ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ, পরে হাইকোর্টে

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৯ জানুয়ারি ২০২২

শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ, পরে হাইকোর্টে

বিকাশ দত্ত ॥ চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আজ-কালের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। উচ্চ আদালতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত মামলা জট নিরসন, আপীল বিভাগে চাঞ্চল্যকর ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি ও বিচারপতি সঙ্কট দূর করতেই এই নিয়োগ হচ্ছে বলে জানা গেছে। আপীল বিভাগে তিন থেকে চারজন বিচারপতি নিয়োগ হতে পারে। কৌশলগত কারণে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, প্রাজ্ঞতা, বয়োজ্যেষ্ঠতা, বিচারিক-প্রশাসনিক দক্ষতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী তাকেই এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আইন মন্ত্রনালয় ও সুপ্রীমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আপীল বিভাগে নিয়োগের পর হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ হবে। বর্তমান আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মোট ৯৫ বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে হাইকোর্টে ৯১ জন এবং আপীল বিভাগে ৪ জন। এর মধ্যে আপীল বিভাগের এক বিচারপতি ছুটিতে রয়েছেন। এর আগে আপীল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে কয়েকজন বিচারপতি অবসরে গেছেন। চলতি বছরসহ আগামী বছরে আরও কয়েকজন বিচারপতি অবসরে যাবেন। বর্তমানে আপীল বিভাগে চারজন বিচারপতি থাকলেও প্রধান বিচারপতিসহ তিন বিচারপতি বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দিন থেকে বিচারপতি ইমান আলী দীর্ঘদিন ছুটিতে রয়েছেন। এদিকে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০২৬ সালের ১০ জানুয়ারি অবসরে যাবেন। এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখেই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এর আগে জনকণ্ঠকে বলেছিলেন আপীল বিভাগে বিচারপতি দরকার। শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। হাইকোর্টে এখন নয়। বিচারপতি নিয়োগটি চলমান প্রক্রিয়া। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ প্রয়োজন। আশা করছি অতি শীঘ্রই উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ করা হবে। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ৭টি পর্যবেক্ষণ ও আইন কমিশন ছয়টি সুপারিশ দিয়েছিল সরকারের নিকট। এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন যারা নিয়োগ দেবেন তারা সব কিছু যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেবেন। এতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সংবিধান অনুযায়ী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের মধ্যে থেকে আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’ বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ এবং নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি (যিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রীমকোর্ট গঠিত হইবে। সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।’ এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জনকণ্ঠকে বলেছেন, আপীল বিভাগ শীঘ্রই বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। আপীল বিভাগের প্রধান বিচারপতিসহ চারজন বিচারপতি থাকার কারণে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আপীল বিভাগের মাত্র একটি বেঞ্চ রয়েছে। সেখানে প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি কাজ করছেন। শীঘ্রই আপীল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ করা হবে, তখন এ বেঞ্চ বাড়াবে এবং মামলার শুনানি হবে। তবে আমি আশা করি শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। সুপ্রীমকোর্টের একাধিক সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন, মামলা অনুপাতে বিচারপতি না থাকায় মামলা জটের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মামলা দায়েরের সংখ্যাও। এজন্য বিচারপতি ও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে মেধা, দক্ষতা, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে।
×