ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

স্নিগ্ধতার প্রতিচ্ছবিময় ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৭ জানুয়ারি ২০২২

স্নিগ্ধতার প্রতিচ্ছবিময় ছায়ানটের শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের বিকেল থেকে শুরু হয় সেই সুরেলা সফর। সুর-তাল আর লয়ের সম্মিলনে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতঅবধি এগিয়ে চলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতাসরটি। ছয় ঘণ্টার পরিবেশনায় ভেসে বেড়িয়েছে বিচিত্র রাগ-রাগিনীর সুর। উচ্চাঙ্গের কণ্ঠসঙ্গীতের সমান্তরালে বেজেছে তানপুরার সুর আর তবলার বাদন। তন্ময় হয়ে শ্রোতারা উপভোগ করেছেন হৃদয়ে স্নিগ্ধতা ছড়ানো সে সব পরিবেশনা। এভাবেই স্নিগ্ধতার ছবি এঁকে শুরু হলো ছায়ানট আয়োজিত শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব। নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতে সজ্জিত তিনটি অধিবেশনে সজ্জিত এই সঙ্গীতায়োজনের সূচনা হয় বৃহস্পহিতবার। দুই দিনব্যাপী এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে ছায়ানটের শিক্ষাগুরু মদন গোপাল দাস ও শিক্ষক সতীন্দ্রনাথ হালদারকে। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার। এদিন সকাল নয়টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় অধিবেশন। বিকেল চারটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলবে তৃতীয় অধিবেশন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সঙ্গীতের সুরে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর উৎসব উদ্বোধন করেন ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের সূচনালগ্ন থেকেই সম্পৃক্ত হয়েছিলেন মদন গোপাল দাস। শুরুতে তবলার সহযোগী শিক্ষক ছিলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ণ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ৫০টি বছর ছায়ানটে শিক্ষকতা করেছেন। তৈরি করেছেন অসংখ্য ছাত্র। একইভাবে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে সতীন্দ্রনাথ হালদার ২৫ বছর সম্পৃক্ত ছিলেন ছায়ানটের সঙ্গে। তারা উভয়েই শিক্ষক হিসেবে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। প্রথম দিনের উৎসব শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। ভূপালী রাগের আশ্রয়ে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। বৃন্দ পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন ছায়ানটের শিক্ষার্থী শিল্পীরা। খেয়াল পরিবেশনার পর শ্রী রাগে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী অভিজিৎ কুণ্ডু। এর পরে রাগ ইমনে ভর কতরে খেয়াল পরিবেশন করেন স্বয়ম সৌকর্য। শুদ্ধ কল্যাণ রাগের আশ্রয়ে খেয়ালের পরিবেশনায় শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়েছেন খায়রুল আনাম শাকিল। রাগ কৌশিক ধ্বনিতে খেয়াল পরিবেশন করেন দীপ্র নিশান্ত। শেখর ম-ল পরিবেশন করেন রাগ রাগেশ্রী। অনিন্দিতা সাহা শোনান রাগ বাগেশ্রী। দেবাশীষ শর্মা মালকোষ রাগে খেয়াল পরিবেশন করেন। খেয়ালের পরিবেশনায় প্রথম দিনের উৎসবের সমাপনী টানেন রেজায়ান আলী। আজ শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের উৎসবে দ্বিতীয় অধিবেশনে বেহালায় সুর ছড়াবেন আলাউদ্দিন মিয়া। বাঁশিতে সুর ছড়াবেন মৃত্যুঞ্জয় কুমার দাস। কণ্ঠসঙ্গীত পরিবেশন করবেন আফরোজা রূপা ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। এছাড়াও থাকবে ছায়ানট শিক্ষার্থীদের কণ্ঠসঙ্গীতের বৃন্দ পরিবেশনা। বিকেলে তৃতীয় অধিবেশনে কণ্ঠসঙ্গীত এবং সেতার ও তবলায় সাজানো যন্ত্রসঙ্গীতের পরিবেশনাসমূহ উপস্থাপন করবেন অসিত দে, এবাদুল হক সৈকত, সাইফুল ইসলাম, শ্রাবন্তী ধর, টিংকু শীল, বিটু কুমার শীল, অর্পিতা চক্রবর্তী, অনন্যা আচার্য, অনন্য রোজারিও, মিনহাজুল হাসান ইমন ও মোহিসইউ জৌভিয়াল জিসাস ভুবন। বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষপূর্তির দুই আয়োজন ॥ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে মাত্র বাইশ বছর বয়সে বিদ্রোহী নামের কালোত্তীর্ণ কবিতাটি লিখেছিলেন দ্রোহ, প্রেম ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কবিতাটি লিখেছিলেন জাতীয় কবি। সেই সুবাদে গত ডিসেম্বরে শতবর্ষ পার করেছে কবিতাটি। আর এই কবিতার শতবশর্ষ উদ্্যাপনে বৃহস্পতিবার দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন থেকে নজরুল একাডেমির আয়োজনে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অন্যদিকে আরেক আয়োজনে একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন মিলন কান্তি দে। বিকেলে নজরুল একাডেমির আয়োজনে মগবাজারের নজরুল ভবনে বেলালাবাদ, আলোচনা, সম্মাননা প্রদান এবং আবৃত্তি ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও নজরুল একাডেমির জীবন সদস্য মসয়ূদ মান্নান। স্বাগত ভাষণ দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান। অনুষ্ঠানে নজরুল গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শফি চাকলাদারকে ‘নজরুল একাডেমি পদক ২০২২’ প্রদান করা হয়। একই দিন বিকেলে বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ উদ্যাপনে আবৃত্তি অনুষ্ঠানে আয়োজন করে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা জ্যোতিপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সংলগ্ন কবির সমাধি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এই আবৃত্তির আসর। অনুষ্ঠানে বিদ্রোহী কবিতাটি আবৃত্তি করেন যাত্রাব্যক্তিত্ব ও মিলন কান্তি দে। এরপর কবিতাপ্রেমীদের অনুরোধে মিলন কান্তি দে আরও চারটি কবিতা আবৃত্তি করেন। এর আগে দুটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহীনা পারভীন। কবি মহসীন হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এস বি বিপ্লব, যাত্রাশিল্পী এম. আলীম, আলীনুর, জ্যোতিপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম।
×