ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারীবান্ধব নগরী গড়ব ॥ আইভী মানুষ পরিবর্তন চায় ॥ তৈমুর

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৬ জানুয়ারি ২০২২

নারীবান্ধব নগরী গড়ব ॥ আইভী মানুষ পরিবর্তন চায় ॥ তৈমুর

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাত মেয়র ও ১৮২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীদের চলছে বিরামহীন প্রচারণা। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রচার-প্রচারণা। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের (হাতি) প্রচারণা চলছে বেশ জোরোশোরেই। থেমে নেই সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের ওয়ার্ডের প্রতিটি আনাচে-কানাচে গিয়ে বিরামহীনভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অনেক প্রার্থী একা প্রচারণা চালিয়ে শেষ করতে না পেরে তার পক্ষে তার সমর্থক ও আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ উৎসব মুখর হয়ে উঠছে। চলছে চায়ের দোকানে নির্বাচনী আড্ডা। বুধবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বন্দর এলাকার ২৬ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সময় মেয়র প্রার্থী ডাক্তার আইভী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কাজ করার জন্য প্রচুর টাকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো শিশুবান্ধব ও নারীবান্ধব নগরী গড়া। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বুধবার শহরের ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রচারণা চলছে। জনগণ বনাম নৌকা, জনগণ বনাম সরকার। ১৮ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বুধবার ২৬ ও ২৭নং ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালান। প্রচারণায় গেলে আইভীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় ডাক্তার আইভী বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণ আমাকে ভোট দিবে। আমার নৌকা প্রতীকে ভোট দিবে। আমি নির্বাচিত হবে ইনশাল্লাহ এবং আমার জনগণ আবারও আমাকে কাজ করার সুযোগ দেবে। আগামী ৫ বছরের জন্য খেদমত করার জন্য জনগণ আমাকেই সুযোগ দিবে। কারণ এ শহরে আমি প্রচুর কাজ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কাজ করার জন্য প্রচুর টাকা দিয়েছেন। নদীর পূর্বপাড়ে কদমরসুল এলাকায় রাস্তাঘাটের যে অবস্থা ছিল। কোন খেলার মাঠ ছিল না। এখানে বড় বড় প্রজেক্টের কাজ চলছে। মানুষ এগুলোর সুফল পাচ্ছে। আইভী বলেন, কাজগুলো অব্যাহত রাখতে জনগণ আমাকেই নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। তিনি বলেন, কদমরসুলে ১০-১২টি খাল আছে। আমরা ৩টি খালের কাজ শুরু করেছি। বাকি খালগুলোর কাজও করতে চাচ্ছি। মাঠ করতে চাচ্ছি। প্রচুর পরিমাণ পার্ক করতে চাচ্ছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হলো শিশুবান্ধব ও নারীবান্ধব নগরী গড়া। আমি সেই কাজগুলোই চলমান রাখব। অন্যান্য মেগা প্রজেক্টের কাজগুলো চলছে সেই কাজগুলো আমি অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, আমার মেনুফেস্টুতে এবার আছে- আমার কাজগুলো চলমান রাখা, সমাপ্ত কাজগুলো করা, নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা, ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করা, শহরের মাস্টার প্ল্যানগুলোর কাজ চলমান রাখা। সুতরাং আমরা যে ভাবে উন্নয়ন কাজ করেছি তা ভোটাররাই বলতে পারবেন। আমার মনে হয় না মেজর কোন কাজ বাকি নেই। তবুও প্রত্যেক এলাকার চাহিদা অনুযায়ী নতুন করে কাজগুলো করে দেব ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, বিগত তিনটি নির্বাচন করেছি। কখনই আমার লোকজন, আমার সমর্থক বা আমার কর্মীরা কোন কিছুতেই অতিরিক্ত (ওভার এক্সেস) করেনি। আমিও কোন দিন আইন ভঙ্গ করেনি। এদিকে, নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বুধবার শহরের ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সময় তিনি এ ওয়ার্ডের স্থানে প্রচারণা চালান। এ সময় তৈমুর আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রচারণা চলছে। জনগণ বনাম নৌকা, জনগণ বনাম সরকার। ইনশাল্লাহ আমি সর্বোদলীয় ভোট পাব। এ সুযোগ আমার দল (বিএনপি) করে দিয়েছে। আমি সেখানেই প্রচারণায় নেমেছি সেখানেই দলমত ও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলেই আমার মিছিলে যোগদান করছে। তিনি বলেন, ১৮ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটছে। জনগণ সিটি কর্পোরেশনে পরিবর্তন চায়। আল্লাহ আমাকে যদি নির্বাচিত করেন তবে আমি যানজট মুক্ত শহর গড়ে তুলব। যোগাযোগের নগরী গড়ে তুলব। উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ ও পশি^মবঙ্গের যোগাযোগের একটি কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করবে। নারায়ণগঞ্জ হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধিশীল একটি শহর। অতএব নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি আবার ফিরে আসবে। চায়ের দোকানে নির্বাচনী আড্ডা ॥ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৭টি ওয়ার্ডের চায়ের দোকানেও নির্বাচনী আড্ডা চলছে। শীতের মধ্যেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকানগুলো মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। পান-সিগারেটে দোকানগুলোতেও বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সকল বয়সীয় লোকজন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় আরও মাতিয়ে তুলেছে সিটির নির্বাচন। সবার দৃষ্টি এখন আগামী ১৬ জানুয়ারির দিকে। কে হবেন নগরপিতা? ডাক্তার আইভী না তৈুমর। এ নিয়ে চায়ের দোকানসহ সকল স্থানেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মেয়র পদে অন্য ৫ প্রার্থীর প্রচার ॥ নাসিক নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ছাড়াও মেয়র পদে আরও ৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন- খেলাফত মজলিশের এবিএম সিরাজুল ইসলাম মামুন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন মোঃ জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মোঃ রাশেদ ফেরদৌস ও আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল ইসলাম। এরাও মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। খেলাফত মজলিসের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এমবিএম সিরাজুল মামুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ১০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, নাসিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও সামগ্রিক কোনো উন্নয়ন হয়নি। গত ১৮ বছরে স্বল্পআয়ের, হতদরিদ্র, নিস্ব, মেহনতী ও বঞ্চিত মানুষদের জন্য কোন সুপরিকল্পনা দেখিনি। তিনি বলেন, ন্যায় ভিত্তিক ও জনকল্যাণ মূলক সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিবাচক স্বপ্নময় নারায়ণগঞ্জ গড়তে দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে আমরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরেও মাঠ পর্যায়ে অনেকেই কাজ করছেন। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি। নাসিক নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের ২৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠন ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী করতে মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের ২৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল হাই। এ কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন তিনি নিজেই এবং তার সঙ্গে সদস্য সচিব হিসেবে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল। এ বিষয়ে আব্দুল হাই বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করাই হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এবার তৈমুরকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি ॥ নাসিক নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে এবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে সংগঠনের দফতরের দায়িত্বে থাকা আবদুল্লাহ আল মাহবুব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। খবর বাংলা নিউজের। ওই চিঠির অনুলিপি বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ও তৈমুর আলম খন্দকারকে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তৈমুর আলম খন্দকারকে সংগঠনের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
×