সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী ॥ সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে দশ কিলোমিটার বৃত্তাকার নদীটি সোজাকরণে হাজার-হাজার একর জমিসহ রক্ষা পেল উভয় তীরবর্তী মানুষজন। ভাঙ্গনরোধে নতুন নদী খননে এখন আনন্দের বন্যা বইছে ওই এলাকায়।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নীলফামারী ও কিশোরীগঞ্জ এলাকার মুশরত পানিয়াল পুকুর এবং নিতাই মৌজা দিয়ে প্রবাহিত চাড়ালকাটা নদী। নদীটি ওই এলাকায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার বৃত্তাকারে মাত্র সাড়ে ৭শ’ মিটার দূরত্বে প্রবাহিত হয়। এতে নদীর তীরবর্তী বৃত্তাকার এলাকাটি প্রতিবছর প্লাবিত হয়। হাজার-হাজার একর জমির চাষাবাদ নষ্ট হয়। বিলীন হয় শত বাড়িঘর, রাস্তা, গাছপালাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গনরোধে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেও কাজে আসছিল না। অবশেষে নদীর বৃত্তাকার এলাকা বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদীতে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণে ৮টি প্রকল্পে ২০২১ সালের ২৯ নবেম্বর এ খনন কাজ শুরু করা হয়, যা সমাপ্ত হবে আগামী ২০২৩ সালে ৩০ জুন। এরই ধারাবাহিকতায় ৭শ’ ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৪০ মিটার চওড়া ও ৪ মিটার গভীর লুপ কাটিং, প্রতিরক্ষায় ব্লক স্থাপন, ৮৪ মিটারের একটি সেতু, ড্রোপ স্ট্রাকচার নির্মাণ, ১টি ক্লোজা, উজানে, বামে, ডানে এবং উভয় ধারে ব্লক স্থাপন মিলে ৮টি প্রকল্প প্যাকেজাকারে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান স্কেভেটরসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহারে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে। নতুন নদী এলাকার লুপ কাটিং, ড্রোপ স্ট্রাকচার, সেতু নির্মাণ ও ধার প্রতিরক্ষায় ব্লক তৈরিতে মহাব্যস্ততা চলছে নদীর বক্ষে। আর এই কর্মযজ্ঞ শতভাগ বাস্তবায়নে নিয়মিত নিবিড় পরিদর্শন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, নদীটি প্রতিবছর বন্যায় স্রোতের তোড়ে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা বিধ্বস্ত হয়ে যায়। নদীর এলাকা সামান্য হলেও আবাদি জমি নদীতে মিশে বালি জমে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ ছাড়া সংলগ্ন এলাকায় ইরি-বোরো ছাড়া অন্য কোন ফসল উৎপাদন হয় না। চাষাবাদে লাভ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে কৃষকরা ভিন্ন পেশা অবলম্বন করে। তবে এবার নদী সোজাকরণ এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের কারণে কৃষকরা তীর এলাকার জমিগুলো তিন ফসলি হতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন তারা।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ মোঃ মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, নদীটি সোজাকরণ নিয়ে ৮টি প্রকল্পে কাজ চলছে। নিয়মিত তদারকিসহ কাজ শেষে টাস্কফোর্সের তদন্ত সাপেক্ষে বুঝে নেয়া হবে। তবে এক সময়ের করালগ্রাসী এ নদী স্থানীয়দের জন্য আর্শীবাদে পরিণত হবে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কষ্ণ কমল সরকার বলেন, বন্যায় নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষকসহ সকল পেশাজীবীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এটা দীর্ঘদিন অব্যাহত ছিল। অবশেষে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ ও ক্ষতির কথা ভেবে সরকার নতুন এ নদীটি খনন কাজের উদ্যোগ নেয়। এতে ভাঙ্গনরোধসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে সুবিধার্থে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী দিয়ে ভাটিতে পানি প্রবাহিত না হলেও জলাধার হিসেবে সমন্বিত মৎস্য চাষ, বসার স্থানসহ সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করা হবে। আর স্থানীয়রাসহ দর্শনার্থীরা এর সুবিধা উপভোগ করার পরিকল্পনায় কাজ চলছে। এটি স্থানীয়দের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: