ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ৯ জানুয়ারি

ক্রাইস্টচার্চে আরও বড় পরীক্ষা মুমিনুলদের

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৭ জানুয়ারি ২০২২

ক্রাইস্টচার্চে আরও বড় পরীক্ষা মুমিনুলদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ৭৫৫ ফুট উচ্চতার মাউন্ট মঙ্গানুই পর্বত জয় করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বাগতিক ও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে এ যেন পৃথিবীর বুকে সর্বোচ্চ শৃৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয়। ২ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর এখন চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে গেছে মুমিনুল হকদের। কারণ এমন একটি অবিস্মরণীয় অর্জনের পর পরবর্তী পরীক্ষায় শুধু পাস মার্ক পেলেই চলবে না, লড়তে হবে সমানে-সমান। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দল ফিরেছে ক্রাইস্টচার্চে। এখানেই হ্যাগলি ওভাল মাঠে কিউইদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট রবিবার ভোরে। সেই ম্যাচে শুধু ড্র করতে পারলেও আরেকটি ইতিহাস রচিত হবে। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়াই থাকবে। তাছাড়া হ্যাগলি ওভালে নিজেদের এবং কোন এশিয়ান দলের ভাল কিছু করার ইতিহাস নেই। এখানে মাঠে গড়ানো ৮ টেস্টের মধ্যে সফরকারী একমাত্র দল হিসেবে ২০১৬ সালে জিততে পেরেছে শুধু কিউইদের প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ২ বার করে, বাংলাদেশ ও ভারত ১ বার করে হেরেছে এই ভেন্যুতে। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে আনন্দের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া বাংলাদেশ দলের আগে ৫ বার নিউজিল্যান্ড সফরে সবচেয়ে ভাল সময় কেটেছে ২০১৭ সালে। সেবার ওয়েলিংটনে হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানের বিশাল ইনিংস গড়েও শেষদিন হেরে যায়। সিরিজের প্রথম টেস্টে এমন পারফর্মেন্স দেখানো দলটিই পরের টেস্ট ক্রাইস্টচার্চে খেলতে নেমে ৯ উইকেটে পরাস্ত হয় ম্যাচের একদিন বাকি থাকতে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বরাবরই এশিয়ার দলগুলো দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। হ্যাগলি ওভালে গড়ানো আগের ৮ টেস্টে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে শুধু ২০১৬ সালে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড করে ড্র। বাকি ৬ টেস্ট খেলে এশিয়ার ৪ দল শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ হেরেছে। ২০১৯ সালেও এই ভেন্যুতে বাংলাদেশের ম্যাচ ছিল, কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনায় ম্যাচটি আর হয়নি। তাই ৫ বছর আগে এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতাই পুঁজি বাংলাদেশের। তবে অনুপ্রেরণা অবশ্যই এবার মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের জয়টা। কারণ ২০১৭ সালে খেলা ম্যাচটায় এখানে প্রথম ইনিংসে ২৮৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। হারতে হয় ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অথচ আগের টেস্টেই ওয়েলিংটনে কিউইদের ওপর ৪ দিন পর্যন্ত দাপট দেখানো বাংলাদেশ পঞ্চম দিন শেষ বিকেলে পরাজয় বরণ করে। এবার অতীতের চেয়ে ভাল কিছু করার প্রত্যয় জানানো মুমিনুলরা সেটা বাস্তব করেছেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। কিন্তু এতেই চ্যালেঞ্জটা বেড়েছে, প্রত্যাশাও বেড়েছে মুমিনুলদের ওপর। ক্রাইস্টচার্চে টাইগারদের জন্য এসিড টেস্ট সিরিজ হার ঠেকানোর। এশিয়ার কোন দল হিসেবে এখানে সর্বোচ্চ ৪০৭ রান করেছে শ্রীলঙ্কা ২০১৪ সালে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাকিস্তানের ২৯৭ গত বছর জানুয়ারিতে। এরপরই বাংলাদেশের ২৮৯! ভারতের মতো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী টেস্ট দল এখানে ২০২০ সালের শুরুতে দুই ইনিংসে করেছে ২৪২ ও ১২৪ রান। তাই প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দে ভাসতে থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন হ্যাগলি ওভালে বড় পরীক্ষা। তাছাড়া প্রথম টেস্ট জিতে পরের ম্যাচেই খারাপভাবে হেরে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। ঘরের মাটিতে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দুর্দান্তভাবে জিতে যাওয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টে বাজে হারের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এবার একই পরীক্ষা টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা আরেকটি দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংলিশ-অসিদের বিপক্ষেনিজেদের মাঠেই পারেনি বাংলাদেশ। এবার প্রতিপক্ষের মাঠে সেই কাজটা কি করতে পারবেন মুমিনুলরা? দেশের মাটিতে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর প্রথম পরাজয়ের তেঁতো স্বাদ পেয়েছে কিউইরা। এখন দেশের মাটিতে টানা ৮ সিরিজ জেতা কিউই জয়যাত্রায় ইতি টানারও মোক্ষম সুযোগ বাংলাদেশের। এবার নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ক্রাইস্টচার্চে ১১ দিন কোয়ারেন্টাইন ও পরে ৩ দিন অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। সেখানেই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে বৃহস্পতিবার ফিরে এসেছেন মুমিনুলরা। সফরের শুরুতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে কঠিন কোয়ারেন্টাইনে থাকায় ক্রিকেটারদের মানসিক দিক নিয়ে কাজ করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এবার দ্বিতীয় টেস্টে চ্যালেঞ্জ শারীরিক দিক ঠিক রাখা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দলের স্ট্রেংন্থ এ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ (ট্রেনার) নিকোলাস ট্রেভর লি বলেন, ‘আগামী ২ দিন পরের টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলবে। আজ সকালে বিমানে ওঠার আগে ফাস্ট বোলাররা জিম করেছে। আগামীকাল দেখব স্কোয়াডের বাকি সদস্যদের কীভাবে পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করা যায়। ম্যাচে সবার ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা থাকে, ভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল লোড নিতে হয়। টেস্টে ওদের বেশি পরিশ্রম করতে হবে, আগামীকাল হয়তো সেটা কাভার করবে। পরের দিনটা থাকবে ওদের শরীরকে টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করতে।’
×