ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভাতের অভাবে খেঁজুর রসের ব্যবসা

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৭ জানুয়ারি ২০২২

ভাতের অভাবে খেঁজুর রসের ব্যবসা

ইবি সংবাদদাতা ॥ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ত্রীবেণী এলাকায় বাড়ি আকবার আলীর। ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ ৭৫ বছর ধরে খেঁজুরের রস বিক্রি করেন। বৃদ্ধ বয়সেও গাছে উঠে রস সংগ্রহ করেন অনায়াসেই। দশ বছর বয়স থেকেই তিনি ভোরের আলো ফোটার আগেই ছুটে যান খেজুরগাছে ঝুলে থাকা হাঁড়ি তুলতে। ভাতের অভাবের কারণে ছোটবেলা থেকেই আকবরের ছেলে হোসেন আলীও (৫৩) একই ব্যবসা ধরেছেন। বর্তমানে নিজের কোনো খেঁজুরগাছ নেই তাদের। অন্যের গাছ থেকে সংগ্রহ করে রস বিক্রি করেন বছরে ছয় মাসের মত। এতে করে গাছের মালিককেও দুই দিন অন্তর একদিন রস দিতে হয়। সাথে রস দিয়ে তৈরি করে বিক্রি করের গুড়ও। ভোর থেকে শুরু হয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ১২ ভাড় রস বিক্রি হয় তাদের। রস বিক্রির পর সংগ্রহ করা অবশিষ্ট রস দিয়ে নিজস্ব ফর্মুলায় তৈরি করেন গুড়। সেই গুড় বাড়িতে ও বাজারে বিক্রি করেন। বিক্রিলব্ধ অর্থ থেকে পরিবার নিয়ে খেয়ে পরে বছর শেষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত অবশিষ্ট থাকে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের আলো ফোটার আগেই খেঁজুরের রসের খোঁজে ছুটে যান ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শীত এলে খেঁজুরের রস খাওয়ার ধুম পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। ভ্যানে চেপে বা পায়ে হেটে ভীড় জমায় আকবর গাছির বাড়িতে। হাড়ি এনেই ছেঁকে তুলে দেয় শিক্ষার্থীদের হাতে। সেসব আনন্দঘন মূহুর্ত ক্যামেরাবন্দী হয় ক্লিকে ক্লিকে। রসের অমীয় সুধা পান করে শিক্ষার্থীরা যেমন উচ্ছ্বসিত তেমনি গাছিও শিক্ষার্থীদের রস খাওয়াতে পেরে আনন্দিত। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আরোশি আঁখি বলেন, শীতের সকালে সবচেয়ে সুন্দর মূহুর্ত হলো রস খেতে আসা। শীতকালে ক্যাম্পাসে শীত উপলক্ষে তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় না। ঘুম থেকে উঠে কনকনে ঠান্ডায় যখন এই জায়গাটায় আসি তখন প্রাকৃতিক নান্দনিক সৌন্দর্যের সাথে মনের একটা আনন্দ মিশ্রন হয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। গাছি আকবর আলী বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকেই খেঁজুরের রসের ব্যবসা করছি। শীতকালে ভোর বেলা শিক্ষার্থীরা রস খেতে আসে এতে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। বাড়িতে একরকম উৎসবের সৃষ্টি হয়। বছরে ছয়মাস রস ও গুড় বিক্রি করি। খেয়েপরে বছরে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত থাকে।
×