ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে শুরু পঞ্চদশ পিঠা উৎসব

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৬ জানুয়ারি ২০২২

ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে শুরু পঞ্চদশ পিঠা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে চলছে এখন শীতকাল। আর এই শীতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গ্রাম বাংলার নানা আচার-অনুষ্ঠান। শেকড়ের কথা বলা সেই ঐতিহ্যের দেখা মিললো যান্ত্রিক নগরী ঢাকায়। স্টলে দৃশ্যমান হলো রকমারি পিঠা-পুলি। ভাপা চিতই, মালপোয়াসহ বাহারি সেসব পিঠার স্বাদ নিতে অনেকেই এসেছিলেন শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তরে। খুঁজে ফিরেছেন ফেলে আসা সেই গ্রামীণ জীবনকে। এমন সুন্দরতম দৃশ্যের উল্টোপিঠে মঞ্চে থেকে ভেসে আসে বাউল গানের সুর। বেজে ওঠে একতারা। ঢোলের বাদনে উতলা হয় দর্শনার্থীদের হৃদয়ের বন্দর। হৃদয় রাঙায় নৃত্যের নান্দনিকতা। এভাবেই রঙিন রূপে ধরা পৌষের সন্ধ্যাটি। ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে শুরু হয় পঞ্চদশ জাতীয় পিঠা উৎসব। বৃহস্পতিবার থেকে সূচনা হওয়া দশ দিনের এ আয়োজন চলবে আগামী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিনের বৈকালিক উৎসবে থাকবে নাচ-গান কবিতাসহ বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের সন্ধান মেলে ধরেছে এই উৎসব। স্টলে স্টলে পিঠার পসরা সাজিয়ে চলছে বিকিকিনি। সরগরম উৎসব আঙ্গিনায় পিঠা কেনা ও খাওয়ার দৃশ্যকে স্মৃতিময় করে রাখতে অনেকেই তুলেছেন সেলফি। একাডেমির কফি হাউসের মুক্ত মঞ্চ থেকে বর্ণিল বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে জাতীয় পিঠা উৎসব উদ্যাপন পরিষদ ও শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীতের সুরে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ, নৃত্যশিক্ষক আমানুল হক ও উৎসবের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম। শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন একাডেমির সচিব মোঃ আসাদুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, পিঠা বাঙালীর চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক। বাংলার গ্রামের মা, চাচি, খালা, বোন, ভাবিদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্য নগরজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। আবহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে পিঠা উৎসবকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। এর আগে আটটি বিভাগে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে ৬৪ জেলার এই উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সে উদ্যোগে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাঙালীর ১২ মাসে আছে ১৩ পার্বণ। সেই ¯্রােতধারায় রয়েছে এমন নানা উৎসব। নিজস্ব সংস্কৃতির সুন্দরতম প্রকাশ ঘটছে এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে। জীবনের উদযাপনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ধরা দিয়েছে এই উৎসব। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের সমবেত নৃত্যের আশ্রয়ে শুরু হয় এই পর্ব। তপন বাগচী রচিত ‘পৌষ পার্বণের ছড়া’ আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রেজিনা ওয়ালী লীনা। এছাড়াও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী মীর বরকত। একক কণ্ঠে গান শোনান বিউটি, আল আমিন, সনৎ বিশ্বাস, নূরিতা নুসরাৎ খন্দকার, আবু বকর সিদ্দিক, শিল্পী, আরিফ রহমান, বিপাশা পারভীন, আতাউর রহমান ও মনি ইসলাম। উৎসবে বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পিঠাশিল্পীদের সম্মিলন ঘটেছে। ৫০টি স্টলে সজ্জিত উৎসবে দেখা মিলছে নানা স্বাদ ও আকৃতির বাহারি পিঠা। লোভনীয় সেসব পিঠার মধ্যে রয়েছে জামাই পিঠা থেকে শুরু করে মালপোয়া, নকশি, চষি, রসভরি, নয়ন তারা কুলশি, খেজুর পিঠা, ফুলকলি, ক্ষীর কুলি, গোকুল, লবঙ্গ লতিফা, রসফুল, সুন্দরী পাকান, সর ভাজা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, দুধ চিতই, বিবিখানা, ভাপা, চিতই, ঝাল পিঠা, ঝিনুক পিঠা ইত্যাদি। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে উৎসব।
×