, বগুড়ার স্ক্যানো ইউনিটে প্রতিদিন প্রায় ৫৫/৬০টি নবজাতক থাকছে। অনেক সময় এর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গত বছরের অক্টোবর থেকে এই বিশেষায়িত ইউনিটটি পুরোদমে চালু হয়েছে। এর ফলে নবজাতকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে সীমিত জনবল থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে জানান, প্রয়োজনীয় জনবল পাওয়া গেলে এটির সেবার মান আরও ভাল হবে এবং এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবেন।
×