ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিবুল হাসান

আশার আলো সৌরবিদ্যুত

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৯ জানুয়ারি ২০২২

আশার আলো সৌরবিদ্যুত

পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস হলো সূর্য। সূর্যের আলো একদিন না পেলে গোটা পৃথিবী অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে। সমগ্র জীবকুল সরাসরি সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। যুগের পরিবর্তনে, প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ সূর্যের আলো প্রয়োজনানুসারে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোলার প্যানেল বা সৌরবিদ্যুত। সৌরবিদ্যুতের প্রায়োগিক ব্যবহার শুরু হয় ১৯৫৮ সালে মহাকাশ কার্যক্রমে। এর উদ্দেশ্য ছিল রকেটের জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে এর ওজন হ্রাস করা। আসমান থেকে জমিনে এর ব্যবহার শুরু হয় ’৭০-এর দশকে। বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০২ সালের দিকে। বাংলাদেশের মতো স্বল্প আয়তনের ঘনবসতিপূর্ণ দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জ্বালানির অভাব। দেশে উত্তোলিত কয়লার প্রায় পুরোটাই নিম্নমানের। কারণ এতে কার্বনের পরিমাণ খুবই কম। গন্ধক ও ছাইয়ের পরিমাণ বেশি। দেশে খনিজসম্পদ থাকার মধ্যে আছে শুধু প্রাকৃতিক গ্যাস। তাও দেশের বিভিন্ন উৎপাদন কাজে এবং জনগণের বাসাবাড়িতে সরাসরি গ্যাসের চাহিদার তুলনায় কম। তাছাড়া এই গ্যাস যানবাহনের জ্বালানি, শিল্প-কারখানায় ইঞ্জিন চালনা, সার উৎপাদন ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দেশে বিদ্যমান গ্যাসের মজুদ ক্রমশ শেষ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি সৌরশক্তি। বিজ্ঞানীদের মতানুসারে প্রতি বর্গমিটারে সূর্য প্রায় ১ হাজার ওয়াট শক্তি বর্ষণ করে। সূর্যের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে মানুষ বহুকাল ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে সূর্যের আলোকশক্তিকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ক্যালকুলেটর, বৈদ্যুতিক বাতি, পাখা ঘোরানো, সেচ পদ্ধতি এবং কৃত্রিম উপগ্রহের গায়ে সোলার সিস্টেমে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। সৌরবিদ্যুতকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে আমরা জ্বালানি সমস্যা দূর করে একটি সাফল্যম-িত অর্থনীতির দ্বার উন্মোচন করতে পারি। এর সবচেয়ে ভাল দিক হলো এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশে বিগত দুই দশক ধরে সোলার প্যানেলের ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। দেশে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ লক্ষাধিক বাড়ি, দোকানপাটে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে দুই কোটিরও বেশি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন কলকারখানা ও যানবাহনে সরাসরি প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে অসাবধানতাবশত তা বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনা এখন রোজকার ঘটনা। এতে করে বহু লোক আগুনে দগ্ধ ও মৃত্যুবরণ করছে। গ্যাসের সরাসরি ব্যবহার কমিয়ে এক্ষেত্রে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বৈদ্যুতিকভাবে যানবাহন ও কারখানার ইঞ্জিনে ব্যবহার হলে ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো যেগুলোতে এখনও খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি সেসব অঞ্চলে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করে অনায়াসেই বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। এখন বিভিন্ন মহাসড়কে রোড লাইটের খুঁটির মাথায় সোলার প্যানেল লাগানো হয়েছে, যা সারাদিন চার্জ হয় এবং সূর্য ডুবলেই প্যানেলে থাকা সেন্সরের মাধ্যমে লাইট নিজে থেকে জ্বলে ওঠে। এভাবে সারারাত নিরবচ্ছিন্নভাবে আলো দেয়? ফলে একদিকে ঘাটতি পূরণ হয়, অন্যদিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর চাপ কম হয়? আমাদের দেশে শহরের তুলনায় গ্রামে বিদ্যুরে ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয়। এক্ষেত্রে গ্রামে সৌরবিদ্যুতের অধিক প্রসারের বিকল্প নেই। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তাগুলোতে। এতে করে গ্রামের চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন সাধনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে সরকারীভাবে ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গ্রামের রাস্তাগুলোতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেকটাই অপ্রতুল। এ বিষয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর প্রসার বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি এটি যেন বাসাবাড়িতে কিনে লাগানো যায় সেজন্য এর যন্ত্রাংশগুলোর অপ্রতুলতা দূর করে দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। এর ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলো দেশে তৈরির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুত ব্যবস্থায় প্রচুর দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। উদ্যোক্তাদের এক তথ্যে বলা হয়েছে, গ্রামাঞ্চলভিত্তিক যে সৌরবিদ্যুত কার্যক্রম চলছে তাতে বছরে বিনিয়োগ হচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সমগ্র দেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসার ঘটাতে পারলে বিদ্যুত ঘাটতি হয়ত চিরতরে দূর করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের ফলে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। আমাদের এখন সম্মিলিতভাবে সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী বরেন্দ্র কলেজ, রাজশাহী
×